• আরজি কর ক্যাম্পাসই কি ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র হেড কোয়ার্টার? নানা জল্পনা রাজ্য জুড়ে
    হিন্দুস্তান টাইমস | ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • কানাঘুষো চলত গত কয়েক বছর ধরেই। এত দিনে যেন সেটাই 'আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি' পেল! নেপথ্যে আরজি করে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুন এবং তার জেরে জুনিয়র চিকিৎসকদের নাছোড় আন্দোলন। তাঁদের হার না মানা লড়াইয়ের জন্যই আজ রাজ্য তথা দেশজুড়ে পশ্চিমবঙ্গের সরকারি চিকিৎসা ব্যবস্থাপনায় 'উত্তরবঙ্গ লবি'র খবরদারি নিয়ে খোলাখুলি আলোচনা ও সমালোচনা শুরু হয়েছে।

    নানা মহলে দাবি করা হচ্ছে, গত প্রায় এক দশক ধরে সারা বাংলার সরকারি চিকিৎসা পরিষেবায় ছড়ি ঘুরিয়ে চলেছে এই উত্তরবঙ্গ লবি। আর জি কর কাণ্ডের জেরে সম্প্রতি যে তিন চিকিৎসক, অর্থাৎ - বীরূপাক্ষ বিশ্বাস, অভীক দে ও রঞ্জিত সাহার বিরুদ্ধে কলকাতার বউবাজার থানায় অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে, তাঁরা তিনজনই এই উত্তরবঙ্গ লবির সক্রিয় সদস্য। ভারতীয় ন্যায় সংহিতার ৩৫১ নম্বর ধারার অধীনে পুলিশ তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা রুজু করেছে। এমনকী, আর জি করের সদ্য প্রাক্তন অধ্যক্ষ ডা. সন্দীপ ঘোষও এই লবির সঙ্গেই যুক্ত বলে অভিযোগ।

    এই উত্তরবঙ্গ লবি আসলে কী?

    সূত্রের দাবি, এই লবির মধ্যে একদল চিকিৎসক ও কর্মী-আধিকারিক রয়েছেন। যাঁরা বিভিন্ন রাজ্য সরকারি হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে কর্মরত। অভিযোগ, আর জি করে তরুণী চিকিৎসক পড়ুয়ার ধর্ষণ ও খুনের পর থেকেই এঁরা সকলে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। এই ঘটনায় সংবাদের শিরোনাম থেকে সোশাল মিডিয়া পোস্ট, কোথায় কী লিখতে হবে, গত ৯ অগস্ট থেকে তার সবটাই নাকি নিয়ন্ত্রণ করেছে এই উত্তরবঙ্গ লবি।

    তবে, এই উত্তরবঙ্গ লবির সব সদস্যই যে আদতে উত্তরবঙ্গের মানুষ, বা তাঁরা উত্তরবঙ্গে পড়াশোনা করেছেন, এমনটা নয়। কিন্তু, এই লবির মাথায় যিনি আছেন, তিনি একজন অর্থোপেডিক সার্জেন। এবং সেই ব্যক্তি উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতাল থেকেই ডাক্তারি পাস করেছিলেন। বাকিরা সকলেই তাঁর অনুগত।

    উত্তরবঙ্গ লবির 'কর্মপদ্ধতি'!

    স্বাস্থ্য দফতরের একাধিক কর্তাব্যক্তি থেকে চিকিৎসকের দাবি, উত্তরবঙ্গ লবি এতটাই ক্ষমতাশালী যে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন কার্যত এই লবিই পরিচালনা ও নিয়ন্ত্রণ করে। এমনকী, লবির অনুগতদের নিয়মিত 'পুরস্কৃত'ও করা হয়। আর যাঁরা অনুগত নন, তাঁদের 'শাস্তি' হিসাবে কোথায় পোস্টিং দেওয়া হবে, বা অন্য কী ব্যবস্থা নেওয়া হবে, তাও এই লবিই ঠিক করে দেয়।

    অভিযোগ, ইদানীংকালে রাজ্যের স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে যত বিতর্কিত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে, তার সবেতেই উত্তরবঙ্গ লবির অবদান রয়েছে। এমনকী, এই লবির বদান্যতাতেই ডা. সন্দীপ ঘোষ একাধিকবার বদলি হয়েও আবার নিজের ঘাঁটি আরজি করে ফিরে এসেছেন।

    ৯ অগস্টের ঘটনার পর যে বীরূপাক্ষ ও অভীকদের বিরুদ্ধে ঘটনাস্থলে ঢুকে প্রমাণ নষ্টের অভিযোগ উঠেছে, তাঁরা কেউই আরজি করের সঙ্গে সরাসরি যুক্ত নন। সূত্রের দাবি, স্রেফ ক্ষমতাশালী 'উত্তরবঙ্গ লবির লোক' হওয়াতেই তাঁরা অনায়াসে ঘটনাস্থলে পৌঁছে গিয়েছিলেন। এমনকী, পুলিশের তরফেও তাঁদের আটকানো হয়নি!

    নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক, স্বাস্থ্য দফতরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, গত কয়েক বছর ধরে কলকাতার আরজি কর হাসপাতাল কার্যত উত্তরবঙ্গ লবির হেড কোয়ার্টারে পর্যবসিত হয়েছিল।
  • Link to this news (হিন্দুস্তান টাইমস)