• অধ্যক্ষের তরফে চিঠি কেন নিলেন ওসি, প্রশ্ন কংগ্রেসের
    আনন্দবাজার | ১৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • চিকিৎসক-ছাত্রীর ধর্ষণ ও খুনের ঘটনার পরে আর জির কর মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপ ঘোষের সঙ্গে টালা থানার তখনকার দায়িত্বে থাকা ওসি অভিজিৎ মণ্ডলের একাধিক বার ফোনে যোগাযোগের কথা আদালতে জানিয়েছে তদন্তকারী সংস্থা সিবিআই। ঘটনার পরে স্বাস্থ্য এবং পুলিশের ওই দুই আধিকারিকের আরও ‘সমন্বয়ে’র অভিযোগও এখন সামনে আসছে। খুন ও ধর্ষণের ঘটনার সূত্রে দু’জনেই আপাতত সিবিআইয়ের হেফাজতে।

    আর জি করে চিকিৎসক-ছাত্রীর দেহ উদ্ধার হয়েছিল গত ৯ অগস্ট সকালে। সন্ধ্যায় ময়না তদন্তের পরে দেহ নিয়ে বেরোনোর সময়ে গাড়ি আটকে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন মীনাক্ষী মুখোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে সিপিএমের যুব সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। পুলিশ বিক্ষোভ সরিয়ে মৃতদেহ নিয়ে বেরিয়ে গিয়েছিল, রাতেই পুলিশ পাহারায় দাহ করা হয়েছিল পানিহাটি শ্মশানে। সে দিন পুলিশের ভূমিকা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ করেছেন নিহত তরুণীর বাবা-মা। সৎকারের পরের দিন, অর্থাৎ ১০ অগস্ট আর জি করের তৎকালীন অধ্যক্ষ সন্দীপের সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিল কংগ্রেসের একটি প্রতিনিধিদল। যে হেতু হাসপাতাল তথা মেডিক্যাল কলেজের মধ্যে এমন ঘটনা, তাই জড়িত সকলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া এবং তদন্তে পূর্ণ সহযোগিতা করার দাবি সংবলিত চিঠি ছিল তাঁদের সঙ্গে। হাসপাতালের বাইরে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি বেধে গিয়েছিল কংগ্রেস নেতা-কর্মীদের। তার পরে মূল ফটকে অধ্যক্ষের তরফে সই করে কংগ্রেসের দাবিপত্র নিয়ে নিয়েছিলেন টালা থানার ওসি অভিজিৎ। কংগ্রেসের প্রশ্ন, অধ্যক্ষকে লেখা চিঠি হাসপাতালের কারও বদলে ওসি নিতে গেলেন কেন? ঘটনা ‘ধামাচাপা’ দেওয়ার চেষ্টায় তাঁরা একসঙ্গে শামিল ছিলেন বলেই কি এমন পদক্ষেপ?

    ঘটনার পরে অধ্যক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ ও ব্যবস্থার দাবি জানিয়ে ওই চিঠি লেখা হয়েছিল উত্তর কলকাতা জেলা কংগ্রেসের তরফে। উত্তর কলকাতার জেলা সভাপতি রানা রায়চৌধুরী ছাড়াও চিঠিতে সই ছিল কংগ্রেস নেতা সুমন রায়চৌধুরী ও আশুতোষ চট্টোপাধ্যায়ের। জেলা সভাপতির অভিযোগ, টালা থানার ওসি দীর্ঘ দিন যাবৎ আর জি করে চলা ‘সিন্ডিকেটে’র মাথা সন্দীপকে আড়াল করার দায়ভার নিয়ে নিয়েছিলেন। তিনি প্রথম থেকেই এই ‘ঘৃণ্য চক্রে’র অংশ। সুমনের প্রশ্ন, ‘‘সে দিন রানাদা, আশুতোষ, শাহিনা জাভেদ-সহ আমাদের বাধা দেওয়া হয়েছিল। এখন প্রশ্ন উঠছে, এক জন থানার আধিকারিক কী কারণে অধ্যক্ষের হয়ে চিঠি গ্রহণ করলেন? কোন স্বার্থে ওসি অধ্যক্ষকে লুকিয়ে রাখলেন? সে দিন অধ্যক্ষের কার্যালয় অবধি অন্তত আমাদের দু’জনকেও যেতে দেওয়া হল না কেন? আমরা তো কেউ অকুস্থলে যেতে চাইনি!’’

    সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তীরও মত, ‘‘ছাত্র আন্দোলন করার সময়ে বা পরেও বহু বার বিশ্ববিদ্যালয়ে, কলেজে দাবি জানাতে আমরা গিয়েছি। উপাচার্য বা অধ্যক্ষ দেখা না-করলে প্রতিষ্ঠানের কোনও আধিকারিক চিঠি নিয়েছেন। কিন্তু পুলিশ অধ্যক্ষের হয়ে চিঠি নিচ্ছে, এটা অস্বাভাবিক!’’ পুলিশ সূত্রে অবশ্য বলা হচ্ছে, বিশেষ পরিস্থিতিতে এমন হয়ে থাকবে হয়তো। তবে তদন্ত এবং বিচার প্রক্রিয়া চলাকালীন কেউ মুখ খুলতে রাজি নন। আর ওসি-কে সিবিআই গ্রেফতার করার পরেই তৃণমূল কংগ্রেসের তরফে বলা হয়েছে, কারও বিরুদ্ধে প্রমাণ লোপাটের তথ্য থাকলে তাঁকেই জবাব দিতে হবে।

    আর জি করের ঘটনার প্রেক্ষিতে প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অধীর চৌধুরী রবিবার কলকাতায় দাবি করেছেন, তদন্তের স্বার্থে পুলিশ ও স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সরে দাঁড়ানো উচিত। দক্ষিণ কলকাতা জেলা কংগ্রেসের আয়োজনে প্রতিবাদ-সভায় গিয়ে খিদিরপুরে তাঁর বক্তব্য, ‘‘ধর্ষণ ও খুনের পাশাপাশি স্বাস্থ্য-দুর্নীতির তদন্ত চলছে। একটা পুলিশ, একটা স্বাস্থ্য দফতর। নৈতিক কারণে তদন্ত শেষ না-হওয়া পর্যন্ত অন্তত ওই দুই দফতরের দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া উচিত মুখ্যমন্ত্রীর। খোকাবাবু আছেন, অন্য আরও নেতাও তো আছেন!’’
  • Link to this news (আনন্দবাজার)