এই সময়: নতুন পড়তে আসা ছেলেমেয়েদের র্যাগিং-মুক্ত পরিবেশ দেওয়া, না-দেওয়া নিয়ে বিতর্কে গত প্রায় এক মাস ধরে চূড়ান্ত অচলাবস্থা চলছে নদিয়ার হরিণঘাটায় বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে। পরিস্থিতি এমনই যে কর্তৃপক্ষ রাজ্যের শাসকদলের স্থানীয় ছাত্রনেতাদের হুমকি উপেক্ষা করতে না পেরে প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের সময় পেরিয়ে যাওয়ার পরেও হস্টেলে রেখে ফিজিক্যালি ক্লাস শুরু করতে পারেননি।এক রকম বাধ্য হয়ে শুক্রবার থেকে অনলাইন ক্লাস শুরু করেও নেতাদের রোষের মুখে পড়তে হয়েছে কর্তৃপক্ষকে। শুক্রবার বিকেল থেকে রাতভর ঘেরাও করে রাখা হয় ভিসি, রেজিস্ট্রার, বেশ কয়েকটি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান-সহ বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্তাব্যক্তিদের। অসুস্থ হয়ে পড়ায় ভিসি-কে হাসপাতালে ভর্তির সুযোগ দেওয়া হলেও শনিবার রাত পর্যন্ত বাকিদের ঘেরাও করে রাখা হয়েছে।
হস্টেলে নতুন পড়ুয়াদের রাখার ব্যাপারে কর্তৃপক্ষ ছাত্রনেতাদের থেকেও বিশ্ববিদ্যালয়ের র্যাগিং-বিরোধী কমিটির পরামর্শকে গুরুত্ব দেওয়াতেই অচলাবস্থা তৈরির চেষ্টা বলে অভিযোগ পড়ুয়া-অধ্যাপকদের একাংশের। যদিও হরিণঘাটার স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলার তথা ছাত্রনেতা রাকেশ পাড়ুইয়ের দাবি, ‘প্রথম বর্ষের পড়ুয়াদের হস্টেল দেওয়ার ক্ষেত্রে ইউজিসি-র গাইডলাইন মানছেন না কর্তৃপক্ষ। আমাদের দাবি মতো নতন পড়ুয়াদের রাখার ক্ষেত্রে পদক্ষেপ না করা হলে ঘেরাও চলবে।’
কলকাতা, যাদবপুর বা আশপাশের নামী কোনও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে র্যাগিং ইস্যু সামনে এলে গেল গেল রব ওঠে। অথচ সদ্য ৫১ বছরে পা রাখা রাজ্যের এলিট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে একই ইস্যুতে চলতে থাকা বিশৃঙ্খলা ঠেকাতে রাজ্য সরকার বা শিক্ষা দপ্তরের হেলদোল নেই বলে পড়ুয়াদের অভিভাবকদের অভিযোগ। হরিণঘাটায় এই বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় এক মাসের বেশি সময় ধরে বিশৃঙ্খলা চলছে বলে অভিযোগ।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিতরের ঘটনা হলেও শাসকদলের স্থানীয় কিছু নেতা গোটা ঘটনার পিছনে রয়েছেন বলেও অভিযোগ। আগের অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে এ বছর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ চতুর্থ বর্ষের ছাত্রদের কাছাকাছি ব্লকে প্রথম বর্ষের ছাত্রদের রাখার পরিকল্পনা করেছিলেন। কিন্তু সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের দাবিতে ছাত্রদের একাংশ ও তৃণমূলের স্থানীয় কয়েক জন নেতা ফ্লেক্স, ফেস্টুন টাঙিয়ে ক্যাম্পাসে ঢোকা বেরোনোর রাস্তা বন্ধ করে দেন।
এক অধ্যাপক বলেন, ‘অবস্থা এমন পর্যায়ে যায় যে পুলিশের সামনে কর্তৃপক্ষকে অন্যায্য দাবি মানার আশ্বাস দিতে হয়।’ কিন্তু সে অনুযায়ী চললে এ বারেও র্যাগিং রোখা যাবে না বলে নিশ্চিত কর্তৃপক্ষ।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালে কোভিড-পর্বে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ার সময়ে যে সব পড়ুয়াকে অনলাইনে ক্লাস শুরু করতে হয়েছিল, সেই অর্থে সেই সব পড়ুয়াই এ বার উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ফিজিক্যাল ক্লাস করতে পারার সম্ভাবনায় উৎসাহিত ছিলেন। কিন্তু বিধানচন্দ্র কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিভাগে ভর্তি হওয়া পড়ুয়াদের সেই আশা আপাতত পূরণ হচ্ছে না।