• ২ মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে লণ্ডভণ্ড হল হলদিয়ার ১৮ নম্বর ওয়ার্ড
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, হলদিয়া: শুক্রবার রাতে দু’মিনিটের ঘূর্ণিঝড়ে কার্যত লণ্ডভণ্ড হয়ে গিয়েছে হলদিয়া পুরসভার ১৮নম্বর ওয়ার্ড। রাত ১১টা ১৫মিনিট নাগাদ আচমকা ঝড়ে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে গোটা এলাকা। পুরসভা সংলগ্ন পঞ্চায়েত এলাকার কয়েকটি গ্রামও ঝড়ে বিধ্বস্ত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বড় বড় গাছ পড়ে গিয়ে শনিবার দিনভর বিস্তীর্ণ এলাকা বিদ্যুৎহীন থাকে। উপড়ে গিয়েছে বিদ্যুতের খুঁটি, উল্টে পড়েছে ট্রান্সফর্মার। পুরসভার ১৮নম্বর ওয়ার্ডের চকদ্বীপা, আন্দুলিয়া এলাকায় ঝড়ে রাস্তার উপর উপড়ে পড়েছে প্রচুর গাছ। এলাকার বাগানগুলি তছনছ হয়েছে। পুরসভা ও বিদ্যুৎ দপ্তর জানিয়েছে, পাঁচ-ছ’টি ট্রান্সফর্মার এবং ৪০টিরও বেশি বিদ্যুতের খুঁটি উল্টে গিয়েছে। শুধু ঘূর্ণিঝড় নয়, বৃষ্টির সঙ্গে রাতভর ঝোড়ো হাওয়াতেও পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকায় বিদ্যুতের তার ছিঁড়েছে। দিনভর হলদিয়া পুরসভা ও পঞ্চায়েত এলাকায় বিদ্যুৎ না থাকায় বিপাকে পড়েন মানুষজন।

    এদিন সকাল হতেই পুরকর্মী চন্দন বেরার নেতৃত্বে একাধিক বিপর্যয় মোকাবিলা টিম রাস্তার উপর থেকে গাছ সরিয়ে দ্রুত চলাচলের উপযোগী করেন। আন্দুলিয়ার বাসিন্দা নয়ন গুমটিয়া বলেন, ঝড়ের এমনই দাপট যে আন্দুলিয়ার প্রাচীন রথকে ৫০ফুট দূরে নিয়ে গিয়ে জমিতে উল্টে ফেলে দিয়েছে। ফলের বাগানগুলি তছনছ হয়ে গিয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে বিধ্বস্ত ওয়ার্ড পরিদর্শন করেন মহকুমাশাসক তথা পুরপ্রশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায়। তিনি আন্দুলিয়ায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষজনের সঙ্গে কথা বলেন।

    উল্টে পড়া রথ হাইড্রা মেশিন এনে সোজা করা হয়। বিদ্যুৎ না থাকায় বাসিন্দারা পানীয় জলের সমস্যার কথা জানান। পুরসভা থেকে আন্দুলিয়া, চকদ্বীপা পূর্বপল্লিতে পানীয় জলের ট্যাঙ্ক পাঠানো হয়। মহকুমাশাসক বলেন, বিদ্যুৎ দপ্তরকে দ্রুত পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। বৃষ্টি ও বিপর্যয়ের মধ্যেও দপ্তরের কর্মীরা যুদ্ধকালীন তৎপরতায় কাজ করছেন। ব্রজলালচক কাস্টমার কেয়ারের স্টেশন ম্যানেজার গয়াপ্রসাদ ঘোড়ই বলেন, মাঠের মাঝখানে এক কোমর জলে নেমে কাজ করতে গিয়ে খুবই সমস্যা হচ্ছে। রাতের মধ্যেই বিদ্যুৎ দেওয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। চকদ্বীপার বাসিন্দা কমল বিষয়ী বলেন, শুক্রবার বিকেলে থেকে বিদ্যুৎ নেই।

    টানা বৃষ্টিতে হলদিয়ার বেশ কয়েকটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। পুর কর্তৃপক্ষ এদিন সকাল থেকে নিকাশি নালা পরিষ্কার করে। আইওসি রিফাইনারি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, একটানা দু’দিনের বৃষ্টিতে রিফাইনারির কাজকর্ম ব্যাহত হচ্ছে। জমা জলে তেলের ফোঁটা মিশে যাওয়ায় সমস্যা হয়। সেজন্য সকালের শিফটে কাজ সাময়িক বন্ধ রাখা হয়।

    দুর্যোগের কারণে হলদিয়ার কুঁকড়াহাটি ও টাউনশিপ ফেরিঘাটে আটকে পড়া দুই শতাধিক যাত্রীকে শনিবার রাতে বাসে করে গন্তব্যে পৌঁছনোর ব্যবস্থা করল জেলা প্রশাসন। এদিন সন্ধ্যার পর নদী উত্তাল থাকায় লঞ্চ চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। ফলে হলদিয়া থেকে রায়চক ও ডায়মন্ডহারবার ফেরির  যাত্রীরা সমস্যায় পড়েন। ওই দু’টি ফেরি পারাপারের জন্য ১৩০ জন যাত্রী ছিলেন। এদিকে নন্দীগ্রাম যাওয়ার জন্য টাউনশিপ ফেরিঘাটে ৪০-৫০জন আটকে পড়েন। মহকুমাশাসক সুপ্রভাত চট্টোপাধ্যায় ও এসডিপিও অরিন্দম অধিকারী বলেন, ওই যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিতে কলকাতার জন্য তিনটি এবং নন্দীগ্রামের জন্য একটি সরকারি বাসের ব্যবস্থা করা হয়েছে। 
  • Link to this news (বর্তমান)