এই সময়: আরজি করের তরুণী চিকিৎসককে খুন এবং ধর্ষণের ঘটনার ৩৫ দিন পরে একসঙ্গে দু-দুজনকে গ্রেপ্তার করল সিবিআই। এদের মধ্যে একজন ওই হাসপাতালের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষ এবং দ্বিতীয়জন টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল। সন্দীপকে আগেই দুর্নীতির অভিযোগে সিবিআই গ্রেপ্তার করায় তিনি জেল হেফাজতে রয়েছেন। ফলে, শনিবার জেলবন্দি প্রাক্তন অধ্যক্ষকে ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় শ্যোন্ অ্যারেস্ট দেখানো হয়।অন্যদিকে, ওসিকে এদিনই সাত ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদের পরে গ্রেপ্তার করেন গোয়েন্দারা। ঘটনার পরের দিন ধর্ষণ এবং খুনের মামলায় অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করেছিল কলকাতা পুলিশ। পরে তাকে হেফাজতে নেয় সিবিআই।
কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানানো হয়েছে, টালা থানার ওসির বিরুদ্ধে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে ক্রাইম সিনে প্রমাণ লোপাটের চেষ্টা এবং দেরিতে এফআইআর দায়ের করার অভিযোগ আনা হয়েছে। একই অভিযোগে জড়িয়েছে সন্দীপের নামও।
গত ৯ অগস্ট আরজি কর হাসপাতালে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার চারদিন পরে কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্তের দায়িত্ব নেয়। তার আগেই কলকাতা পুলিশ মূল অভিযুক্ত সঞ্জয় রায়কে গ্রেপ্তার করেছিল। কিন্তু শুরু থেকেই কলকাতা পুলিশের তদন্ত প্রক্রিয়া বিতর্কের মুখে পড়ে।
সেমিনার রুমে একাধিক লোকের উপস্থিতি, তদন্তের এসওপি না মানা, ক্রাইম সিন বিকৃত করার চেষ্টার অভিযোগ পর পর সামনে আসতে শুরু করে। কলকাতা পুলিশ প্রতিটি বিষয়ে পাল্টা বক্তব্য পেশ করলেও ভাইরাল হওয়া সেমিনার রুমের বেশ কিছু ছবি অস্বস্তিতে ফেলে তাঁদের।
শনিবার এক সিবিআই কর্তা বলেন,‘ঘটনার খবর পেয়ে টালা থানার ওসি অভিজিৎ মণ্ডল অকুস্থলে গিয়েছিলেন। ভিতরে একাধিক লোককে ঢুকতে দেন তিনি। যার ফলে বহু তথ্যপ্রমাণ নষ্ট হয়ে যায়। এসব বিষয়ে তাঁর কাছ থেকে অনেক কিছু জানার ছিল আমাদের। কিন্তু প্রথম থেকেই তদন্তে অসহযোগিতা করছিলেন তিনি। অসুস্থতার কথা বলে জিজ্ঞাসাবাদও এড়িয়ে যাচ্ছিলেন।’
সূত্রের খবর, কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার তলব পেয়ে শনিবার বিকেল চারটে নাগাদ সল্টলেকের সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছন অভিজিৎ। সঙ্গে ছিলেন টালা থানার আরেক সাব ইনস্পেক্টর সুব্রত চট্টরাজ। ঘটনার পরে প্রথম যে অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা হয়েছিল, তিনি ছিলেন সেই মামলার আইও। এরপর টানা সাত ঘণ্টা ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয় ওসিকে।
ঘটনার কথা কার থেকে জেনেছিলেন, বিষয়টি জানার পরে কী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন, লালবাজারে কখন ঘটনার কথা জানানো হয়েছিল, সে সব বিষয়েই মূলত তাঁকে প্রশ্ন করা হয়। অধিকাংশ জবাবে অসঙ্গতি পাওয়া গিয়েছে বলে সিবিআইয়ের দাবি। এরপরই তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। অন্যদিকে, আরজি করের দুর্নীতি মামলায় কলকাতা হাইকোর্টের নির্দেশে সিবিআই তদন্ত শুরু করার পরে গ্রেপ্তার করে সন্দীপ ঘোষকে।
বর্তমানে তিনি প্রেসিডেন্সি সংশোধনাগারে বন্দি রয়েছেন। শনিবার বিকেল পাঁচটা নাগাদ শিয়ালদহ আদালতে সন্দীপ ঘোষকে গ্রেপ্তারের আবেদন জানানো হয়। তাঁকে শ্যোন অ্যারেস্ট করার আবেদন করে প্রোডাকশন ওয়ারেন্টও জমা দেওয়া হয়। আজ, রবিবার তাঁকে আদালতে হাজির করিয়ে নিজেদের হেফাজতে নিতে পারে সিবিআই।
কিন্তু সন্দীপকে গ্রেপ্তার করা হলো কেন?
সিবিআই সূত্রের খবর, অভিজিৎকে জিজ্ঞাসাবাদ করে ষড়যন্ত্রের যে সব তথ্য উঠে এসেছে, সন্দীপের বয়ান থেকে বেশ কিছু ক্ষেত্রে সেই অপরাধের সঙ্গে যোগ পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের দাবি, প্রাক্তন অধ্যক্ষকে গ্রেপ্তারের আগে ১৮ দিন ধরে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও বেশ কিছু বিষয়ে তিনি তদন্তকারীদের ‘মিসলিড’ করেছিলেন।
যা ওসিকে জেরা করার পরে সিবিআইয়ের কাছে স্পষ্ট হয়। অর্থাৎ প্রমাণ লোপাটের ষড়যন্ত্রে দুজনে একসঙ্গে যুক্ত ছিলেন বলে কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থার দাবি। রবিবার সন্দীপ এবং ওসি অভিজিৎ মণ্ডলকে নিজেদের হেফাজতে নিয়ে মুখোমুখি জেরা করতে চান তদন্তকারীরা।