কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী-জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক নিয়ে ঠিক কী ঘটেছিল? জানালেন চন্দ্রিমা
প্রতিদিন | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: তিনদিনের টানটান স্নায়ুযুদ্ধের পর নমনীয় হতে নারাজ কোনও পক্ষই। যার জেরে বৃহস্পতিবার নবান্নের পর শনিবারও কালীঘাটের জুনিয়র ডাক্তার-মুখ্যমন্ত্রীর বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে। কিন্তু শনিবার আলোচনার টেবিলে দুপক্ষের বসার সর্বোচ্চ সম্ভাবনা তৈরি হয়েছিল। তা সত্ত্বেও বৈঠক না হওয়ায় সকলেই হতাশ। কিন্তু ঠিক কোন জটে আটকে গেল সমাধানের জন্য আলোচনা? লাইভ স্ট্রিমিং নিয়ে ‘দরাদরি’তে বৈঠকে হল না, সেটাই বলছেন আন্দোলনকারীরা। কিন্তু শনিবার ঠিক কী এমন ঘটনা ঘটল, যাতে এত বড় একটা সম্ভাবনা ভেস্তে গেল। রবিবার সাংবাদিকদের মুখোমুখি তা ব্যাখ্যা করলেন সেদিনের বৈঠকের অন্যতম শরিক, রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য।
রবিবার সাংবাদিক বৈঠক করে চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য সময়ের সঙ্গে সঙ্গে ঘটনাক্রম বিশদে জানিয়েছেন। সন্ধে ৬টা থেকে কালীঘাটের বাড়িতে জুনিয়র ডাক্তারদের আসার জন্য অপেক্ষা করছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সঙ্গে ছিলেন মুখ্যসচিব মনোজ পন্থ, স্বরাষ্ট্রসচিব নন্দিনী চক্রবর্তী, রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। তিনি বলেন, ”এই বৈঠক তো মুখ্যমন্ত্রী নিজের বাড়িতে ডেকেছেন। ৩৫-৪০ জন আসবেন বলে ওঁরা জানান। একটা বাড়িতে এতজনের জায়গা নাও হতে পারে। কিন্তু জুনিয়র ডাক্তাররা আসতে চেয়েছেন বলে মুখ্যমন্ত্রী তাতেই রাজি হয়েছেন। আমরা অপেক্ষা করলাম। তাঁরা এসেও এলেন না।”
শনিবার সন্ধেবেলা সেসময় বৃষ্টি পড়ছিল অঝোরে। লাইভ স্ট্রিমিংয়ের দাবিতে অনড় ডাক্তাররা নিজেরা আলোচনার জন্য সময় নিচ্ছিলেন বলে জানান চন্দ্রিমা। তাঁর কথায়, ”লাইভ বা তাঁদের ভিডিওগ্রাফি নিয়ে যা যা সমস্যা, তা বোঝানো হয়। মুখ্যমন্ত্রী নিজে বেরিয়ে এসে তাঁদের বোঝান যে প্রতিটি মিনিট রেকর্ড করা হবে। মুখ্যমন্ত্রী তাঁদের ভিজতে দেখে বলেন যে ভিতরে আসতে, চা খেয়ে যেতে। তাঁরা কোনও কথাই শোনেননি।” রাত ৯টা বেজে গিয়েছিল। বৈঠক কার্যত ততক্ষণে ভেস্তে গিয়েছে। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় কালীঘাটের বাড়ি থেকে একে একে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন মন্ত্রী, মুখ্যসচিবরা।
সাংবাদিক বৈঠকে চন্দ্রিমা বলেন, ”আমরা যখন বেরচ্ছি, তখন তাঁরা এসে বলল, এখন বৈঠক করতে চায়। মুখ্যসচিব বললেন, এখন তো ৯টা বেজে গিয়েছে। বৃষ্টি হচ্ছে। আপনারা আজ বাড়ি চলে যান। পরে আমরা একদিন বসব। কিন্তু ওঁরা তখনই আলোচনা চাইছিলেন। রাজ্য সরকার কি বসে আছে?
একটা ন্যারেটিভ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে যে তাঁরা যখনই চাইবেন তখনই সরকার আলোচনায় বসবে।সেটা না হলেই সরকারের কোর্টে বল ঠেলা হচ্ছে। এর পর চিকিৎসকদের তরফে যদি আবেদন আসে তখন দেখা যাবে।”
জুনিয়র ডাক্তাররা শনিবার রাতে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে অভিযোগ তোলেন, আলোচনায় সরকারের সদিচ্ছা নেই। তাই তাঁরা আগ্রহী হলেও সরকার সময় দিল না। উলটে ‘ঘাড় ধাক্কা’ দিয়ে বের করে দেওয়া হয়েছে। আর এখানেই তাঁদের দাবিকে নস্যাৎ করলেন রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী। বললেন, ”এই ধরনের কোন কথা আমি বাড়িতেও বলি না। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী ডেকেছেন ওঁদের, আমি বলব কেন? ভুল করেও বলিনি। ছোট ছোট ছেলেমেয়ে ওরা। আমি বলেছি, তিন ঘণ্টা সময় পেরিয়েছে।আমরা চলে যাচ্ছি। আমিও তো মা।” তাঁর পালটা দাবি, মুখ্যমন্ত্রী নিজে উদ্যোগ নেওয়ার পরও স্রেফ সময় অপচয় করেই শনিবার সে পথে হাঁটলেন না জুনিয়র চিকিৎসকরা।