এই সময়, নামখানা: শুক্রবার রাত থেকে প্রবল দুর্যোগে লন্ডভন্ড সুন্দরবনের বিস্তীর্ণ এলাকা। মাঝরাতে হঠাৎ ঝড়ের গতি বাড়ায় মাথা গোজার ঠাঁইটুকু ছেড়ে বেরিয়ে আসেন সুন্দরবনের নীলিমা মণ্ডল। তিনি ঘর ছেডে় বেরোতেই তাঁর চোখের সামনে অ্যাসবেসটসের ছাউনি উড়ে যায়। বৃষ্টির মধ্যে কোলে বাচ্চা নিয়ে প্রতিবেশীদের বাড়িতে আশ্রয় নেন নীলিমা ও বাড়ির অন্যরা। ততক্ষণে ভেঙে পড়ে মাটির বাড়িটি।এক নাগাড়ে বৃষ্টির সঙ্গে ঝোড়ো বাতাস বইছে সুন্দরবনের উপকূলে। ঝড়-বৃষ্টির জেরে সমুদ্র উত্তাল থাকায় মৎস্যজীবীদের আজ রবিবার পর্যন্ত সমুদ্রে যেতে বারণ করা হয়েছে। এখন সুন্দরবনের উপকূল এলাকার খাল, বিল এবং নদীর জল ধারণ ক্ষমতাও নেই বললে চলে। ফলে প্রবল বৃষ্টির জেরে সুন্দরবনের উপকূল এলাকার নদী এবং সমুদ্রের বেহাল মাটির বাঁধগুলোর অবস্থাও খারাপ।
দুর্যোগের জেরে নদী এবং সমুদ্রের জলস্তর বাড়ায় নতুন করে চিন্তায় পড়েছে কাকদ্বীপ, সাগর, পাথরপ্রতিমা, নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ-সহ মৌসুনি দ্বীপের বাসিন্দারা। সেচ দপ্তরের এক অধিকারিক বলেন, ‘আচমকা খারাপ আবহাওয়ার জেরে ঝড়ো বাতাসের সঙ্গে ভারী বৃষ্টি শুরু হওয়ায় বেশ কিছু জায়গায় নদী এবং সমুদ্র বাঁধের মেরামতের কাজে ব্যাঘাত ঘটছে। পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসনের পাশাপাশি সেচ দপ্তরের কর্মীরাও মাটির বাঁধগুলোর উপর নজর রাখছে। মেরামতের জন্য সমস্ত সামগ্রী আগে থেকে মজুদ রাখা হয়েছে।’
শুক্রবার থেকেই নিম্নচাপ ও মৌসুমি অক্ষরেখার জোড়া ফলায় বিপর্যস্ত দক্ষিণ ২৪ পরগনা জেলার জনজীবন। শুক্রবার থেকে দফায় দফায় জেলা জুড়ে ভারী বৃষ্টি হচ্ছে। বইছে ঝোড়ো হাওয়া। রাত থেকে বৃষ্টির পরিমাণ বাড়ে। সঙ্গে বাতাসের দাপটও। শনিবার জলমগ্ন হয়ে পড়ে জেলার একাধিক নিচু এলাকা। সুন্দরবন উপকূলে ঝড়ের দাপট ছিল ঘণ্টায় ৫০ থেকে ৬০ কিলোমিটার।
ঝড়ের জেরে কাকদ্বীপ মহকুমার নামখানা, সাগর, পাথরপ্রতিমায় একাধিক মাটির বাড়ি, দোকান, গাছ, ইলেকট্রিক পোস্ট, পানের বরোজ ভেঙে পড়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। সব থেকে বেশি ক্ষতি হয়েছে নামখানা ব্লকে।
নামখানার হরিপুরে হাজরা বাজারে দুর্যোগের জেরে ভেঙে পড়ে প্রায় ২৫টি দোকান। হরিপুরে ভেঙে পড়েছে ৩০টির বেশি মাটির বাড়ি। আরও বেশ কিছু বাড়ির ছাউনি উড়ে গিয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যদের প্রশাসন সরিয়ে নিয়ে যায়। এ দিন সকালে এলাকায় যান স্থানীয় পঞ্চায়েত প্রধান দেবব্রত মণ্ডল।
পঞ্চায়েত ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখে। নামখানা থানার পুলিশের একটি দলও এলাকায় পৌঁছয়। স্থানীয় বাসিন্দা মনিরানি দাস জানান, মাঝরাতে ঝড়ের গতি বাড়তেই হুড়মুড়িয়ে এলাকার একের পর এক মাটির বাড়ি ভেঙে পড়ে।
শনিবার সকাল থেকে ঝোড়ো বাতাসের সঙ্গে লাগাতার বৃষ্টি চলে। গোটা এলাকা বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। প্রাকৃতিক দুর্যোগ চলতে থাকলে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বাড়ার আশঙ্কা করছেন স্থানীয়রা। পঞ্চায়েতের প্রধান দেবব্রত মণ্ডল বলেন, ‘এলাকার ক্ষয়ক্ষতি খতিয়ে দেখা হয়েছে। ব্লক প্রশাসনকে জানানো হবে। ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ যাতে সরকারি সাহায্য পায়, সেদিকটা আমরাও নজরে রাখব।’