• কলকাতা থেকে এসেছে বেনারসি, বাংলাদেশ থেকে আসছে চাঁদোয়া
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, জলপাইগুড়ি: জন্মাষ্টমীর দিন কাদাখেলার মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে জলপাইগুড়ির বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির দুর্গাপুজোর প্রস্তুতি। নন্দোৎসবের মাটি দিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে প্রতিমা তৈরির কাজ। কেবল তাই নয়, অন্যবারের মতো এবারও অসম থেকে নিয়ে আসা হচ্ছে গামছা ও চাদর। বাংলাদেশ থেকে আসছে চাঁদোয়া। অন্যদিকে, কলকাতা থেকে এসেছে বেনারসি শাড়ি। সপ্তকুণ্ডের জল নিয়ে আসার জন্য পরিবারের দুই সদস্যকে বেনারস, হরিদ্বার, হৃষিকেশে পাঠানো হয়েছে। পাশাপাশি থাকছে সোনার বিভিন্ন আভূষণ। 

    এবার জলপাইগুড়ি রাজবাড়ির দুর্গাপুজো ৫১৫ বছরে পড়বে। এভাবেই প্রতিমাকে সুসজ্জিত করে উমা আরাধনায় ব্রতী হন বৈকুণ্ঠপুর রাজবাড়ির সদস্যরা। পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে রাজ পরিবারের নিয়ম মেনেই পুজো হয় এখানে। মহালয়ার দিন হবে দেবীর চক্ষুদান। 

    জলপাইগুড়ি শহর তথা জেলার দুর্গাপুজোগুলির মধ্যে সব থেকে পুরনো বৈকুণ্ঠুপর রাজবাড়ির পুজো। রাজ পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, শীর্ষ সিংহ, বীর্ষ সিংহ দুই ভাই খেলার ছলে ৫০০ বছর আগে এই পুজোর সূচনা করেছিলেন। কুশ দিয়ে প্রতিমা বানিয়ে পুজো শুরু করা হয়েছিল। যা আজও ধরে রেখেছে পরিবারের বর্তমান প্রজন্ম। 

    রাজ পুরোহিত শিবু ঘোষাল বলেন, পুজোর পুরনো রীতির কোনও পরিবর্তন করা হয়নি। কালিকাপূরাণ মতে পুজো করা হবে। পঞ্চমীতে বোধন। এছাড়া থাকবে অর্ধরাত্রির পুজো। যেখানে পরিবারের সদস্যরাই কেবল থাকবেন। আগে ওই রাতে নরবলির হতো। কিন্তু, এখন আতপচাল দিয়ে মানুষের আকৃতি তৈরি করে বলি দেওয়া হয়। তবে পাঁঠাবলির প্রথা এখনও রয়েছে। 

    প্রতিমা এখানে তপ্ত কাঞ্চন বর্ণের। কয়েক বছর আগে একবার ওই রং কিছুটা পরিবর্তন হয়ে গিয়েছিল। যদিও পরে ফিরিয়ে আনা হয়। এবারও রাজবাড়ির প্রতিমা রথের উপর তৈরি হচ্ছে। দীর্ঘ বছরের পুরনো ওই রথের একটি চাকা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। দেড়শো বছর পর ওই চাকা পরিবর্তন করা হয়েছে। 

    রাজবাড়ির পারিবারিক পুজো হলেও এই পুজোয় আশেপাশের সকলেই অংশ নিয়ে থাকেন। এখন জলপাইগুড়ি শহরের বাইরে অন্য জেলা থেকেও লোকজন এসে অংশগ্রহণ করে। রাজ পরিবারের বর্তমান প্রজন্মের সদস্য প্রণতকুমার বসু বলেন, যথাসম্ভব পুরনো রীতি মেনেই পুজো হয়। এই পুজো আমাদের পরিবারের হলেও এখনও আশেপাশের প্রায় সকলেই অংশ নিয়ে থাকেন। সপ্তমী থেকে নবমী ভোগ বিতরণ করা হবে। জলপাইগুড়ি শহর ছাড়াও বাইরে থেকে প্রচুর মানুষ এই প্রাচীন পুজো দেখার জন্য ওই চারদিন রাজবাড়িতে আসে। দশমীতে রথের করেই রাজবাড়ির পদ্মপুকুরে বিসর্জন দেওয়া হয়। প্রতিমা নিরঞ্জন দেখার জন্য হাজার হাজার মানুষ ভিড় করে রাজবাড়িতে। আগে নীলকণ্ঠ পাখি ওড়ানোর নিয়ম থাকলেও এখন আর তা হয় না বলেই জানান প্রণতকুমার বসু।  তৈরি হচ্ছে রাজবাড়ির ঠাকুর। - নিজস্ব চিত্র।
  • Link to this news (বর্তমান)