শেখর চন্দ্র, আসানসোল: কোনও ব্রাহ্মণ বা পুরোহিতকে ডাকা হয় না। আদিবাসী ভক্তরা নিজেরাই পুজো করেন মা দুর্গার। ধামসা মাদল বাজিয়ে চারদিন ধরে কুলটির নিয়ামতপুরের আদিবাসী সমাজের দুর্গাপুজো চলে। আদিবাসী দেবতা মারাংবুরুর পুজো ঠিক যে নিয়মে হয় সেই নিয়মেই কুলটির আদিবাসী পাড়ায় (Durga Puja in Rural Bengal) পূজিত হন দেবী দুর্গা। এই পুজোয় অভিনব রীতি চালু রয়েছে। নবমীর দিন ভক্তরা মন্দিরের বাইরে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলেন। এদিন স্বামীরা হয়ে যান অসুরের রূপ ও স্ত্রী-রা হয়ে যান মা দুর্গা। শেষপর্যন্ত নারীশক্তির জয় হয়। আর এই অভিনব রীতির অংশ নিতে হাজির হন ভিন রাজ্যের পুণ্যার্থীরাও।
পুজোর প্রচলন করেছিলেন আদিবাসীদের ধর্মগুরু সিংরাই বাবা। তিন বছর আগে তিনি প্রয়াত হয়েছেন। শুধু দুর্গাপুজো নয়, কালী- সরস্বতী- লক্ষ্মী-সব দেবদেবীর মূর্তি পুজো হয়। এখানে আবার সিংরাই মারাণ্ডি বেঁচে থাকতে নিজেই নিজের মূর্তি গড়িয়েছিলেন। সেই মূর্তি তিনি নিজেই পুজো করতেন। আদিবাসী ভক্তরা এখনও পুজো করেন। কুলটির আদিবাসী সমাজের গুরু সিংরাই বাবা নিজে আশ্রম গড়ে চল্লিশ বছর ধরে হিন্দু দেবদেবীদের পুজোআচ্চা করে আসছেন। তাঁর হাত ধরে শুরু হওয়া এই পুজোর মধ্যে রয়েছে অভিনবত্ব। মা দুর্গার আটচালায় থাকে বিষ্ণু অবতার নরসিংহ। নরসিংহের মূর্তিটি থাকে কার্তিকের পাশেই। যা দেখতে ভিড় জমান ঝাড়খণ্ডের দুমকা, জামতাড়া, বীরভূম থেকে আসা আদিবাসীরা। ভক্তরা পুজোর ডালি নিয়ে আসেন ও নিজেরাই পুজো করেন।
বর্তমান আদিবাসী গুরু শ্যামাপদ মুর্মু বলেন,”প্রয়াত বাবা সিংরাই মারান্ডি এই প্রথা চালু করে গিয়েছিলেন। তিনি জানিয়ে গিয়েছেন, মা দুর্গা ও অসুরের লড়াইয়ে হার জিতের বিচার করেন ওই নৃসিংহ অবতার। দুর্গাপুজো প্রচলনের আগে তিনি এরকমই এক প্রতিমার স্বপ্ন দেখেছিলেন তাই সেভাবেই প্রতিমা তৈরি করিয়েছেন। নবমীর দিন ভক্তরা মন্দিরের বাইরে যুদ্ধ-যুদ্ধ খেলেন। এদিন স্বামীরা হয়ে যান অসুরের রূপ ও স্ত্রীরা হয়ে যান মা দুর্গার রূপ। শেষ পর্যন্ত নারীশক্তির জয় হয়।”
এই মন্দিরে সারা বছর মা দুর্গা থাকেন। প্রয়াত সিংরাই বাবার মেয়ে পার্বতী মারাণ্ডি ও জামাই মানিক হেমব্রম বলেন, “পঞ্চমীর দিন পুরনো মূর্তি বিসর্জন করে নতুন মূর্তি বসানো হয়। এখানে তাই দশমীর বিষাদ নেই। কারণ মা দুর্গাকে রেখে দেওয়া হয় এক বছর। পুজোর চারটে দিন নিজেদের মতো মন্ত্র উচ্চারণ করে, মাদল বাজিয়ে, সারেঙ্গিতে সুর তুলে মজে থাকি আমরা। এই পুজো ও পুজোর রীতি রেওয়াজ সম্পূর্ণ ভিন্ন হওয়ায় বাইরের মানুষও এখানে পুজো দেখতে আসেন।”