• নাগাড়ে বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত জেলা
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: বিরামহীন বৃষ্টি। শুক্র, শনি, রবির পর এবার বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সপ্তাহের প্রথম কাজের দিনও। নদীয়া জেলার বিভিন্ন প্রান্তে জমা জলে বিপাকে জনজীবন। বহু জায়গাতেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে চাষাবাদ। ব্যাপক ক্ষতির মুখে রানাঘাট-২ ব্লকের ফুল চাষ। পুজোর মুখে ফুল চাষের ক্ষতি নিয়ে চিন্তায় ধানতলা, গাংনাপুর, চাপড়া এলাকার কৃষকরা। বেশকিছু জায়গায় বৃষ্টিতে মাটি আলগা হয়ে গিয়ে উপড়ে গিয়েছে ইলেক্ট্রিকের খুঁটি। ফলে বিদ্যুৎ পরিষেবাও বিক্ষিপ্তভাবে বিপর্যস্ত হয়েছে জেলার বিভিন্ন পকেটে। টানা বৃষ্টিতে থমকে মণ্ডপসজ্জা। চিন্তায় মৃৎশিল্পীরা।

    শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া বৃষ্টির পর সোমবার ছিল প্রথম পূর্ণ কর্ম দিবস। কিন্তু সকাল থেকেই জেলাজুড়ে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। কিছু জায়গায় ছিল দাপুটে ঝোড়ো হাওয়া। ফলে সকালে অফিস যাওয়ার পথে বিপাকে পড়েন হাজার হাজার মানুষ। বৃষ্টিতে জমা জলের কারণে প্রত্যক্ষ প্রভাব পড়েছে কৃষ্ণনগর, রানাঘাট, চাকদহ, করিমপুর, তেহট্ট সহ বিভিন্ন এলাকায়। জেলা প্রশাসন সূত্রে খবর, প্রথম দু’দিন প্রায় ১০০ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছিল। সোমবার সকালে দেখা গিয়েছে, রবিবারের বৃষ্টিপাতের পরিমাপ বলছে ৫৭ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে ছুটির দিনে। সোমবার বাদ দিলে ইতিমধ্যেই ১৫৭ মিলিমিটারের বেশি বৃষ্টিতে ‘ভাসতে’ হয়েছে নদীয়া জেলাকে। সামগ্রিক জেলা পর্যবেক্ষণ বলছে, রানাঘাট-২, চাকদহ, কল্যাণী সহ পাঁচটি ব্লকের বেশকিছু রাস্তা টানা বৃষ্টি ও জমা জলের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কমবেশি প্রায় ২৮টি বাড়ি আংশিক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে তেহট্ট, করিমপুর, কৃষ্ণগঞ্জ সহ নদীয়ার উত্তরপ্রান্তের ব্লকগুলিতে। প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী, মোটামুটি ২৪টি জায়গায় বড় অথবা মাঝারি গাছ উপড়ে পড়েছে।

    করিমপুর, তেহট্ট , চাকদহ, হরিণঘাটা, সহ বিভিন্ন জায়গা থেকেই গাছ পড়ে সমস্যা তৈরির বিষয়টি লিপিবদ্ধ হয়েছে। বৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে চাষেও। সবমিলিয়ে প্রায় ১৪ হাজার ৯৪৭ হেক্টর চাষের জমি ইতিমধ্যেই জলমগ্ন। অতিরিক্ত জল জমে ক্ষতি হয়েছে আউশ, আমন, কলা, সব্জি চাষে। নদীয়ার অন্যতম অর্থকরী ফসল কলাই। টানা বৃষ্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হওয়ার ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে কলাই চাষে। তেহট্ট -১ ব্লকে কমবেশি ৩ হাজার ৬৯২ হেক্টর জমি এবং কালীগঞ্জ, নাকাশিপাড়া ব্লকগুলিতে সবথেকে বেশি চাষের ক্ষতি হয়েছে। ব্যাপক ক্ষতির মুখে রানাঘাট-২ ব্লকের ফুল চাষ। পুজোর মুখে ফুল চাষের ক্ষতি নিয়ে চিন্তায় ধানতলা, গাংনাপুর, চাপড়া এলাকার কৃষকরা। তবে চাষবাসে জেলার মোট ১৮৭টি পঞ্চায়েতে কত ক্ষয়ক্ষতি? এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে আলাদাভাবে রিপোর্ট তৈরির কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। বৃষ্টিতে মাটি আলগা হয়ে অনেক জায়গাতেই ইলেক্ট্রিকের খুঁটি অথবা ট্রান্সফর্মারের ক্ষতি হয়েছে। প্রায় ৫৪ ইলেক্ট্রিক পোল ও ২১টি ট্রান্সফর্মার ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। দুর্যোগ বিধ্বস্ত এলাকাগুলিতে ইতিমধ্যেই ত্রাণ সামগ্রী পাঠানোর কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন। সূত্রের খবর, জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৩০০টি ত্রিপল বিলি করা হয়েছে বিভিন্ন ব্লকে।  

     যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গেল ধুবুলিয়া থানার দলিমৌলা। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)