এই সময়: নবান্নের পরে শনিবার রাতে কালীঘাটে রাজ্য সরকারের সঙ্গে আন্দোলনরত জুনিয়র ডাক্তারদের বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরেও জট কাটাতে বৈঠকে আগ্রহী রাজ্য প্রশাসন। তবে আন্দোলনকারীরা আগ্রহ প্রকাশ করলে তবেই সেই বৈঠক সম্ভব বলে রবিবার বার্তা দিলেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য। আগামিকাল, মঙ্গলবার আবার সুপ্রিম কোর্টে আরজি কর সংক্রান্ত মামলাটি শুনানির জন্য উঠবে।তার আগে গত মঙ্গলবার বিকেল ৫টার মধ্যে আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তারদের কাজে ফেরার ডেডলাইন দিয়েছিল শীর্ষ আদালত। কিন্তু রাজ্য-জুনিয়র ডাক্তারদের মধ্যে বৈঠকের জন্য একাধিক বার তোড়জোড় হলেও তা রবিবার পর্যন্ত সম্ভব হয়নি। এই প্রেক্ষাপটে রবিবার চন্দ্রিমা বলেন, 'একটা ন্যারেটিভ তৈরি করার চেষ্টা হচ্ছে যে, তাঁরা যখন চাইবেন তখনই সরকার আলোচনায় বসবে। সেটা না হলেই সরকারের কোর্টে বল ঠেলা হচ্ছে। এর পর চিকিৎসকদের তরফে যদি আবেদন আসে তখন দেখা যাবে।'
শনিবার কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাসভবনে বৈঠকের জন্য রওনা হওয়ার আগে কর্মবিরতি প্রত্যাহারের ইস্যুতে আন্দোলনকারীদের মধ্যে মতভেদ ছিল বলে এ দিন দাবি করেছেন রাজ্যসভায় তৃণমূলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ। নিজের দাবির সপক্ষে স্বাস্থ্য ভবনের সামনে আন্দোলনকারীদের ধর্নামঞ্চে শনিবার হওয়া তাঁদের জেনারেল বডি (জিবি) মিটিংয়ের আলোচনার একটি নির্দিষ্ট অংশের অডিয়ো ক্লিপ (সত্যতা যাচাই করেনি 'এই সময়') সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করেছেন কুণাল।
তাঁর দাবি, 'এতে স্পষ্ট, একাংশ সমাধান চায়, একাংশ চায় না।' এই বৈঠকও লাইভ হলে জনগণের বুঝতে সুবিধে হতো বলে মনে করেন কুণাল। যদিও কুণালের দাবিকে নস্যাৎ করে দিয়েছেন আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদেরই অন্যতম নেতা সৌম্যদীপ রায় বলেন, 'জিবি-তে নানা জনের থেকে বিভিন্ন মতামত উঠে আসে। সেই সব মতগুলোর সব ক'টি আলোচনার পরেই জিবি একটা সিদ্ধান্তে আসে ঐকমত্যের ভিত্তিতে।
সেখানকার নানা মত উঠে আসার একটা খণ্ডিত অংশ সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রকাশ করে যদি কেউ দাবি করেন যে, আন্দোলনকারীদের মধ্যে মতভেদ আছে, তা হলে সম্ভবত তিনি এই আন্দোলনকে ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্য নিয়েই এমন মন্তব্য করেছেন।' এ দিন ফেসবুকে কুণাল অবশ্য আরও লেখেন, 'মুখ্যমন্ত্রী যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন, তা যথেষ্ট ইতিবাচক। শনিবার আন্দোলনকারীরা যতটা সময় নষ্ট করালেন নিজেদের জেদে, মুখ্যমন্ত্রীর করজোড় অনুরোধেও সাড়া দিলেন না, সে সব থেকে বেরিয়ে তাঁরা কাজে ফিরুন, আন্দোলন চলুক বিকল্প পদ্ধতিতে।'
গত সপ্তাহে নবান্নে বৈঠক ভেস্তে যাওয়ার পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও সাংবাদিক বৈঠক করে বলেছিলেন, আন্দোলনকারীদের মধ্যে কয়েকজন মিটিং হোক এটা চেয়েছিলেন। কিন্তু বাইরে থেকে ফোনে কয়েকজন নির্দেশ দেওয়ার পরে তা ভেস্তে যায়। কুণাল অবশ্য এ দিন সরাসরি আন্দোলনকারীদের মঞ্চেই বিভাজনের ইঙ্গিত দিয়েছেন।
অডিয়ো ক্লিপটি ফেসবুকে পোস্ট করে তিনি লেখেন, 'মনে রাখুন, এই অডিয়ো টেলিফোনে কারও কথোপকথন নয়। মঞ্চে বৈঠকের। মুখ্যমন্ত্রীর বাড়ি যাওয়ার আগে শনিবার সন্ধেয় ধর্নামঞ্চে জুনিয়র ডাক্তারদের নিজস্ব বৈঠকের অংশ। আপাতত এই অংশ দিলাম।' পরে কুণাল বলেন, 'আন্দোলনকারীদের একাংশই জটিলতা জিইয়ে রাখতে চাইছেন।'
গত বৃহস্পতিবার নবান্নের পর শনিবার কালীঘাটেও লাইভ স্ট্রিমিং শর্তের জটে বৈঠক না-হওয়ায়, ফের কবে সরকার-আন্দোলনকারী বৈঠক হতে পারে, তা নিয়ে সংশয় তৈরি হয়েছে। নবান্ন সূত্রে খবর, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শীর্ষ প্রশাসনিক কর্তাদের বলেছেন, জুনিয়র ডাক্তাররা চাইলে বৈঠক আয়োজনে যেন তৎপরতা দেখায় সরকারও।
চন্দ্রিমাও এ দিন বলেন, 'দু'দিন বৈঠক ভেস্তে গিয়েছে মানে সব শেষ, এমনটা ভাবার কোনও কারণ নেই। আন্দোলনকারীরা সদিচ্ছা নিয়ে খোলা মনে ফের যদি বৈঠকের আগ্রহ দেখান, সরকারের কোনও আপত্তি নেই।' যদিও এ দিন সন্ধেয় আন্দোলনকারীদের তরফে সরকারের কাছে বৈঠকের ইচ্ছাপ্রকাশ করে চিঠি দেওয়া নিয়ে কোনও চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হয়নি বলে জানা গিয়েছে।
এই মুহূর্তে সকলেই চেয়ে আছেন কাল সু্প্রিম কোর্টের শুনানির দিকে। জুনিয়র ডাক্তাররা সেই শুনানির জন্য আইনজীবী বদলেছেন বলে খবর রবিবার। আন্দোলনকারীদের অন্যতম অনিকেত মাহাতো এ দিন বলেন, 'মঙ্গলবার গীতা লুথরার বদলে আইনজীবী হিসেবে সু্প্রিম কোর্টে আমাদের (জুনিয়র ডক্টর্স ফ্রন্ট) হয়ে সওয়াল করতে দেখা যাবে ইন্দিরা জয়সিংকে।' দশটি চিকিৎসক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ 'জয়েন্ট প্ল্যাটফর্ম অফ ডক্টরস ওয়েস্ট বেঙ্গল'-এর হয়ে কাল সওয়াল করবেন আইনজীবী করুণা নন্দী এবং সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়।
শীর্ষ আদালত তার দ্বিতীয় শুনানিতেই ৯ সেপ্টেম্বর জানিয়েছিল, চিকিৎসকরা যদি ১০ তারিখ বিকেল ৫টার মধ্যে কাজে যোগ দেন, তা হলে রাজ্য সরকার তাঁদের বিরুদ্ধে কোনও শাস্তিমূলক পদক্ষেপ করবে না। কিন্তু সময়সীমা পেরনোর পরেও জুনিয়র ডাক্তাররা কাজে যোগ না-দিলেও অবশ্য সরকার এখনও নমনীয়ই রয়েছে। আলাপ-আলোচনার মধ্য দিয়ে যে সরকার চিকিৎসকদের কাজে ফেরাতে আগ্রহী, সেই মনোভাব ইতিমধ্যেই প্রতিষ্ঠিত।
আন্দোলনকারী জুনিয়র ডাক্তাররাও বৈঠকের জন্য যে আগ্রহী, আদালতে সেটা প্রতিষ্ঠা করতে তাঁরাও মরিয়া। তাঁরা জানাচ্ছেন, আজ, সোমবারই হয়তো তাঁরা মুখ্যসচিব ও মুখ্যমন্ত্রীকে চিঠি দেবেন পরবর্তী বৈঠকে যোগদান দেওয়ার ইচ্ছাপ্রকাশ করে। এবং সেখানে কোনও শর্ত রাখা হবে না, খোলামনেই আলোচনার প্রস্তাব রাখা হতে পারে সেই চিঠিতে।
নবান্ন সূত্রে খবর, এমন চিঠি জুনিয়র ডাক্তারদের তরফে এলে সরকারি তরফেও সদর্থক প্রতিক্রিয়া দেখানো হবে। আন্দোলনকারীদের বক্তব্য, 'আবার বৈঠকের প্রস্তাব রাজ্য সরকারকে দেওয়া হবে কি না, হলে কী ভাবে, সেটা আমরা আজ, সোমবার বৈঠক করে জানিয়ে দেবো।'