• ‘দক্ষিণের হাওয়া’ থিমে এবার নজর কাড়তে তৈরি সানঘাটাপাড়া সর্বজনীন
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • বলরাম দত্তবণিক, রামপুরহাট: ‘পূজিব মাগো তোমায় আজি, দক্ষিণের মন্দিরে’। প্রাচীন শিল্পকলার অন্যতম তীর্থস্থান দক্ষিণ ভারত। সেখানকার মন্দিরে রয়েছে প্রাচীন শিল্পকলার ছাপ। দক্ষিণ ভারতের মন্দিরগুলি ভারতবর্ষের প্রাচীন শিল্পকলার অন্যতম পিঠস্থান বলে পরিচিত। তাই ৭১তম বর্ষে রামপুরহাট শহরের সানাঘাটপাড়া সর্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গাপুজো কমিটি মণ্ডপসজ্জার মাধ্যমে এক টুকরো দক্ষিণ ভারত তুলে ধরতে চলছে। তাদের এবারের থিম ‘দক্ষিণের হাওয়া’। লঙ্কা, লেবু নয়, মণ্ডপের প্রবেশদ্বারে ঝোলানো থাকবে ‘নজরত’ অর্থাৎ রাবণের মুখ। দক্ষিণ ভারতের প্রতিটি বাড়ির সামনেই তা ঝোলানো থাকে। এবার দুর্গাপুজোর থিমের লড়াইয়ে এই পুজো কমিটি অন্যতম প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠতে চলেছে সেকথা বারবার বুঝিয়ে দিচ্ছেন উদ্যোক্তারা।

    শহরের পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম সানঘাটাপাড়া সর্বজনীন শ্রীশ্রী দুর্গাপুজো কমিটি। প্রতিবছর তারা ছিমছাম পুজোর মাধ্যমে সামাজিক নানা বার্তা দেয়। এতদিন যারা পুজো চালিয়ে এসেছেন, তাঁদের অধিকাংশই আজ প্রবীণ। তাই এবার নবীনরা পুজোর দায়িত্ব নিজেদের কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এবার তাঁরা বাংলার সাবেকি ধাঁচের পুজোর সঙ্গে আধুনিক কালের থিমকেন্দ্রিক বৈচিত্র্যের মেলবন্ধন ঘটাতে চলেছে। তাঁদের মণ্ডপে দেখা মিলবে দক্ষিণ ভারত। দক্ষিণ ভারতের প্রাচীন মন্দিরের আদলে ৪০ ফুট উচ্চতার মণ্ডপ তৈরির কাজ চলছে জোরকদমে। সেখানে দক্ষিণ ভারতীয় মন্দিরে যে সমস্ত টেরাকোটার কাজের দেখা মেলে, সেগুলি থার্মোকল কেটে তুলে ধরার চেষ্টা করছে তারা। মণ্ডপের প্রবেশপথের উপরে ঝোলানো থাকবে রাবণের মূর্তি। যা দক্ষিণ ভারতের লোকজন ‘নজরত’ বলে। থিম ভাবনায় রয়েছেন কমিটির নবীন সদস্য সায়ন হাজরা ও সাগর দত্ত। তাঁরা বলেন, বাঁশ, কাপড় ও থার্মোকল দিয়ে মণ্ডপ গড়ে তোলা হচ্ছে। আলোকসজ্জাও এবার নজর কাড়বে দর্শনার্থীদের। বহরমপুরের মহুলা গ্রামের প্রখ্যাত মৃৎশিল্পী বাঁকা রায় ১৪ ফুটের সাবেকি মূর্তি তৈরি করছেন। যা মণ্ডপের সঙ্গে মানানসই। সেই সঙ্গে থাকবে কুসংস্কার-মুক্ত সমাজ তৈরির চেষ্টা। কমিটির সদস্য পার্থসারথি চট্টোপাধ্যায়, প্রশান্ত কেশরী, রোহিত কেশরী সহ সভাপতি সঞ্জয় কেশরী বলেন, এখনও বহু মানুষ কুসংস্কারে আচ্ছন্ন। ডাইনি সন্দেহে মহিলাদের পিটিয়ে মেরা ফেলা হচ্ছে। কিন্তু ডাইনি বলে যে কিছু নেই, তা মণ্ডপের সামনে প্রদর্শনী ও বাউল শিল্পীরা গানের মাধ্যমে মানুষকে সচেতন করবেন। পঞ্চমীর দিন মণ্ডপের উদ্বোধন করা হবে। উদ্বোধনের দিন কমিটির প্রবীণ সদস্য প্রাক্তন ব্যাঙ্ককর্তা আশিস দত্তকে সংবর্ধিত করা হবে। পঞ্চমীতে উদ্বোধন। সপ্তমীর দিন এলাকার সকলে মিলে শোভাযাত্রা করেন। ষষ্ঠী থেকে পাঁচদিন স্থানীয় শিল্পীদের নিয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান চলবে। প্রতিবছরের মতো এবারও নবমীতে কমিটির উদ্যোগে প্রায় চার হাজার মানুষকে ভোগ খাওয়ানোর ব্যবস্থা করা হয়েছে।  কমিটির সম্পাদক সায়ন হাজরা বলেন, রাজ্য সরকারের আর্থিক অনুদান ও পুজো করার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ছাড় দেওয়ায় খুবই সুবিধা হয়েছে। এবার ৭১তম বর্ষে নবীনদের হাত দিয়ে দর্শকদের একটু অন্যরকম ছোঁয়া দিতে আমরা প্রস্তুত। মণ্ডপসজ্জা থেকে মূর্তি দর্শকদের মনে জায়গা করে নেবে। একাদশীতে এলাকার সকলে সুসজ্জিত শোভাযাত্রা সহকারে দেবীমূর্তি বিসর্জন দেওয়া হবে। • নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)