• ভাসছে সতীপীঠ কঙ্কালীতলা, গর্ভগৃহের ভিতরেও ঢুকল জল
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, বোলপুর: ফের কোপাই নদীর জলে ডুবল সতীপীঠ কঙ্কালীতলা। মাসখানেক আগের থেকে এবারের পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ। টানা তিনদিন ধরে লাগাতার বৃষ্টিপাতের জেরে বেড়েছে নদীর জলস্তর। পাশাপাশি, বিভিন্ন ব্যারেজ থেকে ছাড়া হয়েছে হাজার হাজার কিউসেক জল। তাতেই ফুলেফেঁপে উঠেছে কোপাই নদী। ফলে, জল উপচে মন্দির প্রাঙ্গণের গর্ভগৃহ বর্তমানে জলের তলায়। মন্দির ডুবে রয়েছে কার্যত এক বুক জলে। বন্ধ নিত্য পুজোপাঠ ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ। যদিও তারই মধ্যে মা কঙ্কালীকে এক বুক জল পেরিয়ে দেওয়া হয়েছে ভোগ। এদিন বিকেলে কঙ্কালীতলার পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে মন্দির প্রাঙ্গণ পরিদর্শন করেন বীরভূমের জেলাশাসক বিধান রায় ও জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ। 

    নিম্নচাপের অতিবৃষ্টির কারণে রবিবারই বিপদসীমার উপরে বইছিল কোপাই নদীর জল। গভীর রাতে ডুবে যায় গোয়ালপাড়া সংলগ্ন সেতু। এর ফলে বোলপুর-সিউড়ির যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এই একই কারণে ডুবে যায় ৫১ পীঠের অন্যতম সতীপীঠ কঙ্কালীতলা। ভয়ঙ্কর বেগে কোপাই নদীর স্রোত বেড়ে যাওয়ার ফলে রাতেই মন্দির ব্যারিকেড দিয়ে ঘিরে দর্শনার্থীদের প্রবেশ নিষেধ করে দেয় শান্তিনিকেতন থানা। মন্দির প্রাঙ্গণ ডুবে যাওয়ার কারণে গর্ভগৃহে এদিন বন্ধ ছিল নিত্যপুজো। পরিবর্তে মাকে পুজো করা হয়েছে পার্শ্ববর্তী শিব মন্দিরে। তবে প্রতিদিনের মতো এদিনও নিয়ম মেনে গর্ভগৃহে মা কঙ্কালীকে ভোগ দিয়েছেন পুরোহিতরা। বেলা ১২টা ৩০ মিনিট নাগাদ কঙ্কালীতলা পঞ্চায়েতের সহযোগিতায় পুরোহিতরা এক বুক জলে নেমেই নিত্যভোগ দেন। সেবায়েত নারায়ণ চৌধুরী ও শুভজিৎ চৌধুরী বলেন, এদিন প্রথমে সতীমাকে শাড়ি পরানো হয়। এরপর তাঁর চরণ পরিষ্কার করে জলের মধ্যেই পূজার্চনা চলে। এরপর মায়ের উদ্দেশে দেওয়া হয়েছে ভোগ। এদিন ভোগে পোলাও, পাঁচ রকম ভাজা, সব্জি ও পায়েস দেওয়া হয়েছিল। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুণ্যার্থীদের প্রবেশ বন্ধ থাকবে বলে জানা গিয়েছে। 

    কোপাই নদীর জল বিপদসীমার উপরে বয়ে চলার কারণে এদিন উদ্বেগে ছিল জেলা প্রশাসন। এই মর্মে এদিন বিকেলে গোয়ালপাড়া সেতু পরিদর্শন করেন জেলাশাসক। পরিস্থিতি খতিয়ে দেখার পর কঙ্কালীতলায় যান। সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা সভাধিপতি ও নানুরের বিধায়ক বিধানচন্দ্র মাঝি। পরিদর্শনের পর জেলাশাসক বলেন, নিচু জায়গা হওয়ার কারণে এই পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। তবে এদিন নতুন করে বৃষ্টি না হলে পরিস্থিতি দ্রুত স্বাভাবিক হবে। 

    যদিও অতিবৃষ্টির কারণে জেলার প্রচুর মাটির বাড়ি ভেঙে যাওয়ায় কেন্দ্রীয় সরকারের উপর ক্ষোভপ্রকাশ করেন জেলা সভাধিপতি কাজল শেখ। কারণ এদিন নানুরের চারকলগ্রাম পঞ্চায়েতের মারুন্দি গ্রামে মাটির বাড়ি ধসে গিয়ে মাধ্যমিক পরীক্ষার্থী রেশমা খাতুন ও তার ভাই সপ্তম শ্রেণির ছাত্র বরকতুল্লা শেখ গুরুতর জখম হয়েছে। তারমধ্যে রেশমার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সভাধিপতি বলেন, কেন্দ্রীয় সরকার বঞ্চনা করার কারণে প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনা থেকে এই রাজ্যের অধিকাংশ গরিব বঞ্চিত। মাটির বাড়ি পাকা হলে এই ধরনের দুর্ঘটনা ঘটত না।
  • Link to this news (বর্তমান)