• বন্যজন্তুর ভয়ে রাতে পুজো দেখার আনন্দ থেকে বঞ্চিত মাঝিয়ালি বস্তির বাসিন্দারা
    বর্তমান | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, ধূপগুড়ি: জঙ্গল সংলগ্ন নাথুয়ার মাঝিয়ালি বস্তি। সেই বস্তি সংলগ্ন নাথুয়া জঙ্গলের পাশ দিয়ে বয়ে চলা জলঢাকা নদী পার হলেই রামসাই ফরেস্ট। পুজো আসছে। প্রতি বছরের মতো এবছরও মাঝিয়ালি বস্তিতে সাজো-সাজো রব। পুজোর কয়েকটি দিন ভালোভাবে কাটানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন বাসিন্দারা। সারাবছর হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে পুজোর দিনে মায়ের দর্শন পেয়ে এখানকার দেহাতি মানুষগুলি আবেগে চোখে জল ধরে রাখতে পারেন না। কিন্তু আক্ষেপ একটাই, বস্তিবাসী হওয়া।  পুজোর সময় গভীর  রাত পর্যন্ত যখন চারদিকে আনন্দ উল্লাস চলে, তখন তাঁরা এই আনন্দ থেকে বঞ্চিত থাকেন। রাতের আনন্দে এখানকার কেউই কার্যত শামিল হতে পারেন না। পথে হাতির ভয়! যে কোনও সময় চা বাগান থেকে বেরিয়ে আসতে পারে চিতাবাঘ। তাই সূর্য ডোবার আগেই বিকেল বিকেলেই ঠাকুর দেখা সাঙ্গ করে তাঁদেরকে বস্তিতে ফিরতে হয়। 

    শুধু তাঁরাই নয়, বন্যজন্তুর ভয়ে দিনের আলোতে মায়ের দর্শন সেরে ঘরে ফিরতে হয় নাথুয়ার নিউদিঘা, ধুমপাড়া, খয়েরকাটা সহ বিস্তীর্ণ জঙ্গল এলাকার বাসিন্দাদের। আশপাশে এক দুটি ক্লাবের উদ্যোগে দুর্গাপুজো হলেও সন্ধ্যার পর সেখানেও শুনশান হয়ে যায়। আওয়াজ আর আলো দেখে জঙ্গল থেকে হাতির দল ছুটে আসার অনেক নজির এলাকায় রয়েছে। এবছর নাথুয়া বাজারে বেশ কয়েকটি ক্লাবের উদ্যোগে বিগ বাজেটের পুজো হবে। তার মধ্যে রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম আশ্রমপাড়া দুর্গাপুজো কমিটির তরফে মায়াপুরের ইস্কন মন্দিরের আদলে প্যান্ডেল তৈরির কাজ চলছে। আলোর রঙে রঙিন হবে নাথুয়া বাজার। 

    মাঝিয়ালি বস্তিতেও আনন্দের ঢেউ। প্রাথমিক স্কুলের গন্ডি পার হওয়া কিশোর টুবাই মুন্ডা, রভীন মুর্মুর মুখে চওড়া হাসি। তারা জানায়, সামনের হাটে নতুন জামাকাপড় কিনতে যাবে। তারপর মায়ের হাত ধরে নাথুয়াতে ঠাকুর দেখতে যাবে। এলাকার বাসিন্দা মালতী রাভা, ইন্দ্রজিৎ রায় বলেন, জঙ্গল লাগোয়া আমাদের বস্তি। রাতের বেলায় যেকোনও সময় বন্যজন্তু বেরিয়ে আসে। ভয় বেশি হাতি আর চিতাবাঘের। তাই সতর্কতার সঙ্গেই আমরা উৎসবে মেতে উঠি। পরিবেশ পরিস্থিতির কারণে আমরা রাত্রিকালীন উৎসবের আনন্দ থেকে বঞ্চিত হই। 

    (নাথুয়ার মাঝিয়ালি বস্তি। - নিজস্ব চিত্র।)
  • Link to this news (বর্তমান)