• বাঁকুড়ায় জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে বৃদ্ধের মৃত্যু
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বাঁকুড়া ও সংবাদদাতা, বিষ্ণুপুর: নিম্নচাপের জেরে প্রাকৃতিক দুর্যোগে বাঁকুড়ায় আরও একজনের মৃত্যু হয়েছে। সোমবার দুপুরে পাত্রসায়রে কালভার্ট পারাপার করতে গিয়ে জলের তোড়ে ভেসে গিয়ে এক বৃদ্ধের মৃত্যু হয়। পুলিস জানিয়েছে, মৃতের নাম গঙ্গাধর সোয়ার(৬১)। তাঁর বাড়ি পাত্রসায়র থানার বাগডহরা গ্রামে। এদিন কাজ সেরে বাড়ি ফেরার সময় সালমা কালভার্ট পারাপার করতে গিয়ে তিনি কোনওভাবে ভেসে যান। কালভার্টের উপর দিয়ে খালের জল বইছিল। ফলে দুর্ঘটনাটি ঘটে। এনিয়ে গত তিনদিনে জেলায় মোট পাঁচজন প্রাণ হারালেন। রবিবার বাঁকুড়া সদর থানার হরিয়ালগাড়া গ্রামে দেওয়াল চাপা পড়ে মৃত মহিলার পরিবারের সঙ্গে এদিন সাংসদ অরূপ চক্রবর্তী দেখা করেন। তিনি মৃতার পরিবারের সদস্যদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন। 

    আবহাওয়া দপ্তর ও প্রশাসন সূত্রে জানা গিয়েছে, রবিবার সকাল থেকে সোমবার বিকেল পর্যন্ত বাঁকুড়ায় ১০৬.৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। বৃষ্টির জেরে জেলার নদনদীগুলি ফুলেফেঁপে উঠেছে। কজওয়েগুলি ডুবে যাওয়ায় বিস্তীর্ণ এলাকায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে গিয়েছে। বাঁকুড়া শহর লাগোয়া এলাকায় বহু বাড়ি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। জেলার এক হাজারেরও বেশি মাটির বাড়ির ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। অনেককে বিপজ্জনক বাড়ি থেকে উদ্ধার করে ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে। মুকুটমণিপুর জলাধার থেকে কংসাবতী নদীতে ৩০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। গন্ধেশ্বরী ও দ্বারকেশ্বর নদীও ফুঁসছে। তবে আজ, মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টির পরিমাণ কমবে বলে আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে। ফলে এদিন থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হবে বলে প্রশাসনের আধিকারিকরা মনে করছেন।      

    টানা বৃষ্টির জেরে বিষ্ণুপুর মহকুমার বিস্তীর্ণ এলাকায় জল জমে যায়। মহকুমার দ্বারকেশ্বর, দামোদর সহ বিভিন্ন নদ ও নদীতে জলস্তর বেড়ে যায়। একাধিক খালের কজওয়ে ডুবে যাওয়ায় যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়। মহকুমার বিভিন্ন জায়গায় বেশকিছু মাটির বাড়ি ভেঙে যায়। 

    এদিন জয়রামবাটিতে মা সারদা স্মৃতি বিজড়িত আমোদর নদ উপচে এলাকা জলমগ্ন হয়ে যায়। বিঘার পর বিঘা চাষের জমি জলের তলায় চলে যায়। বিষ্ণুপুরের লালবাঁধে আউটলেটে জল বেরনোর খালের উপর থাকা কালভার্ট ধসে যায়। যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিষ্ণুপুরের দমদমা যাওয়ার রাস্তায় আইচবাড়িতে একটি কালভার্ট ধসে যায়। পাত্রসায়রে নাড়িচায় খালের জল রাস্তার উপর দিয়ে জল বয়ে যাওয়ার বিষ্ণুপুর-পাত্রসায়র রোডে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। কোতুলপুরের ব্রহ্মডাঙা খালে, জয়রামবাটি-বাঁকাদহ রাস্তার উপর দিয়ে জল বয়ে যাওয়ায় যানবাহন চলাচল ব্যাহত হয়। একইভাবে বিষ্ণুপুরের সুভাষপল্লিতে বিড়াই নদীর সেতু জলের তলায় চলে যায়। স্থানীয় বাসিন্দারা যোগাযোগের ক্ষেত্রে বিপাকে পড়েন। বিষ্ণুপুর ও সোনামুখী শহরের একাধিক ওয়ার্ডে জল জমে যায়। 

    কোতুলপুর, পাত্রসায়র সহ গোটা বিষ্ণুপুর মহকুমার নিচু এলাকায় চাষের জমিতে জল জমে যায়। মরশুমি সব্জি জলের তলায় চলে যাওয়ায় চাষিরা প্রবল ক্ষতির আশঙ্কা করছেন। পাত্রসায়রের নারায়ণপুর, সোনামুখী নিত্যানন্দপুর প্রভৃতি এলাকার বাসিন্দারা বলেন, এলাকায় বর্তমানে পটল, কপি, বেগুন, কুঁদরু প্রভৃতি মরশুমি সব্জির চাষ রয়েছে। সব জলের তলায় চলে গিয়েছে। শীঘ্রই জল না নামলে সমস্ত সব্জি পচে নষ্ট হয়ে যাবে। 

    এদিকে বৃষ্টির জেরে একের পর এক মাটির বাড়ি ভাঙার খবর প্রশাসনের কাছে আসছে। পাত্রসায়রের কুশদ্বীপ অঞ্চলে বেশ কিছু মাটির বাড়ি ভেঙে যায়। স্থানীয় জনপ্রতিনিধি শাজাহান মিদ্দা ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির তালিকা তৈরি করে তা প্রশাসনের কাছে জমা করছেন। একইভাবে জয়পুর, কোতুলপুর, সোনামুখী, ইন্দাস ব্লকের বিভিন্ন এলাকায় ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা প্রস্তুত করা হচ্ছে।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)