• অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিককে কোটির বেশি টাকা সাইবার প্রতারণা
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সুমন তেওয়ারি, আসানসোল: আর লক্ষ নয়, এবার কোটি টাকার অঙ্কে সাইবার প্রতারণার ঘটনা ঘটল আসানসোলে। আসানসোল শহরের হীরাপুর থানা এলাকার এক অবসরপ্রাপ্ত ব্যাঙ্ক আধিকারিকের ১ কোটি ৩৬ লক্ষ টাকা প্রতারণা করল সাইবার ঠগীরা। প্রায় এক বছর ধরে সাইবার প্রতারকদের দেওয়া ভুয়ো অ্যাপের মাধ্যমে টাকা ঢেলে গিয়েছেন বৃদ্ধ। তৎপর্যপূর্ণ বিষয় হল ‘এক্স-ক্রিটিক্যাল’ নামে অ্যাপটি প্লে স্টোর থেকে ডাউনলোড করা হয়েছিল। মূলত শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্টমেন্টের টোপ দিয়েই এই বিপুল পরিমাণ অর্থের প্রতারণা করা হয়। দীর্ঘদিন ব্যাঙ্কের অডিট অফিসারের দায়িত্ব সামলানো এই বৃদ্ধও বোকা বনে যান প্রতারকদের কাছে। ওই বৃদ্ধের অভিযোগ, ওরা বলছে ২৪ লক্ষ টাকা দিলে তিন কোটি টাকা পাব। ডিসি অরবিন্দ আনন্দ বলেন, একটি অভিযোগ পাওয়া গিয়েছে। আমরা তদন্ত করছি। বার বার আমরা মানুষকে সচেতন করছি শেয়ার মার্কেটে ইনভেস্ট করার নাম করে প্রতারণা চক্র সক্রিয় রয়েছে। আপনাদের সতর্ক থাকতে হবে। 

    স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, ব্যাঙ্ক আধিকারিকের পরিবার অত্যন্ত স্বচ্ছল। স্ত্রী পোস্ট অফিসের কর্মী, দুই ছেলে, মেয়ে ডাক্তার। অবসরের টাকা শেয়ার মার্কেটে বিনিয়োগ করতে চেয়ে রাতারাতি আরও ধনী হতে চেয়েছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ওই ব্যাঙ্ক অফিসার। সে সব নিয়ে সার্চ করার পরই তাঁর কাছে একটি ফোন আসে। তাঁকে বিপুল টাকা লাভের টোপ দিয়ে প্রথমে একটি হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে যুক্ত করা হয়। তারপরই অ্যাপ ডাউনলোড করিয়ে টাকা বিনিয়োগ করানোর কাজ শুরু হয়। তদন্তকারীদের সূত্রে জানা গিয়েছে, এই অ্যাপে ঢুকলে ২৭টি ফেক ওয়েবসাইটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায়। সেখানে বিভিন্ন বিনিয়োগে বিভিন্ন লাভের অঙ্ক দেখানো হচ্ছে। মূলত পুরো খেলাটিই হচ্ছে ডলারে। প্রতারিত ব্যাঙ্ক আধিকারিকের ফোন খতিয়ে দেখে জানা গিয়েছে, অ্যাপের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, আধিকারিকের সেখানে তিন কোটি টাকা রয়েছে। কিন্তু টাকা তুলতে গেলে আরও ২৪ লক্ষ টাকা চার্জ জমা করতে হবে। এভাবে টাকা তোলা সময়ে বার বার টাকা চেয়ে সাধারণ মানুষকে প্রতারিত করা হচ্ছে। অ্যাপে টাকা দেখানো হলেও সেই টাকা কিন্তু বাস্তবে কখনও তোলা যায় না। জানা গিয়েছে, এক এক বারে আট লক্ষ দশ লক্ষ টাকার মতো বিনিয়োগ করে দিয়েছেন আধিকারিক। তাই খুব কম ট্রানজেকশনের মাধ্যমেই এই বিপুল টাকা প্রতারকদের কাছে ঢুকে গিয়েছে। 

    আসানসোল সাইবার থানার পুলিস জানিয়েছে, ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট সহ নানা ব্যাপারে প্রতারকদের থেকে সাধারণ মানুষকে সতর্ক থাকতে হবে। ফোন করে বলা হচ্ছে, তাঁর আত্মীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। নিজেদের পুলিস পরিচয় দিয়ে টাকা নিয়ে মামলা নিষ্পত্তি করে দেওয়ার ‘অফার’ দেওয়া হচ্ছে। এই ভাবে প্রতারণা করাকেই ডিজিট্যাল অ্যারেস্ট প্রতারণা বলছে পুলিস। পুলিসের দাবি, এই ফাঁদে পড়ছেন শিক্ষক-শিক্ষিকা থেকে চিকিৎসক সবাই। তাঁদের পরামর্শ, এভাবে পুলিস কখনও কাউকে গ্রেপ্তার করে আত্মীয়দের কাছ থেকে টাকা চায় না। এই প্রতারকরা ফোন করার সময়ে যে আত্মীয়কে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলা হয় তাঁকে কোনওভাবেই ফোন করতে দেয় না। আপনারা প্রতারকদের জাল ভেঙে আত্মীয়কে ফোন করে পুরো বিষয়টি নিশ্চিত হন।
  • Link to this news (বর্তমান)