• চোরাই সামগ্রী হাতবদলের ‘স্বর্গরাজ্য’ হয়ে উঠছে নন্দকুমারের শ্রীধরপুর মোড়
    বর্তমান | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, তমলুক: নন্দকুমার থানার শ্রীধরপুর মোড় যেন চোরাই সামগ্রী হাতবদলের স্বর্গরাজ্য। সোনা, রুপো থেকে বাইক, চারচাকা, দামি ধাতু, এমনকী কেরোসিনও রাজ্যের যেকোনও প্রান্তে চুরির পর হাতবদলের জন্য পৌঁছে যাচ্ছে ৪১ নম্বর জাতীয় সড়কের শ্রীধরপুর মোড়ে। শুক্রবার শ্রীধরপুরে চোরাই সামগ্রী হাতবদলের সময় হাতেনাতে পুলিস ১১ কেজি ২১০গ্রাম রুপোর বাট, ২০২টি রুপোর নোয়া বা‌঩জেয়াপ্ত করেছে। পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুর ও হুগলির খানাকুল থানা এলাকার তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একইদিনে ১২ ব্যারেল ভর্তি ১৯২০ লিটার চোরাই কেরোসিন সমেত শ্রীধরপুরে আরও দু’জনকে গ্রেপ্তার করেছে ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ।

    হলদিয়া থেকে কোলাঘাট যাওয়ার জাতীয় সড়কে একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান শ্রীধরপুর। শুক্রবার সেখানেই দু’টি বাইকে তিনজন যুবক আসে। তাদের একটি ব্যাগের ভিতর ১১ কেজি রুপো, অন্য ব্যাগে ২০২টি রুপোর নোয়া ছিল। ওইসব সামগ্রী চোরাই বলে জেনেছে পুলিস। হাতবদলের মুখে আচমকা অভিযানে সেসব সামগ্রী বাজেয়াপ্ত করা হয়। দু’টি বাইকও বাজেয়াপ্ত করার পাশাপাশি পুলিস তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছে। তাদের মধ্যে দু’জনের বাড়ি দাসপুরের তারারপুর গ্রামে। এখন খেজুরি থানার অধীন উদাখালি বাজারে থাকত। তৃতীয় জনের বাড়ি খানাকুল গ্রামে। চোরাই রুপো শ্রীধরপুরে হাতবদলের জন্য আনা হয়েছিল।

    একই দিনে ডিস্ট্রিক্ট এনফোর্সমেন্ট ব্রাঞ্চ শ্রীধরপুর থেকে দু’জনকে চোরাই কেরোসিন সহ গ্রেপ্তার করেছে। একটি পিকআপ ভ্যান বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। নন্দকুমার থানার অন্তর্গত বাখরাবাদ এবং ইড়খা গ্রামে ধৃতদের বাড়ি। অন্য জেলাতেও চুরির সামগ্রী কোলাঘাট ও হলদিয়ার মাঝে শ্রীধরপুরে এনে হাতবদল হচ্ছে। এর আগেও অনেকবার চোরাই সামগ্রী সহ দুষ্কৃতীদের ধরপাকড় করেছে পুলিস। 

    আগে কাস্টমস কর্মী পরিচয়ে সস্তায় সোনা বিক্রির টোপ দিয়ে নন্দকুমারে স্বর্ণ ব্যবসায়ীকে ডেকে সাত লক্ষ টাকা ছিনতাই করার ঘটনা ঘটেছিল। তমলুক থানার সোনাপেত্যা গ্রামের স্বর্ণশিল্পী টাকা খোয়ানোর পাশাপাশি বেধড়ক মারও খেয়েছিলেন। তমলুক শহরে এক দুষ্কৃতী ওই স্বর্ণ ব্যবসায়ীর সঙ্গে আলাপ করে অল্প দামে সোনা বিক্রির টোপ দেয়। তারপর নন্দকুমারে চোরাই সোনা হাতবদলের নামে দুষ্কৃতীরা। বেধড়ক মারধর করে সাত লক্ষ টাকা কেড়ে নিয়েছিল। গত ২ আগস্ট চণ্ডীপুর থানার চাকনান গ্রামের এক প্রৌঢ়ার থেকে শ্রীধরপুর মোড়ে গয়না খুলে নেওয়া হয়েছিল। তারপর ঝোপের ভিতর থেকে তাঁর দেহ উদ্ধার হয়েছিল।

    হলদিয়া-কোলাঘাট জাতীয় সড়কে শ্রীধরপুর মোড় থেকেই দীঘাগামী জাতীয় সড়ক শুরু হয়েছে। আবার এখান থেকে নন্দকুমার বাজার এবং মহিষাদল যাওয়া হয়। নন্দকুমার থানা থেকে ১০০ মিটারে মধ্যে অবস্থিত এই মোড়ে গাঁজা, চরস, হেরোইনের অবাধ কারবার চলে। সমাজ বিরোধীদের আনাগোনা বেশি। বছরের পর বছর এখানেই চোরাই সামগ্রী হাতবদল হয়। থানার অদূরে এই এলাকা ক্রমশ দুষ্কৃতীদের ডেরা হয়ে উঠছে। নন্দকুমার থানার ওসি উজ্জ্বল নস্কর বলেন, রুপোর বাট ও নোয়া হাতবদলের সময় আমরা তিনজনকে গ্রেপ্তার করেছি। ধৃতদের পুলিস হেফাজতে নেওয়া হয়েছে। ওইসব জিনিস কোথা থেকে আনা হয়েছিল সেটা খুঁজে বের করা হবে।
  • Link to this news (বর্তমান)