• দ্বারকা নদ ছাপিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তারাপীঠে, জলের নীচে মহাশ্মশান
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, রামপুরহাট: নিম্নচাপের জেরে অবিরাম বৃষ্টিতে দ্বারকার দু’কূল ছাপিয়ে জলমগ্ন হয়ে পড়ল তারাপীঠ মহাশ্মশান সহ বিস্তীর্ণ এলাকা। ইলেক্ট্রিক চুল্লির ট্রান্সফর্মার জলের তলায় চলে গিয়েছে। একইভাবে কাঠের চুল্লিও ডুবে গিয়েছে। যার জেরে বন্ধ রয়েছে দাহ। একইভাবে দ্বারকার পাড়ের একাধিক লজের একতলায় জল ঢুকে গিয়েছে। বিঘার পর বিঘা জমি জলের তলায়। তারাপীঠ-আটলা যাওয়ার রাস্তার উপর দিয়ে জল বয়ে যাওয়ায় যোগাযোগ ব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। সবমিলিয়ে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। যা এলাকাবাসীকে ২০০০ সালের বন্যার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। সোমবার সকাল থেকেই বন্যার আশঙ্কায় বহু পর্যটক তারাপীঠ ছাড়তে শুরু করেছেন। 

    একদিকে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে ঝাড়খণ্ড থেকে নেমে আসছে জল। তাতেই ফুলেফেঁপে উঠেছে জেলার বিভিন্ন নদনদী। বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে জল ছাড়া শুরু হয়েছে। তাতেই বন্যা পরিস্থতির সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যের অন্যতম পর্যটন কেন্দ্র তারাপীঠে। রবিবার রাত থেকে দ্বারকায় জল বাড়তে শুরু করে। গভীর রাতে দু’কূল ছাপিয়ে জল বিস্তীর্ণ এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। এদিন সকালে গিয়ে দেখা গেল, তারাপীঠ শ্মশান পুরো জলের তলায়। মায়ের পাদপদ্ম পর্যন্ত জল চলে এসেছে। বৈদ্যুতিক চুল্লির ট্রান্সফর্মার ও কাঠের চুল্লিও ডুবে গিয়েছে। এক মানুষ সমান জল। ফলে শবদাহ বন্ধ হয়ে পড়েছে। দ্বারকার পাড়ে এমনিতেই কয়েক মানুষ সমান উঁচুতে রয়েছে লজ। সেই লজগুলির একতলায় জল ঢুকে পড়েছে। অন্যদিকে পাড়ে যেখানে কৌশিকী অমাবস্যা থেকে আরতি শুরু হয়েছিল, সেখানেও বইছে জল। পর্যটকদের নিরাপত্তার কথা ভেবে মন্দির কমিটির পক্ষ থেকে আরতি বন্ধ রাখা হয়েছে। সবমিলিয়ে ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে দ্বারকা। ব্রিজের মাত্র দু’হাত নিচু দিয়ে জল বয়ে যাচ্ছে। 

    এদিকে তারাপীঠ থেকে বামাখ্যাপার বাড়ি যাওয়ার আটলা রোডের উপর দিয়ে বইছে জল। যার জেরে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। দ্বারকার জল এদিন দুপুর পর্যন্ত এক কিমি দূরের লজগুলির দোরগোড়ায় পৌঁছে গিয়েছে। চিলাব্রিজের পাশ দিয়ে যাওয়া কাঁদরের জল ছাপিয়ে খেলার মাঠ জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা লক্ষ্মী দাস বলেন, ভোরে তেমন জল ছিল না। সকাল থেকে জল বেড়েই চলেছে। তাতেই আতঙ্কে অনেক পর্যটক এদিন সকাল থেকেই তারাপীঠ ছাড়তে শুরু করেছেন। রবিবার দুপুরে পরিবার নিয়ে দেবী তারার কাছে পুজো দিতে এসেছিলেন অমলেশ রায়। তিনি বলেন, মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত হোটেল বুকিং করা হয়েছিল। কিন্তু এই পরিস্থিতিতে কোনও ঝুঁকি না নিয়ে বাড়ি ফিরছি। 

    তৃণমূল ব্লক সভাপতি সুকুমার মুখোপাধ্যায় বলেন, জল ক্রমশ বাড়ছে। যেসব যাত্রী লজে আটকে পড়বেন, তাঁদের সহয়তা করা হবে। একইভাবে শ্মশানের সাধুদের অন্যত্র সরিয়ে নিয়ে এসে খাবাবের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। মন্দির কমিটির সভাপতি তারাময় মুখোপাধ্যায় বলেন, যা পরিস্থিতি তাতে ২০০০ সালের বন্যা মনে করিয়ে দিচ্ছে। দেবীর পুজোয় কোনও প্রভাব না পড়লেও অনেক পর্যটকরা বন্যার আতঙ্কে চলে যাচ্ছেন। 

    রামপুরহাটের মহকুমা শাসক সৌরভ পাণ্ডে বলেন, বৃষ্টির পাশাপাশি দেউচা ব্যারেজ থেকে ৩৯৭৩ কিউসেক হারে জল ছাড়া হয়েছে দ্বারকায়। তাতেই এই পরিস্থিতি। তারাতীর্থ স্কুলে ত্রাণশিবির খোলা হয়েছে। তারাপীঠ লাগোয়া কিছু গ্রামও জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। মানুষের পাশে রয়েছে প্রশাসন। -নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)