এই সময়: রোগী কল্যাণ সমিতির মাথায় যে আর রাজনীতিবিদ বা জনপ্রতিনিধিদের রাখা হবে না, তা সোমবার নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠক থেকেই ঘোষণা করেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এ বার আরজি কর-সহ রাজ্যের সব হাসপাতালের সেই সমিতি ভেঙে দেওয়ার কথাও ঘোষণা করলেন তিনি। শনিবার আচমকা স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নায় হাজির হন মুখ্যমন্ত্রী।আন্দোলন প্রত্যাহারের অনুরোধ জানিয়ে সেখানেই তিনি রোগী কল্যাণ সমিতি ভেঙে দেওয়ার কথা জানিয়ে দেন। তাঁর এই ঘোষণাকে স্বাগত জানান আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তাররাও। গত সোমবার নবান্নের প্রশাসনিক বৈঠকে মমতা জানিয়েছিলেন, প্রতিটি হাসপাতালের ক্ষেত্রে রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে সংশ্লিষ্ট হাসপাতালের অধ্যক্ষকেই রাখা হবে।
ওই পদে সাধারণত বসানো হতো স্থানীয় বিধায়ক বা সাংসদকে। ২০১৬ সালের নিয়ম বদলে সমাজের বিশিষ্টদেরও চেয়ারম্যান পদে বসানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতদিন আরজি কর হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান পদে ছিলেন শ্রীরামপুরের তৃণমূল বিধায়ক সুদীপ্ত রায়।
ধর্ষণ এবং খুনের ঘটনার পরে ওই সমিতির বিরুদ্ধে একাধিক দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে। সেই তদন্তে নেমে কেন্দ্রীয় এজেন্সির তদন্তকারীরা হানা দেন সুদীপ্ত রায়ের নার্সিংহোম এবং বাড়িতে। শনিবার জুনিয়র ডাক্তারদের ধর্নায় মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আরজি করের রোগী কল্যাণ সমিতি আমি ভেঙে দিলাম। রাজ্যের সব মেডিক্যাল কলেজের রোগী কল্যাণ সমিতিও ভেঙে দিচ্ছি।’
তাঁর সংযোজন, ‘মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান হবেন অধ্যক্ষেরা। কমিটিতে থাকবেন একজন করে সিনিয়র এবং জুনিয়র ডাক্তার, একজন সিস্টার, বিধায়ক এবং স্থানীয় থানার আইসি।’ গত ৯ আগস্ট আরজি কর হাসপাতালে এক মহিলা চিকিৎসকের দেহ উদ্ধার হয়। তদন্তে জানা যায়, ওই চিকিৎসককে ধর্ষণ করে খুন করা হয়েছে।
সে দিন থেকে কর্মবিরতির ডাক দেন জুনিয়র ডাক্তারেরা। নির্যাতিতার বিচারের পাশাপাশি সরকারি হাসপাতালে নিরাপত্তার দাবিও তোলেন তাঁরা। সেই মামলায় আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের প্রাক্তন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষকে দুর্নীতির অভিযোগে গ্রেপ্তার করে সিবিআই। এ বার সেখানকার রোগী কল্যাণ সমিতিও ভেঙে দিলেন মমতা।
স্বাস্থ্য দপ্তর সূত্রের খবর, সাধারণত হাসপাতাল পরিচালনার বিষয়টি দেখত রোগী কল্যাণ সমিতি। স্থানীয় পঞ্চায়েত সদস্য বা পুরসভার কাউন্সিলার, সাংসদ বা বিধায়ক, সরকারি আধিকারিক, স্বাস্থ্য বিভাগের আধিকারিক, স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্য, বিশিষ্টজনদের নিয়ে তৈরি হতো এই সমিতি। সেখানে থাকতেন আইএমএ-র সদস্যও।
হাসপাতাল সঠিক ভাবে পরিচালনার জন্য তহবিলের টাকা কোথায়, কী ভাবে খরচ হবে, তা নিয়ে সিদ্ধান্ত নিত এই সমিতি। আরজি কর হাসপাতালের ক্ষেত্রে বিভিন্ন সময়ে তহবিলের টাকা নয়ছয়ের অভিযোগ উঠেছিল। মুখ্যমন্ত্রী এদিন ঘোষণা করেন, মেডিক্যাল কলেজের পাশাপাশি সমস্ত বড় হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির মাথাতে আর রাজনীতিবিদরা থাকবেন না।