• কিষেণজি নিকেশ থেকে কামদুনি-আরজি কর, IIT-র দুর্ধর্ষ ছাত্র, দুঁদে অফিসার-বিতর্কিতও
    আজ তক | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনার পর থেকেই কলকাতার পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির নিশানায় তো ছিলেনই, এমনকী তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ শুখেন্দু শেখর রায় তাঁর গ্রেফতারির দাবি করে বসেছিলেন। পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগ দাবি করে লালবাজার অভিযান করেন জুনিয়র চিকিৎসকরা। সেখানে পুলিশ কমিশনারের পদত্যাগের জন্য স্মারকলিপি তাঁরা বিনীত গোয়েলের হাতেই তুলে দেন। অবশেষে সেই বিনীত গোয়েলকে কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে সরাতে রাজি হয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। 

    মুখ্যমন্ত্রীর কালীঘাটের বাসভবনে সোমবার আন্দোলনকারীদের সঙ্গে বৈঠক করেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আর সেখান থেকেই ছাত্রদের একের পর এক দাবি মেনে নেয় সরকার। কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে সরিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছিল জুনিয়র ডাক্তাররা। তাঁদের সেই দাবি মেনে নেওয়া হল। মঙ্গলবার বিকেল চারটে পর্যন্ত কলকাতার পুলিশ কমিশনার পদে থাকবেন বিনীত। তারপরই নতুন পুলিশ কমিশনার পাবে কলকাতা। 

     

    ১৯৯৪-ব্যাচের আইপিএস অফিসার বিনীত গোয়াল, ১৯৮৮-ব্যাচের অফিসার সৌমেন মিত্রের জায়গায় কলকাতার নতুন পুলিশ কমিশনার হিসেবে মনোনীত হয়েছিলেন ২০২১ সালের ৩১ ডিসেম্বর। এই দায়িত্ব নেওয়ার আগে বেঙ্গল পুলিশের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (বিশেষ টাস্ক ফোর্স) হিসাবে নিযুক্ত ছিলেন তিনি।  আইআইটি খড়গপুর থেকে পাসআউট, গোয়েল এর আগে কলকাতা পুলিশে ডেপুটি কমিশনার (পূর্ব শহরতলির বিভাগ), ডেপুটি কমিশনার (বিশেষ টাস্ক ফোর্স), ডেপুটি কমিশনার (হেডকোয়ার্টার), যুগ্ম কমিশনার (ট্রাফিক) এবং অতিরিক্ত কমিশনারের পদে দায়িত্ব সামলেছিলেন। বিনীত গোয়েল ছিলেন ৪৪তম কলকাতা পুলিশ কমিশনার। 

     

     

    কলকাতার পুলিশ কমিশনার হওয়ার আগে গোয়েল বেঙ্গল পুলিশের বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পদে কাজ করেছিলেন।  যেমন পুরুলিয়ার পুলিশ সুপার, ডেপুটি ইন্সপেক্টর-জেনারেল অফ পুলিশ (মেদিনীপুর রেঞ্জ), ইন্সপেক্টর জেনারেল অফ পুলিশ (সিআইডি), আসানসোল পুলিশ কমিশনারেটের কমিশনার এবং মুখ্যমন্ত্রীর নিরাপত্তার  সিকিউরিটি ডিরেক্টরেটের ডিরেক্টর — ইনচার্জ। বিনীত গোয়েল  রাষ্ট্রপতির বীরত্ব পদক প্রাপক, যেটি তিনি ডিআইজি (মেদিনীপুর রেঞ্জ) হিসাবে ২০১১ সালে মাওবাদী নেতা কিষেনজিকে ধরা ও মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার অপারেশনে নেতৃত্ব দেওয়ার জন্য পেয়েছিলেন। 

    জানা যায়, ব্যক্তিগতভাবে বিনীত গোয়েল একজন ক্রীড়া উৎসহী, লন টেনিস খেলতেন।  ম্যারাথন দৌড়ের প্রতিও তাঁর বিশেষ আগ্রহ রয়েছে। ১৯৯৪ ব্যাচের আইপিএস অফিসার, গোয়েল পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের  ঘনিষ্ঠ বলে পরিচিত। তিনি আইআইটি খড়গপুর এবং আইআইটি কানপুরের প্রাক্তন ছাত্র । বিনীত গোয়েল  দুবার বীরত্বের জন্য পুলিশ পদক পেয়েছেন। পাশাপাশি  অসামান্য পরিষেবার জন্য মুখ্যমন্ত্রীর পদক পেয়েছেন।

     

    তবে জুন মাসে, রিপোর্ট প্রকাশিত হয়েছিল যে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক পশ্চিমবঙ্গের রাজ্যপালের  অফিসের সমালোচনা করার অভিযোগে বিনীত গোয়াল এবং একজন ডিসিপির বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা শুরু করেছে। তবে এখন পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রীর পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। কামদুনি কাণ্ডেও বিনীত গোয়েলের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। বিরোধীদের অভিযোগ, কামদুনি কাণ্ডের সময়েও একই ঘটনা ঘটেছিল। বর্তমানে যিনি কলকাতা পুলিশের কমিশনার, অর্থাৎ বিনীত গোয়েল, তখন তিনি ছিলেন সিআইডির দায়িত্বে। তিনি দায়িত্ব নিয়ে তথ্য-প্রমাণ নষ্টের কাজ করেছিলেন। সেই কারণেই দোষীরা ছাড়া পেয়ে গেছে সে সময়ে। এবার আরজি করে তরুণী চিকিৎসক খুন ও ধর্ষণের ঘটনায় বিভিন্ন মহল থেকে বিনীত গোয়েলের ভূমিকার সমালোচনা করা হচ্ছে। আর তার জেরেই সরতে হচ্ছে কলকাতার ৪৪ তম পুলিশ কমিশনারকে। 
     
  • Link to this news (আজ তক)