এই সময়, কাকদ্বীপ: গভীর সমুদ্র থেকে ফেরার পথে বৃহস্পতিবারই যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছিল তিনটি ট্রলারের। যে ট্রলারে ছিলেন ৪৯ জন মৎস্যজীবী। উপকূলরক্ষী বাহিনীর লাগাতার তল্লাশিতে অবশেষে দু’টি ট্রলারের খোঁজ মিলেছে। উদ্ধার করা গিয়েছে ৩৩ জন মৎস্যজীবীকে। সকলেই সুস্থ আছেন। ঘাটের দিকে ফিরিয়ে আনা হচ্ছে বিকল হয়ে পড়া দু’টি ট্রলার।কিন্তু এখনও তৃতীয় ট্রলারের খোঁজ নেই। খোঁজ নেই সেই ট্রলারের ১৬ জন মৎস্যজীবীর। চিন্তায় ঘুম উড়ছে পরিবার-পরিজনের। তৃতীয় ট্রলারের খোঁজে আকাশপথে হেলিকপ্টারে তল্লাশি জারি রেখেছে উপকূলরক্ষী বাহিনী। রবিবার পর্যন্ত খোঁজ না পাওয়ায় সোমবার সকাল থেকেই বঙ্গোপসাগরে তল্লাশি অভিযান শুরু করে উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি জাহাজ এবং মৎস্যজীবী সংগঠনের বেশ কয়েকটি ট্রলার।
এ দিন বঙ্গোপসাগরের গভীরে নিখোঁজ ট্রলার এফবি বাবা নীলকন্ঠ, এফবি শ্রীহরি এবং এফবি মা রিয়ার খোঁজে উপকূলরক্ষী বাহিনীর একটি হেলিকপ্টারকেও তল্লাশি অভিযানে নামানো হয়। বিকেল নাগাদ খোঁজ মেলে দু’টি ট্রলারের। এফবি শ্রী হরি এবং এফবি মা রিয়া ট্রলারের লোকেশান জিপিআরএসের মাধ্যমে ট্র্যাক করতে পারে উপকূলরক্ষী বাহিনী। ট্রলার দু’টির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যাওয়ায় মৎস্যজীবীদের নিয়ে সমুদ্রে ভাসছিল।
উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ গিয়ে ট্রলার দু’টিকে টেনে উপকূলের দিকে এগিয়ে দিলে মৎস্যজীবী সংগঠনের পাঠানো আরও আটটি ট্রলার বাকি পথটা টেনে আনে। দুই ট্রলারের ৩৩ জন মৎস্যজীবীই সুস্থ রয়েছেন। গত ৭ তারিখ কাকদ্বীপ মৎস্য বন্দর থেকে এফবি বাবা নীলকন্ঠ এবং ডায়মন্ড হারবার মৎস্য বন্দর থেকে এফবি শ্রীহরি ও এফবি মা রিয়া নিয়ে মৎস্যজীবীরা গভীর সমুদ্রে মাছ ধরতে গিয়েছিলেন।
কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার সতর্কবার্তা পেয়ে ৯ তারিখ তড়িঘড়ি গভীর সমুদ্র থেকে উপকূলে ফিরছিল ট্রলারগুলি। মাঝপথে বাজ পড়ে ট্রলার তিনটির ওয়্যারলেস নষ্ট হয়ে যায়। পাশাপাশি ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়। ১২ তারিখ থেকেই খোঁজ ছিল না তিনটি ট্রলারের। অবশেষে দু’টির খোঁজ মিলল। তবে এখনও খোঁজ মেলেনি এফবি বাবা নীলকন্ঠ ট্রলারের। এই ট্রলারে ১৬ জন মৎস্যজীবী রয়েছেন। ট্রলারটির খোঁজে উপকূলরক্ষী বাহিনীর জাহাজ এবং হেলিকপ্টার তল্লাশি অভিযান জারি রাখবে বলে জানা গিয়েছে।
কাকদ্বীপ ফিশারম্যান ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সম্পাদক বিজন মাইতি বলেন, ‘উপরওয়ালার কৃপায় দু’টি ট্রলার এবং ৩৩ জন মৎস্যজীবীকে উদ্ধার করা গিয়েছে। এখন আমাদের লক্ষ্য নিখোঁজ আর একটি ট্রলার এবং সেই ট্রলারে থাকা ১৬ জন মৎস্যজীবীকে দ্রুত উদ্ধার করে ফিরিয়ে আনা। কিন্তু সমুদ্র এখনও উত্তাল থাকায় তল্লাশি অভিযানে ব্যাঘাত ঘটছে।’
উল্লেখ্য, দুর্যোগের জেরে নদী ও সমুদ্র উত্তাল থাকায় এ দিনও মৎস্যজীবীদের মাছ ধরার উপরে নিষেধাজ্ঞা ছিল। সকাল থেকে ঝড়ের গতিবেগ বেড়েছে। নাগাড়ে চলছে বৃষ্টি। এরই মধ্যেই সোমবার থেকে শুরু হয়েছে পূর্ণিমার ভরা কটাল। এটি ষাঁড়াষাঁড়ির কটাল। অন্যান্য কটালের থেকে নদী এবং সমুদ্রের জলস্তর বাড়বে বেশ কয়েক গুণ। টানা বৃষ্টিতে সুন্দরবনের বেহাল বাঁধের মাটি নরম হয়ে গিয়েছে।
নামখানা, ফ্রেজারগঞ্জ, পাথরপ্রতিমা এবং মৌসুনি দ্বীপের একাধিক বেহাল মাটির বাঁধে ধস ও ফাটল দেখা দিয়েছে। ফলে নতুন করে প্লাবনের আশঙ্কায় আতঙ্কিত উপকূল এলাকার বাসিন্দারা। স্থানীয় পঞ্চায়েত, ব্লক প্রশাসনকে সঙ্গে নিয়ে জরুরি ভিত্তিতে বেহাল মাটির বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করে দিয়েছে সেচ দপ্তর।
পরিস্থিতির উপর নজর রাখতে কাকদ্বীপ এসডিও অফিসে কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। বিপর্যয় মোকাবিলার সঙ্গে যুক্ত সব বিভাগের কর্মীদের ছুটি বাতিল করা হয়েছে। তবে দুপুরের পর থেকে আবহাওয়া ভালো হতে শুরু করে। রোদের মুখ দেখা যায়।