• রানিগঞ্জে ইসিএলের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারে ধসে ২ যুবকের মৃত্যু
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বর্ধমান ও আসানসোল: শুক্রবার রাত থেকে শনিবার দিনভর বৃষ্টিতে ধস, বজ্রাঘাত ও বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে দুই বর্ধমানে পাঁচজনের মৃত্যু হয়েছে। শনিবার দুপুরে রানিগঞ্জ থানার সাহেবগঞ্জ এলাকায় ইসিএলের মাইনিং কলেজের পরিত্যক্ত কোয়ার্টারের একাংশ ভেঙে পড়ায় দুই যুবকের মৃত্যু হয়েছে। মৃতদের নাম রাজীব দাস(১৯) ও চিচোরে বাউরি(২৮)। স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই এলাকায় জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ একটি বাইপাস রাস্তা করবে। তাই সেখানে মানুষকে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছে। সকলে বাড়ি ছেড়ে চলেও গিয়েছেন। সেই এলাকাগুলির বাড়িগুলি ভেঙে ইট, রড় নিয়ে যাচ্ছে অনেকে। এদিনও সেই কাজে কয়েকজন ঢুকেছিল। বৃষ্টি মাথায় নিয়েই বাড়ি ভেঙে ইট, রড বের করার কাজ চলছিল। তখনই বাড়ি ধসে পড়ে। শুরু হয় উদ্ধারকাজ। বিকেলে স্থানীয় দুই যুবকের মৃতদেহ উদ্ধার হয়। ডিসি ধ্রুব দাস বলেন, বাড়ি চাপা পড়ে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে। স্থানীয় এগারা পঞ্চায়েতের উপপ্রধান সন্দীপ গড়াই বলেন, আমরা চাই জাতীয় সড়ক কর্তৃপক্ষ তাদের অধিগ্রহণ করা বাড়িগুলি ভেঙে গুঁড়িয়ে দিক। যাতে এধরনের ঘটনা না ঘটে। পূর্তদপ্তরের এনএইচ ডিভিশনের আধিকারিক নিশিকান্ত সিং বলেন, যারা ক্ষতিপূরণ পেয়েছে, তাদেরই বাড়ি ভাঙবে।

    রানিগঞ্জ পুনর্বাসন প্রকল্পে ধস কবলিত এলাকার মানুষদের নতুন ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়ার জন্য প্রশাসনিক বৈঠক হল। এদিন আসানসোলের সার্কিট হাউসে বৈঠকে রা঩জ্যের শ্রমমন্ত্রী মলয় ঘটক, জেলাশাসক পোন্নমবলম এস, আসানসোলের মেয়র বিধান উপাধ্যায়, এডিডিএ’র চেয়ারম্যান কবি দত্ত, বিধায়ক নরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী, হরেরাম সিং উপস্থিত ছিলেন। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে, ধসকবলিত এলাকার বিধায়করা চিহ্নিত করবেন, কোন কোন এলাকার অবস্থা খুব খারাপ। এলাকার মানুষকে বুঝিয়ে পুনর্বাসন প্রকল্পে নির্মিত ফ্ল্যাটে নিয়ে যাওয়া হবে। জেলাশাসক বলেন, প্রাথমিকভাবে তিন হাজার পরিবারকে স্থানান্তর করার জন্য আমরা প্রস্তুত। 

    পূর্ব বর্ধমানের মেমারির সাতগেছিয়ায় বজ্রপাতে এক দম্পতির মৃত্যু হয়েছে। পুলিস জানিয়েছে, তাঁদের নাম বাপিলাল টুডু(৪৭) ও আরতি টুডু(৪২)। তাঁরা শুক্রবার বেগুটে মাঠে কাজ কাজ করতে গিয়েছিলেন। আচমকা বজ্রপাতে তাঁদের দু’জনের মৃত্যু হয়। ছিঁড়ে পড়া তারে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে বারাবনি থানার লালগঞ্জের আমডিয়ায় সুবোধ গড়া‌ইয়ের(২০) মৃত্যু হয়েছে। 

    দুই বর্ধমানের বিভিন্ন এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। বর্ধমান শহরের গোলাপবাগ, নার্স কোয়ার্টার, স্টেশন চত্বর সহ বিভিন্ন জায়গায় জল জমে যায়। রাস্তা আগে থেকেই খানাখন্দে ভর্তি ছিল। বৃষ্টির জল জমে যাওয়ায় বেশ কিছু রাস্তায় চলাচল করা বিপজ্জনক হয়ে উঠছিল। তবে বৃষ্টি হওয়ায় ধান চাষিরা খুশি। জমিতে জলের প্রয়োজন ছিল। বৃষ্টি সেই ঘাটতি মিটিয়েছে। অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের জেরে দুর্গাপুর থেকে লাউদোহা পাকা রাস্তার উপরও ধস নেমেছে। ফরিদপুর থানার সামনে এই ধস ঘিরে চাঞ্চল্য ছড়ায়। আসানসোল স্টেশন সহ শহরের বেশ কিছু অংশ জলমগ্ন হয়ে যায়। ট্রেন ধরতে গিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েন যাত্রীরা। মেয়র বলেন, স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় একটি বিশাল শপিংমল হয়েছে। সেই কারণে জল জমে যাচ্ছে কিনা খতিয়ে দেখা হবে। রেলের সঙ্গে সমস্যাগুলি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

    ভারী বৃষ্টি হচ্ছে ঝাড়খণ্ডে। তাই ডিভিসি কখন জল ছাড়ে তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। ডিভিসির এগজিকিউটিভ ডিরেক্টর অঞ্জনীকুমার দুবে বলেন, ঝাড়খণ্ডে বৃষ্টি হচ্ছে। আমাদের বাঁধগুলিতে জল ধরে রাখার মতো অবস্থায় রয়েছে। মাইথন থেকে ছ’হাজার ও পাঞ্চেত থেকে ২০ হাজার কিউসেক হারে জল ছাড়া হচ্ছে।

    বৃষ্টির জেরে আউশগ্রামের বিষ্ণুপুর গ্রামে হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির দোতলা বাড়ি। মাটি চাপা পড়ে একবছরের শিশুকন্যা সহ তিনজন গুরুতর জখম হয়। তাদের মানকর প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে গিয়ে চিকিৎসা করানো হয়।
  • Link to this news (বর্তমান)