প্রতিবাদের শহরে কি মিলবে স্পনসর, উদ্বেগে উদ্যোক্তারা
এই সময় | ১৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই অশান্ত পরিস্থিতিতে কলকাতার দুর্গাপুজোয় বিজ্ঞাপনে কি ভাঁটা পড়তে চলেছে? বড় কর্পোরেট সংস্থাগুলির সংশয় দেখে প্রশ্নটা মাথাচাড়া দিয়েছে। মাত্র ২২ দিন পরে পুজো। এর মধ্যে শহরের বড় পুজোকমিটির যে প্রচার-ফ্লেক্স উত্তর থেকে দক্ষিণে ছড়িয়ে পড়ার কথা ছিল, তাও কার্যত উধাও।বিক্ষোভ, মিছিল, ধর্না, অবস্থান - আরজি কর কাণ্ডের প্রতিবাদে এগুলোই এখন কলকাতা ও মফস্সলের চেনা ছবি। এই আবহে বহু পুজো উদ্যোক্তা জানাচ্ছেন, অন্যান্য বছর গণেশ পুজো থেকেই দুর্গাপুজোর স্পনসরশিপের ব্যাপারে কথাবার্তা শুরু হয়ে যেত। এ বছর হয়নি। পুজো উদ্যোক্তাদের দাবি, আরজি করের ঘটনা নিয়ে স্পনসররা কিছুটা দ্বিধা-দ্বন্দ্বের মধ্যে রয়েছেন। আর তার প্রভাব পড়ছে পুজো-প্রচারেও।
২০১৫-য় বড় দুর্গা করে জনজোয়ার তৈরি করেছিল দেশপ্রিয় পার্ক। চৌখস প্রচার চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে এই পুজোর উদ্যোক্তাদের। পুজোকমিটির শীর্ষ কর্তা সুদীপ্ত কুমারের কথায়, 'এ বছর পুজোর ক্রেজ় তৈরি করা সহজ নয়। স্পনসরের অবস্থা অত্যন্ত খারাপ।' রাজ্যের ব্যবসায়ীদের সংগঠন, কনফেডারেশন অফ ওয়েস্ট বেঙ্গল ট্রেড অ্যাসোসিয়েশনস-এর প্রেসিডেন্ট সুশীল পোদ্দার বলছেন, 'গত বছরের তুলনায় এ বছর পুজোর বিজ্ঞাপন এখনও পর্যন্ত প্রায় ৭০ শতাংশ কম উঠেছে। আরজি কর কাণ্ডের পরে মানুষ যে ভাবে রাস্তায় নেমেছেন, তাতে তাঁরা কতটা পুজোয় সামিল হবেন, তা নিয়ে সংশয়ী কর্পোরেট সংস্থাগুলো।'
কসবার রাজডাঙ্গা নবোদয় সংঘের অন্যতম কর্মকর্তা সুশান্ত ঘোষ জানিয়েছেন, আরজি করের ঘটনার জন্য অনেক স্পনসর মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন। যাঁরা রাজি হচ্ছেন, তাঁরাও কম টাকা দেবেন বলছেন। সুশান্ত বলেন, 'পুজোর প্ল্যানিং অনেক আগে থেকেই ঠিক হয়ে যায়। শেষ মুহূর্তে সেটা বদল করা মুশকিল।'
এই অবস্থায় পুজোর আবহ ফেরাতে ফ্লেক্স, ব্যানারের উপরে পুরো ভরসা না-রেখে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মকে ব্যবহার করতে মাঠে নেমেছে বেশ কিছু ক্লাব। কী ভাবে ধাপে ধাপে মণ্ডপ, থিম তৈরি হচ্ছে, কারিগররা কী ভাবে কাজ করছেন - তার ভিডিয়ো তৈরি করে ইনস্টাগ্রাম, ইউটিউব, ফেসবুক-রিলস পোস্ট করা শুরু করেছে ক্লাবগুলি। কাশীবোস লেন দুর্গাপুজোর সম্পাদক সৌমেন দত্ত-র কথায়, 'কথোপকথনের আঙ্গিকে আমাদের পুজোর এ বার কী থিম হচ্ছে, শিল্পীরা কী ভাবে কাজ করছেন, তা নিয়ে একটি ভিডিয়ো তৈরি করে ইতিমধ্যে আমরা সমাজ মাধ্যমে পোস্ট করেছি।'
দুর্গাপুজোর প্রোমোশনাল ক্যাম্পেনে পেশাদার সংস্থা নয়, সাধারণত ক্লাবগুলির নবীন টেক-স্যাভি প্রজন্ম-ই পুজোর থিম, থিম-সং, থিম-মেকার নিয়ে প্রচার করে। দক্ষিণ কলকাতার নামী এক পুজোকর্তার কথায়, 'প্রতি বছরের মতো সাড়ম্বরে উৎসব হবে, নাকি পুজোর আকার ছোট হবে, তা নিয়ে ক্লাবের নবীন সদস্যদের মধ্যেই তো বিতর্ক রয়েছে।'
নতুন প্রজন্মের এই দোলাচলের কারণেও পুজোর প্রচার সে ভাবে শুরু করতে পারেনি কিছু পুজো কমিটি। তবু হাল ছাড়তে নারাজ বেশিরভাগ কমিটিই। রাজডাঙার সুশান্তর কথায়, 'এই সপ্তাহে আমাদের পুজোর প্রচারের এলইডি ডিসপ্লে শহরের বিভিন্ন জায়গায় চালু হবে। ডিজিটাল প্লাটফর্মেও প্রচার শুরু হয়েছে।'
ফোরাম ফর দুর্গোৎসবের সাধারণ সম্পাদক শাশ্বত বসু জানিয়েছেন, পুজোর আবহ তৈরি করতে কলকাতার ১৫টি বড় ক্লাব যৌথ ভাবে শ্যামবাজার থেকে রাসবিহারী পর্যন্ত শহরের জনবহুল বিভিন্ন মোড়ে পুজোর ফ্লেক্স-ব্যানার টাঙানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তাঁর কথায়, 'সংবাদমাধ্যমে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সারাক্ষণ বিক্ষোভ আন্দোলনের খবর দেখানোয় কলকাতা সম্পর্কে ভুল বার্তা যাচ্ছে।'
পুজোকে ঘিরে এই সংশয়ের ঠিক উল্টো মতও উঠে এসেছে। নিউ আলিপুর সুরুচি সংঘের কর্মকর্তা, তৃণমূল নেতা স্বরূপ বিশ্বাসের দাবি, 'পুজোর স্পনসরশিপ প্রতি বছর যেমনটা আসে, তেমনই আসছে। আরজি করের ঘটনার কোনও প্রভাব আমরা অন্তত টের পাচ্ছি না।' ত্রিধারা সম্মিলনীর কর্মকর্তা তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমারও জানিয়েছেন, পুজোর স্পনসরশিপ নিয়ে তাঁদের কোনও সমস্যা হচ্ছে না। শিবমন্দির পুজো কমিটির কর্মকর্তা পার্থ ঘোষের কথায়, 'আমাদের মণ্ডপের কাজ ৬০-৭০ শতাংশ এগিয়ে গিয়েছে। এখনও পর্যন্ত স্পনসরদের রেসপন্স ঠিকঠাকই আছে।'