• ময়ূরেশ্বরে ডাইনি সন্দেহে দুই মহিলাকে পিটিয়ে খুনে পুলিসের জালে আরও ৭
    বর্তমান | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: ময়ূরেশ্বরের হরিসড়া গ্রামে ডাইনি সন্দেহে দুই আদিবাসী মহিলাকে পিটিয়ে খুনের ঘটনায় রবিবার সকালে আরও সাতজনকে গ্রেপ্তার করল পুলিস। ধৃতদের মধ্যে একজন নাবালক হওয়ায় তাকে সিউড়ির জুভেনাইল জাস্টিস বোর্ডে পাঠানো হয়েছে। বাকিদের রামপুরহাট আদালতে তোলা হলে বিচারক ১৩ দিন জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন।  ধরপাকড়ের জেরে কার্যত পুরুষশূন্য হয়ে পড়েছে গোটা গ্রাম। থমথমে পরিবেশে গ্রামে ধর্মঘটের চেহারা নিয়েছে। এর আগেও ওই গ্রামে ডাইনি সন্দেহে এক আদিবাসী মহিলাকে একই কায়দায় মেরে ফেলা হয়েছিল। তাই প্রশাসনের উদ্যোগে গ্রামবাসীদের কুসংস্কার মুক্ত করতে লাগাতার প্রচারে নামা হবে বলে জানিয়েছেন জেলাশাসক বিধান রায়।

    উল্লেখ্য, গত রবিবার এই গ্রামে মাঝিহারামের নির্দেশে ডাইনি সন্দেহে লোদগি কিস্কু ও ডলি হাঁসদা নামে দুই আদিবাসী মহিলাকে বাড়ি থেকে টেনে বের করে হাত বেঁধে বিবস্ত্র করা হয়। তারপর পিটিয়ে, লাথি মেরে খুন করে কাঁদরের জলে ভাসিয়ে দেওয়া হয়। ভাইরাল হওয়া ভিডিও দেখে অভিযুক্তদের চিহ্নিত করার পর শনিবার ভোরে দু’টি দেহ উদ্ধার করে পুলিস। আগেই ১৫জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। শেষে মাঝিহারামের স্ত্রী সুরমিলা মার্ডি সহ সাতজনকে ধরা হয়। ঘটনায় এখনও পর্যন্ত ২২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।  বাকিদের খোঁজ চলছে বলে জানিয়েছে পুলিস। কাঁদরের জল থেকে দুই আদিবাসী মহিলার নগ্ন দেহ উদ্ধারের পর কেটে গিয়েছে ৪৮ ঘণ্টা। পুলিসি ধরপাকড়ের পরই পুরুষশুন্য হয়ে পড়ে গোটা গ্রাম। মহিলা বা বৃদ্ধবৃদ্ধা যাঁরা রয়েছেন, তাঁরাও মুখে কুলুপ এঁটেছেন। রাতেও পুলিস অভিযুক্তদের খোঁজে তল্লাশি চালাচ্ছ। 

    মৃতদের বাড়ির কাছাকাছি আইসিডিএস সেন্টারে পুলিস ক্যাম্প করা হয়েছে। যার জেরে বন্ধ হয়ে পড়েছে অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পরিষেবা। প্রাইমারি স্কুলেও উপস্থিতি হাতেগোনা। আইসিডিএস কেন্দ্রের কর্মী সুমি মুর্মু বলেন, আইসিডিএস কেন্দ্রে পুলিস ক্যাম্প হওয়ায় রান্নাবান্না হয়নি। গ্রামের তৃণমূল নেতা তথা পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যার স্বামী অসীম হাজরা বলেন, গোটা গ্রাম থমথমে। যাঁরা রয়েছেন তাঁরাও আতঙ্কে আছেন। পুলিস কড়া নজরদারির মধ্যে রেখেছে গোটা গ্রামকে।

    পার্শ্ববর্তী গ্রামের বাসিন্দারা বলেন, এবার ভিডিও ভাইরাল হওয়ায় সবাই জানতে পারল। এর আগেও তিনবার একই ঘটনা ঘটেছে। খুন করে ফেলে দেওয়া হয়েছিল। বছর দুয়েক আগেও এক যুবককে পিটিয়ে মারা হয়েছিল। মৃতদের পরিবারের লোকজন ভয়ে গ্রাম ছেড়ে অন্যত্র পালিয়ে গিয়েছে। তাঁরা বলেন, আদিবাসীদের বেশিরভাগ মানুষই এখনও আধুনিক শিক্ষা পুরোপুরি লাভ করতে পারছেন না। আবার অনেক শিক্ষিত মানুষও অন্ধবিশ্বাস ও কুংস্কারে আচ্ছন্ন। 

    জেলাশাসক বিধান রায় বলেন, কয়েক বছর আগেও ওই গ্রামে একই ঘটনা ঘটেছিল। বাসিন্দাদের কুসংস্কার-মুক্ত করতে লাগাতার প্রচারে নামা হবে। সেই সঙ্গে বিশিষ্টজনদেরও এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)