• স্লোগান শেষে বিনামূল্যে বাফে স্টল, ডাক্তারদের আন্দোলনে ঢালাও বিরিয়ানি-ভাত-ফলের রস
    বর্তমান | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, কলকাতা: সল্টলেকে স্বাস্থ্যভবনের মূল ফটক থেকে সামান্য দূরেই আন্দোলনের দুর্গ গড়ে উঠেছে। গোটা রাস্তা ত্রিপল দিয়ে ঢাকা। কোথাও অস্থায়ী তাঁবু। জায়গায় জায়গায় খাট-বিছানা পাতা। প্রায় পাঁচ-ছ’জায়গায় জটলা পাকিয়ে রয়েছেন আন্দোলনকারীরা। সেখানে চলছে স্লোগান। যত না চিকিত্সক, তার থেকেও বেশি সাধারণ মানুষ। তাঁরাও তালে তালে স্লোগান দিচ্ছেন। স্লোগান শেষে একেবারে এলাহি আয়োজন। তাঁবু খাটানো লম্বা জায়গা ভাগ করা হয়েছে। প্রথমে ত্রিপলের স্তূপ, জলের বোতল। তারপর ওষুধপত্র, পাশে শুকনো খাবার যেমন কেক, চিঁড়ে, লজেন্স। এর পাশে ফলের রস, বিরিয়ানি, ভাত-পায়েস-তরকারি সারি দিয়ে রাখা রয়েছে। এর উল্টো দিকে ডিমের ঝোল-জিরা রাইস। খাবারের অভাব নেই। স্লোগান শেষে শুধু থালা নিয়ে গেলেই হবে।

    খাবার নিতে গেলে, কেউ জিজ্ঞেসও করছেন না, আপনি কি স্লোগান দিয়েছেন? ফলত প্রচুর সাধারণ মানুষ এখানে এসে খেয়ে যাচ্ছেন। এত খাবার আসছে কোথা থেকে? খাবারের কাউন্টারে দাঁড়িয়ে এক আন্দোলনরত চিকিত্সক বললেন, ‘সবই লোকজন এসে দিয়ে যাচ্ছেন।’ এই আন্দোলনস্থলেই দেখা হয়ে যাচ্ছে, কলেজ জীবনে ফেলে আসা বন্ধুদের সঙ্গে। এক বন্ধু অনেকদিন বাদে দেখা হয়ে যাওয়া আর এক বন্ধুকে বললেন, কী খাবি বল? বিরিয়ানি, বাঙালি খাবার না ফলের রস? সব আছে। ওখানে চলে যা। কেউ কিচ্ছু বলবে না। গোটা এলাকাটা ফোটোজোন হয়ে গিয়েছে। দেওয়ালে, রাস্তায় স্লোগান লেখা। মানুষ যেন এই এলাকা পুজোর প্যান্ডেলের মতোই দর্শন করতে আসছেন। প্রথমে একটু স্লোগান দিয়ে গলা ভেঙে ফেলা, তারপর দেওয়ালে লেখা স্লোগানের ছবি তুলছেন তাঁরা। কিন্তু সেই ছবি তো সোশ্যাল মিডিয়াতে দিতে হবে। ক্যাপশন কী দেওয়া যায়? এইসব ভাবতে ভাবতে এক বন্ধুই আরেক বন্ধুকে বলে দিলেন, ওই স্লোগানের ছবি দিবি। এই স্লোগানটা ক্যাপশনে দিবি। 

    এই আন্দোলনের মধ্যেই চলছে বিকিকিনি। পার্ক সার্কাসের মহম্মদ ইয়াকুব বাম কর্মী-সমর্থকদের মধ্যে জনপ্রিয়। তিনি বামেদের মিটিং-মিছিলে পতাকা, ব্যান্ড নিয়ে পৌঁছে যান। এই সুযোগ তিনি ছাড়েননি। ‘জাস্টিস’ লেখা হেড ব্যান্ড আর ব্যাজ বানিয়ে পৌঁছে গিয়েছেন। ব্যাজ ৩০ টাকা। আর ব্যান্ড ১০ টাকা। যা চায়ের থেকেও বেশি বিক্রি হচ্ছে সেখানে। ইয়াকুব বলছিলেন, ‘সাপ্লাই দিয়ে উঠতে পারছি না। প্রচুর বিক্রি। একটু ঝুঁকি নিয়েই দেখলাম। ব্যাপারটা হিট হয়ে গিয়েছে।’

    স্ট্যান্ড ফ্যানের ফুরফুরে হাওয়া, খাট-বিছানা, দেদার খাওয়া-দাওয়া এসবের সঙ্গে অগুন্তি বায়ো-টয়লেটও রয়েছে সেখানে। লাইন দিয়ে ডাস্টবিনও আছে। সমস্যা বাড়ছে বৃষ্টি হলে। তাছাড়া ব্যবস্থাপনা ভালোই। আন্দোলনের এমন ভালো আয়োজন আর হয় না।
  • Link to this news (বর্তমান)