• ‘ডাইনি’ সন্দেহে দুই আদিবাসী মহিলাকে বিবস্ত্র করে পিটিয়ে খুন
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ডাইনি সন্দেহে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে দুই আদিবাসী মহিলাকে বিবস্ত্র করে পিটিয়ে, লাথি মেরে খুন করার অভিযোগ উঠল গ্রামেরই মাঝিহারাম লক্ষ্মীকান্ত সরেন সহ কয়েকজনের বিরুদ্ধে। এছাড়াও অভিযোগ, সাক্ষ্যপ্রমাণ লোপাটের জন্য দু’টি দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় কাঁদরের জলে। ঘটনাটি ঘটেছে ময়ূরেশ্বর থানার হরিসড়া গ্রামে। সমাজ মাধ্যমে মারধরের সেই ভিডিও ভাইরাল হতেই পুলিস তদন্তে নেমে বেশ কয়েকজনকে চিহ্নিত করে। তাদের জেরা করে ঘটনার পাঁচদিন পর শনিবার ভোররাতে কাঁদরের জল থেকে নগ্ন ওই দুই মহিলার পচাগলা দেহ উদ্ধার করে পুলিস। ঘটনায় মৃতার পরিবারের পক্ষ থেকে ২৪ জন গ্রামবাসীর নামে অভিযোগ দায়ের করা হয়। পুলিস ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করে। সরকারি আইনজীবী মনিরুল হক বলেন, এসিজেএম প্রোজ্জ্বল ঘোষ ধৃত লক্ষ্মীকান্ত, দশমী কিস্কু, বিনোদ সরেন, মনোজ টুডুকে ছয়দিন পুলিস হেফাজতে ও বাকিদের ১৪ দিন জেল হেফাজতে থাকার নির্দেশ দিয়েছেন। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, আদিবাসী অধ্যুষিত হরিসড়া গ্রামের শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছিল। তাতেই অনেকে সন্দেহ করে ডাইনির নজর লেগেছে। লাগোয়া কেশেডাঙালপাড়া গ্রামের বছর চুয়ান্নর লোদগি কিস্কু ও বছর পঁয়তাল্লিশের ডলি হাঁসদা ঝাড়ফোঁক করে। ফলে গ্রামবাসীরা এই দু’জনকে সন্দেহ করে। গত রবিবার মনসা পুজো উপলক্ষ্যে বাপের বাড়ি হরিসড়া গ্রামে আসে। খবর পেয়ে গ্রামের মাঝিহারামের নির্দেশে ওইদিন রাতে দুই মহিলার বাড়ি ঘিরে ফেলে বাসিন্দাদের একাংশ। এরপর টেনে বের করে তাঁদের পরনের শাড়ি খুলে হাত বেঁধে শুরু হয় মারধর। লাঠি দিয়ে আঘাতের পাশাপাশি চলে এলোপাথাড়ি লাথি। সেখানেই মৃত্যু হয় দুই মহিলার। পরে হাত বাঁধা অবস্থায় দু’জনের দেহ ভাসিয়ে দেওয়া হয় গ্রামের কাঁদরের জলে। পুলিসকে জানালে পরিবারের সদস্যদেরও খুন করা হবে বলে হুমকি দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। মধ্যযুগীয় এই বর্বরতার ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল হয়। তাতে মারধরের সময় পুরুষদের পাশাপাশি মহিলারও উপস্থিত ছিলেন। এতবড় ঘটনা ঘটলেও পুলিসের কাছে কোনও খবর ছিল না। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে ঘটনার চারদিন পর অভিযুক্তরা চিহ্নিত হয়। তাদের সঙ্গে নিয়ে গিয়ে কাঁদরের জল থেকে দুই মহিলার পচাগলা নগ্ন দেহ উদ্ধার করে পুলিস। ঘটনায় থানায় খুনের অভিযোগ দায়ের করেন ডলি হাঁসদার স্বামী বুঁধি হাঁসদা।

    মারধরের কথা স্বীকার করে লক্ষ্মীকান্তের স্ত্রী সুরমিলা মার্ডি বলে, লোদগি ডাইনি। ওইদিন রাত ১২টা নাগাদ আমার ছেলেকে টেনে শ্মশানে নিয়ে যাচ্ছিল। বলছিল রক্ত খাব। আমাকে বলে তোকে ও তোর স্বামীকে খাব। আমার চিৎকারে গ্রামের সকলে দৌড়ে এলে ওরা চলে যায়। পরে ডাইনিদের বাড়ি থেকে টেনে বের করা হয়। ছেলের ক্ষতি করবে, সবাইকে জ্বালাবে, মারব না! অন্যদিকে লোদগি কিস্কুর মেয়ে রানি মুর্মু বলেন, লক্ষ্মীরাম ও কিছু লোক মাকে বাড়ি থেকে টেনে নিয়ে গিয়ে পিটিয়ে হত্যা করল। আমার মায়ের হত্যাকারীদের চরম শাস্তি চাই। আমরা নিরাপত্তা চাইছি। জেলা পুলিস সুপার রাজনারায়ণ মুখোপাধ্যায় বলেন, ঘটনায় ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রামে পুলিস পিকেট বসানো হয়েছে। 

     • ময়ূরেশ্বরে দুই আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে খুনে ধৃতদের রামপুরহাট আদালতে তোলা হচ্ছে। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)