• লালগড়ের রাঙামেটা গ্রামে করম পরব উদযাপন, ব্যাপক উচ্ছ্বাস
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সমীর মাহাত, ঝাড়গ্রাম: রাতভর বৃষ্টি উপেক্ষা করে শনিবার ঝাড়গ্রাম সহ গোটা জঙ্গলমহলে উদযাপিত হল কুড়মি জনজাতির ঐতিহ্যবাহী করম পরব। এক সময় মাওবাদী সন্ত্রাসের আঁতুড় ঘর ছিল লালগড়। সেই লালগড়ের রাঙামেটা গ্রামে এই পরব উদযাপন ঘিরে এলাকাবাসীর উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মতো। গ্রামবাসীদের সহযোগিতায় এবং সরকারি আর্থিক অনুদানে এই পরব এবার জমজমাট হয়ে উঠেছে। 

    জানা গিয়েছে, বিনপুর-১ ব্লকের লালগড় গ্রামপঞ্চায়েতের রাঙামেটা গ্রামের ‘মাহাত’ বা ‘মোড়ল’ ঘর সঞ্জয় মাহাতদের বাড়িতে করম ডাল প্রতিস্থাপন করে বহু বছর ধরে উদযাপিত হয়ে আসছে এই পরব। প্রতি বছরের মতো এবারও এই পুজোর উপাসক কচিকাঁচারা রাঙামেটার জঙ্গল থেকে পুজোর নৈবেদ্য আমলকি পাতা, শালপাতা, শালের দাঁতুনকাঠি, হরীতকী, কেঁউয়া বা বনশিমুল ফুল সংগ্রহ করেন। 

    এদিন বিকেলে গ্রামবাসীরা ঢোল, ধামসা-মাদলের বাজনা ও নাচগানের মধ্য দিয়ে শোভাযাত্রা করে পাশের জঙ্গল থেকে করম গাছের ডাল কেটে এনে আখড়ায় প্রতিস্থাপন করেন। করম কহনি ও করম ডাল পুজো গোটা বিষয়টি পরিচালনা করেন কুড়মিদের নিজস্ব পূজারি বা গ্রামের লায়া বিভীষণ মাহাত। সেই সঙ্গে এখানে সারারাত ধরে পাতানাচ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়। এলাকার বিভিন্ন গ্রামের পাতা নাচের দল এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়।

    অনুষ্ঠানে এদিন বিশিষ্ট অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিনপুর-১ বিডিও অনল সরকার, লালগড় গ্রামপঞ্চায়েতের প্রধান সুনীল মুর্মু, কলকাতা হাইকোর্টের সরকারি আইনজীবী প্রশান্তবিহারী মাহাত সহ এলাকার অন্যান্য বিশিষ্টজনেরা। এবার এই করম পরব কমিটি সহ ঝাড়গ্রাম জেলার আটটি ব্লকের আটটি গ্রাম ও ঝাড়গ্রাম পুরসভার দু’টি পরব কমিটি ১ লক্ষ ৩০ হাজার টাকার সরকারি অনুদান পাবে বলে প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে।

    রাঙামেটা গ্রামের বাসিন্দা তথা এই করম পরব উদযাপন কমিটির অন্যতম উদ্যোক্তা সুদীপ্ত মাহাত বলেন, করম আমাদের কুড়মি জনজাতির প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী পরব। আমাদের এখানে বহু প্রাচীনকাল থেকেই এই পরব উদযাপিত হয়ে আসছে। এবার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে সরকারি অনুদান পেয়ে গ্রামবাসীদের স্বতঃস্ফূর্ত সহযোগিতায় করম পরব আরও ভালোভাবে উদযাপন করতে পারছি। সন্ত্রস্ত সময়ে লালগড় সহ গোটা জঙ্গলমহলের গ্রামীণ জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সাংস্কৃতিক চর্চা, অর্থনীতি সহ সব কিছুর কোমর ভেঙে গিয়েছিল। রাজ্যে পালাবদলের পর মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের হাত ধরে এলাকায় শান্তি প্রতিষ্ঠা হয়েছে। আমাদের সংস্কৃতির যথেষ্ট বিকাশ ঘটেছে। করম পরবের জন্য সরকার পূর্ণদিবস ছুটি ঘোষণা করেছে। আমাদের এই সাংস্কৃতিক বিকাশের জন্য সরকারি আর্থিক অনুদান ও সরকারি ছুটি পাওয়া যাচ্ছে। এর জন্য আমরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ও সংশ্লিষ্ট প্রশাসনকে কৃতজ্ঞতা জানাই। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)