• টানা চারদিনের বৃষ্টিতে ফুলচাষে ক্ষতির শঙ্কা
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, রানাঘাট: দুয়ারে পুজো। তার আগে চারদিন ধরে বিরামহীন বৃষ্টিতে কার্যত প্রমাদ গুনছেন ফুল চাষিরা। ভারী বৃষ্টিতে ফুল গাছের গোড়ায় জল দাঁড়িয়েছে। ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কায় তাঁদের রাতের ঘুম উবেছে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত গাঁদা ফুলের চাষ। সদ্য রোপণ করা চন্দ্রমল্লিকাতেও বিপুল লোকসানের আশঙ্কা করছেন চাষিরা। শুক্রবার সন্ধ্যায় শুরু হয়েছিল বৃষ্টি। তারপর থেকে আর যেন থামার কোনও লক্ষণই নেই। কখনও ঝিরঝিরে তো কখনও মাঝারি বৃষ্টি হয়েই চলেছে। মাঝে বেশ কয়েক দফায় বৃষ্টির দাপুটে ব্যাটিংও দেখা যায়। সবমিলিয়ে জেলার অধিকাংশ জায়গাতেই পরিস্থিতি বেশ সঙ্গীন। রানাঘাট-২ ব্লকের বিস্তীর্ণ অংশের মানুষ ফুল চাষের সঙ্গে যুক্ত। বিশেষ করে নোকাড়ি, চাপড়া, ধানতলা ও গাংনাপুরের একাংশে ব্যাপক ফুল চাষ হয়ে থাকে। বেশ কয়েক হাজার মানুষ এই পেশার সঙ্গে যুক্ত। সোমবার সকালেও বৃষ্টি না থামায় মাথায় হাত পড়েছে এই সমস্ত এলাকার ফুল চাষিদের। পুজোর মুখে ফুল চাষের ক্ষয়ক্ষতি সামগ্রিকভাবে বিরাট এই অঞ্চলের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার উপরেও প্রভাব ফেলতে পারে। উৎসবের মুখে যা অন্যতম চিন্তার কারণ। 

    চাষিরা জানান, গাঁদা, রজনীগন্ধা, চন্দ্রমল্লিকার মতো নির্দিষ্ট কয়েকধরনের ফুলের চাষ এখানে হয়। তবে অধিকাংশ চাষি গাঁদা ও রজনীগন্ধা চাষের উপরই নির্ভরশীল। অতি বৃষ্টির কারণে রজনীগন্ধার সেইভাবে ক্ষয়ক্ষতি না হলেও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখে পড়তে চলেছে গাঁদার চাষ। চাষিদের কথায়, গাছের গোড়ায় যেমন জল দাঁড়িয়েছে, তেমনই গাঁদা ফুলের পাপড়ির ভিতরেও জল ঢুকে গিয়েছে। তা দ্রুত পচে যাবে। মাঠ থেকে ফুল তুলে এখন যে বিক্রি করারও উপায় নেই। তাই ফুল নষ্ট হচ্ছে মাঠেই। ভারী বৃষ্টিতে গাছ নুইয়ে মাটিতে ঠেকছে। তাতেও ফলন কম হবে। 

    রানাঘাট-২ ব্লকের পুরাতন চাপড়া এলাকার ফুল চাষি অশোক মণ্ডল বলেন, প্রায় ১০ বিঘা জমিতে আমি গাঁদা চাষ করেছিলাম। বৃষ্টিতে ফুলের পাপড়ির ভিতর জল জমেছে। এই ফুল বিক্রি হবে না। প্রায় ছ’হাজার টাকার ফুল শুধু গাছেই নষ্ট হচ্ছে। পুজোর সময় এই ক্ষতি কীভাবে সামলাব বুঝতে পারছি না। ওই ফুল তুলে না ফেলে দিলে পুজোর সময় ফলনও ভালো হবে না।

    চাপড়ার পূর্ণনগরের চাষি হীরক বিশ্বাস বলেন, সদ্য চন্দ্রমল্লিকা বসিয়েছিলাম। হঠাৎ করে এত বৃষ্টিতে গোড়া থেকে মাটি সরে গিয়েছে। অনেক গাছ নষ্ট হয়ে গিয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি চিন্তা এরপর যখন হঠাৎ করে রোদ উঠবে। হঠাৎ আবহাওয়ার পরিবর্তন হলে গাছ বাঁচানো মুশকিল। রানাঘাট-২ ব্লকের দু’টি বড় ফুলের বাজার হল ধানতলা ও নোকাড়ি। সোমবার সেখানে গাঁদা ফুলের ২০টি মালা ২৬০ টাকায় বিক্রি হয়। রজনীগন্ধায় খুব বেশি ক্ষয়ক্ষতি না হওয়ায় সোমবার প্রায় ২৫০ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়। তবে ভিজে ও ভালো না ফোটা গাঁদার দর ১০০ থেকে ১৫০ টাকা কেজি ছিল। পুজোর আগে ভালো আবহাওয়া হলে ঘুরে দাঁড়াতে পারবেন চাষিরা। তাই তাঁরা এখন আকাশের দিকেই তাকিয়ে রয়েছেন।-নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)