• আড়ম্বর কমে গেলেও গরিমা আজও অমলিন
    বর্তমান | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, মালদহ: মালদহের শতাব্দী প্রাচীন পুজোগুলির মধ্যে অন্যতম কোতোয়ালির সেন বাড়ির পুজো। এবছর তাদের পুজো ১৭০তম বর্ষে পদার্পণ করতে চলেছে। সময়ের প্রবাহে চাকচিক্য, আড়ম্বর কিছুটা ফিকে হলেও গরিমা আজও অমলিন। ইংলিশবাজারের কোতোয়ালি অঞ্চল পরিচিত মালদহের রূপকার এবিএ গনিখান চৌধুরীর নামে। অথচ এই কোতোয়ালি থেকেই কালের নিয়মে হারিয়ে যাচ্ছে জমিদার বাড়ি তথা সেন বাড়ির শতাব্দী প্রাচীন পুজোর ইতিহাস। গনিখান চৌধুরীর বাড়ি থেকে ঢিল ছোঁড়া দূরত্বেই অবস্থিত সেন বাড়ি। কয়েক শতাব্দীর ইতিহাসকে সাক্ষী করে সেখানে আজও দাঁড়িয়ে আছে ১৫৫৫ সালে তৈরি মহাপ্রভুর মন্দির। মন্দিরের প্রতিষ্ঠাতা রাধানাথ চৌধুরী ছিলেন নিঃসন্তান। শ্রীখণ্ড কাটোয়ায় গিয়ে রাধানাথবাবু তাঁর ভাগ্নে রঘুনাথ সেনকে একপ্রকার জোর করেই সম্পত্তি দেখভালের জন্য নিয়ে আসেন। এদিকে রঘুনাথ সেন তাঁর মামার বাড়িতে চলে আসায় শ্রীখণ্ড কাটোয়ায় তাঁদের প্রতিষ্ঠিত দুর্গা মন্দিরে পুজো বন্ধ হয়ে যায়। 

    রঘুনাথ সেনের ছেলে যদুনন্দন সেন তাঁদের বাড়ির দুর্গাপুজোর স্বপ্ন দেখলেন। সকালে ঘুম থেকে উঠে তাঁর বাবাকে জানালেন সে কথা। ওই একই রাতে যদুনন্দনের বাবা রঘুনাথও স্বপ্নে দেখেন মা দুর্গা তাঁকে শ্রীখণ্ড কাটোয়া থেকে নিয়ে আসার নির্দেশ দিচ্ছেন। কিন্তু এখানে তো মহাপ্রভুর মন্দির রয়েছে। এদিকে রঘুনাথ সেনের বাড়ির মা দুর্গা পুজিত হন শাক্ত মতে। সেখানে বলি দেওয়া হয়। তাহলে উপায়। 

    সেন বাড়ির বর্তমান কর্তা বছর আশির শরদিন্দু সেন বলেন, আমার প্রপিতামহ রঘুনন্দনকে স্বপ্নে সেই পথও বাতলে দেন মা দুর্গা। মা দুর্গা তাঁকে বলেন আমি বলি চাই না, পুজো চাই। এরপর  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের জন্মের ছ’বছর আগে সেই পুজো শ্রীখণ্ড কাটোয়া থেকে চলে আসে এখানে। আমাদের পুজোকে কেন্দ্র করে শাক্ত ও বৈষ্ণব মতের মেলবন্ধন ঘটে। 

    এক সময় কোতোয়ালির সেন বাড়ির পুজোকে কেন্দ্র করে বিশাল মেলা বসত। ষষ্ঠী থেকে নবমী, এই চারদিন  আশপাশের গ্রামের কোন বাড়িতেই উনুন জ্বলতো না। পুজোর চারদিন দু’বেলা সবাই এখানেই পাত পাত পেড়ে খাওয়া দাওয়া করত। প্রাচীন নিয়ম মেনে নিষ্ঠার সঙ্গে এই পুজো আজও হয়। কিন্তু কালের নিয়মে ফিকে হয়েছে পুজোর আভিজাত্য।  নিজস্ব চিত্র
  • Link to this news (বর্তমান)