সঞ্জিত ঘোষ, নদিয়া: পুজোর (Durga Puja 2024) বাকি আর কিছুদিন। প্রকৃতি সাজছে নিজের নিয়মে। প্রতিমা তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। কাঠামোর কাজ শেষ। মাটির প্রলেপও হয়ে এসেছে। তবে বাঁশ, বিচুলি, মাটি নয়, ফেলে দেওয়া কলম দিয়ে দুর্গামূর্তি তৈরি করে চমক নদিয়ার মাজদিয়ার পাপিয়া করের। প্রতিমা বিক্রির টাকা স্টেশন ও ফুটপাতবাসী শিশুদের পুজোয় নতুন জামা কেনার কাজে ব্যবহার করা হবে বলে জানিয়েছেন শিল্পী।
৭ ফুট লম্বা ও ৯ ফুট চওড়া দুর্গা প্রতিমার পুরোটায় তৈরি কলম দিয়ে। ব্যবহার করা হয়েছে কাগজ আর আঠা। সঙ্গে রং। দেবীর হাতের অস্ত্রগুলিও পেনেরই তৈরি। মায়ের রূপ দিতে লেগেছে ১৫ হাজার কলম। খরচ হয়েছে ১০ হাজার টাকা।
প্রায় ৯ মাস আগে প্রতিমা তৈরির কাজ শুরু করেন শিল্পী। কলমকেই কেন বেছে নিলেন তিনি? পাপিয়ার কথায়, ‘সমাজের শিক্ষিত অসুরের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। তাই তাঁর ভাবনায় এসেছে দেবী দুর্গা তাঁর শুভ শক্তির সাহায্যে কলম দিয়ে চারাপাশের অসুর বধ করবেন।
উল্লেখ্য, বছর খানেক আগে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে রহস্যমৃত্যু হয় নদিয়ার যুবকের। অভিযোগ ওঠে সিনিয়রদের র?্যাগিংয়ের শিকার সে। এরই মাঝে কলকাতার আর জি কর হাসপাতালে চিকিৎসক তরুণীকে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। এই প্রতিমা এই দুই কাণ্ডের প্রতিবাদ।
কিন্তু কীভাবে? পাপিয়া বলেন, “সমাজে শিক্ষিত অসুরের সংখ্যা বেড়ে গিয়েছে। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র মৃত্যু ও সম্প্রতি আর জি কর হাসপাতালে অভয়ার মৃত্যু বলুন সব ক্ষেত্রেই শিক্ষিতরাই জঘন্য কাজ করেছে। সেই দিক ভেবেই এই প্রতিমা।” দুই কাণ্ডেই দোষীদের শাস্তির দাবি করেছেন তিনি।
‘জীবে প্রেম করে যেই জন, সেই জন সেবিছে ঈশ্বর’- বিবেকানন্দের এই বাণীকেই জীবনের পাথেয় করে তুলেছেন পাপিয়া। সারা বছর দুস্থদের খাবার দেন তিনি। কিন্তু সেই খরচ অনেক। উপায় খুঁজতেই নিজের ভিতর লুকিয়ে থাকা শিল্পী সত্ত্বা খুঁজে পান তিনি। শুধু এই বছর নয় বিগত কয়েক বছর ধরে পাট, ফেলে দেওয়া ওষুধের খাপ থেকে দুর্গামূর্তি বানিয়ে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন তিনি। এবারের সংযোজন কলমের প্রতিমা।
এই প্রতিমা যাবে রানাঘাট পাইকপাড়া ব্রতী সংঘ ক্লাবের পুজোয়। দুর্গাপ্রতিমা বিক্রি করে যে অর্থ পাওয়া যাবে তা দিয়ে স্টেশন ও ফুটপাতবাসী শিশুদের পুজোয় নতুন জামা কিনে দেবেন পাপিয়া।