• পেট চালাতে সংসার ভুলে শিলিগুড়িতে ঘাঁটি গেড়েছেন কৃষ্ণনগরের শিল্পীরা
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সুব্রত ধর, শিলিগুড়ি: কাটিং থেকে রং মেশিন। মণ্ডপসজ্জার উপকরণ থেকে রান্নার রাঁধুনি। এসব নিয়ে শিলিগুড়িতে ঘাঁটি গেড়েছেন কৃষ্ণনগরের মণ্ডপ শিল্পীরা। ইতিমধ্যে তাঁরা তিন সপ্তাহ কাটিয়ে দিয়েছেন। কেউ মণ্ডপের ফ্রেম তৈরি করছেন, কেউবা মেশিন চালিয়ে উপকরণ রং করছেন। সেসময় হাজির চা ও বিস্কুট। কোমরের গামছায় হাত মুছে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তাঁদের একজন বলেন, বাঙালির মেগা উৎসবই আমাদের মরশুম। তাই বাড়ির জন্য মন খারাপ করলেও পেটের টানে এখানে এসেছি। সঙ্গে আমাদের শিল্পকলা এখানকার মানুষের সামনে তুলে ধরাই লক্ষ্য।

    শিলিগুড়ি শহরের উত্তর মাল্লাগুড়ির একটি ক্লাবে ঘাঁটি গেড়েছেন কৃষ্ণনগরের ওই শিল্পীরা। তাঁদের টিমে ১১ জন রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে প্রধান কারিগর রাজু সরকার। কৃষ্ণনগরে তাঁর বাড়ি। স্ত্রী, ছেলে ও বাবা-মা বাড়িতে রয়েছেন। তিনি বলেন, ক্লাবেই নাওয়া-খাওয়া-থাকা। সকালে মুড়ি ও চানাচুর টিফিন। দুপুরে ভাত, ডাল, মাছ এবং রাতে ডিম। আর চা তিন বেলা। এভাবেই তিন সপ্তাহ কাটিয়ে দিলাম। চীনের বৌদ্ধমন্দিরের আদলে মণ্ডপ গড়া হচ্ছে। মণ্ডপে পিংপং বল, প্লাস্টিকের চামচ, কাচের চুড়ি, বোতল প্রভৃতির অসংখ্যা কারুকার্য থাকবে। সেসব এখানেই তৈরি করছি।

    ওই ক্লাবের একটি ঘরে শিল্পীদের বিছানা। আর দু’টি ঘরে ছড়িয়ে রয়েছে মণ্ডপ সজ্জার উপকরণ। একটি ঘরে মণ্ডপের ফ্রেম, পিংপং বল কাটিংয়ের মেশিন। আর একটি ঘরে রং মেশিন। এখানেই কাঠের ফ্রেমে পেরেক ঠুকছিলেন শিল্পী সমীর শীল। ধুবুলিয়ায় তাঁর বাড়ি। স্ত্রী ও ছেলে বাড়িতে রয়েছেন। পেরেক ঠোকার কাজ থামিয়ে চায়ের কাপ হাতে নিয়ে তিনি বলেন, সকাল থেকে কাজ চলছে। রাত ১০টা নাগাদ শেষ হবে। এর ফাঁকে ফোনে বাড়ির সঙ্গে কথা বলছি। সেই সময় প্রধান কারিগর রাজু বলেন, বাড়ির জন্য মন সর্বদাই টানে। কিন্তু, কী করব...! দুর্গাপুজোই আমাদের উপার্জনের মরশুম। সংসার চালাতেই সবকিছু ভুলে এখানে পড়ে আছি।

    প্রধান কারিগর বলেন, নদীয়া থেকে কাটিং ও রং মেশিন নিয়ে এসেছি। মণ্ডপসজ্জার উপকরণ কলকাতা থেকে জোগাড় করেছি। মুর্শিদাবাদ জেলার নওদা থেকে এনেছি রাঁধুনি। আমাদের ১১ জনের টিমে দৈনিক ৪০০ টাকা থেকে ২৫০০ টাকা পর্যন্ত মজুরি রয়েছে। এর বাইরে থাকা ও খাওয়ার খরচ মালিকের। এতে কোনওরকমে পুষিয়ে যায়। চতুর্থীর আগেই মণ্ডপসজ্জার কাজ শেষ করে বাড়ি ফিরব। এখানে আমাদের শিল্পকলার সেরাটা দেওয়াই আমাদের আমাদের টার্গেট। এরপর কালীপুজোর মণ্ডপ গড়তে আসব উত্তরবঙ্গে। 

     চম্পাসারির জাতীয় শক্তি সঙ্ঘের পুজোমণ্ডপের কাজে ব্যস্ত নদীয়ার শিল্পীরা।-নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)