‘তোমার কী হয়েছে মা?’ কাঁপা গলায় উত্তর এলো, ‘কাল রাত থেকে খুব পেটে ব্যথা। দেখে দেবে?’ হাতের নাড়ি ধরে সমস্যার কথা শুনতে থাকলেন ডাক্তারবাবু। প্রয়োজন মতো ওষুধও দিলেন। চেম্বারের ঠিকানা, সল্টলেকের ফুটপাত। ক্লিনিকের নাম ‘অভয়া’। ডাক্তার দেখানোর পরে বৃদ্ধা আমিনা বিবি বললেন, ‘যত্ন নিয়ে ওরা দেখল। আমার নাতনির বয়সি একজনকে যে ভাবে ধর্ষণ এবং খুন করা হয়েছে। তার প্রতিবাদ হওয়া দরকার। এই প্রেসক্রিপশন আমি আগলে রেখে দেব।’ওদের কেউ এসএসকেএমের মতো সুপার স্পেশালিটি হাসপাতালের। কেউ আবার মেডিক্যাল কলেজের। নিজের পেশায় প্রতিষ্ঠিত হলেও আরজি কর হাসপাতালের তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার প্রতিবাদে সকলে এক হয়েছেন। তাঁরা যেন অঙ্গীকার করেছেন, যতদিন না বিচার হচ্ছে, ততদিনই এ ভাবেই রোগী দেখবেন।
স্বাস্থ্য ভবনের কাছেই খোলা হয়েছে ‘অভয়া ক্লিনিক’। সেখানে একটি প্ল্যাকার্ড চোখে পড়ার মতো। তাতে লেখা ‘স্বাস্থ্য ভবন, সুস্থ হোন’।
অভয়া ক্লিনিকের জন্য একটি বিশেষ প্রেসক্রিপশন ছাপানো হয়েছে। ডাক্তার দেখানোর পরে ওই প্রেসক্রিপশনটি যত্ন করে নিয়ে যেতে দেখা গেল রোগীদের। অনেকে বলছেন, ‘এমন আন্দোলন আগে দেখিনি। সেই ডাক্তারদের হাত থেকে অভয়া প্রেসক্রিপশন নিচ্ছি। এটা সারা জীবন সংরক্ষণ করব।’
ওই প্রেসক্রিপশনে লেখা রয়েছে ওয়েস্ট বেঙ্গল জুনিয়র ডক্টরস ফ্রন্ট (ডব্লুবিজেডিএফ)। মাঝে ছাপার অক্ষরে লেখা ‘আরজি করের বিচার চাই, অপরাধের বিনাশ চাই’। গত ছ’দিন ধরে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে অবস্থান-বিক্ষোভ করছেন জুনিয়র ডাক্তাররা। সুপ্রিম কোর্টের শুনানিতে তাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠেছে, কাজে যোগ না দেওয়ার কারণে বহু রোগীর মৃত্যু হচ্ছে এ রাজ্যে।
যদিও যুক্তি দিয়ে তা খারিজ করে দিচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। ক্লিনিকে ইএনটি স্পেশালিস্ট থেকে শুরু করে ত্বক, হৃদরোগ বিশেষজ্ঞরাও বসছেন। রয়েছেন শিশু এবং স্ত্রীরোগ বিশেষজ্ঞরাও। চিকিৎসকদের বক্তব্য, ‘মানুষের চিকিৎসা করার জন্য এই পেশায় আসা। কেউ ইচ্ছে করে কর্মবিরতি করে না।’
ডাক্তারদের একাংশের দাবি, এই ক্লিনিক ভবিষ্যতেও চলবে। হয়তো দীর্ঘদিন ফুটপাতে থাকবে না। কিন্তু, অভয়ার নামে ফ্রি ক্লিনিক আমরা চালানোর চিন্তাভাবনা করছি। এদিন ওই ক্লিনিকে রোগী দেখছিলেন চিকিৎসক পুর্ণেন্দু মুখোপাধ্যায় সহ আরও কয়েকজন। তাঁদের বক্তব্য, ‘আমরা আমাদের মতো করে সাহায্য করছি। তবে সরকারি হাসপাতালের পরিষেবায় সমস্যা তৈরি করে নয়।’