অতি বৃষ্টি ও ডিভিসির জলাধার থেকে ছাড়া জলের চাপে দ্বারকেশ্বর নদের বাঁধ ভেঙে প্লাবিত আরামবাগ মহকুমার বেশ কয়েকটি এলাকা। সোমবারই খানাকুলের কিশোরপুর-২ ও কিশোরপুর-১ অঞ্চলের দ্বারকেশ্বর নদীর বাঁধ ভাঙে। আরামবাগ শহরের মনসাতলা এলাকায় বাঁধ ভেঙে দ্বারকেশ্বরের জল উপচে আরামবাগ পুরসভার বেশ কয়েকটি এলাকা ভেসে গিয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি গোঘাটেও। বাড়িতে বন্যার জল ঢুকে যাওয়ায় গোঘাটের বাড়ি থেকে বেরিয়ে আর ফিরতে পারেননি আরামবাগের তৃণমূল সাংসদ মিতালি বাগও।আরামবাগ শহরের প্রধান সড়ক জলের তলায়। চরম বিপদে পুরসভার ১৫, ১৮, ২ ও ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দারা। দ্বারকেশ্বরের জলের চাপে আরামবাগের দৌলতপুরে বাঁধে ফাটল দিয়েই জল ঢুকছে এলাকায়। গত বছরেও এই একই জায়গায় বাঁধে ফাটল ধরে প্লাবিত হয়েছিল এলাকা।
টানা বৃষ্টি ও ছাড়া জলে দ্বারকেশ্বর নদের পরিস্থিতি ভয়াবহ। আরামবাগের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের কালীপুরে জল বইছে রাস্তার উপরে। জরুরি ভিত্তিতে বাঁধ মেরামতির কাজ চলছে। বিকেলে বন্যা পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে আসেন রাজ্যের মন্ত্রী বেচারাম মান্না। তাঁর সঙ্গে ছিলেন আরামবাগের প্রাক্তন চেয়ারম্যান স্বপন নন্দী ও একাধিক কাউন্সিলার।
আরামবাগের গির্জাতলা-পার্বতীচকে বন্যাদুর্গতরা ত্রাণ না পেয়ে পথ অবরোধ করে বিক্ষোভ দেখান। আরামবাগের বিডিও অনন্যা ঘোষ পরিস্থিতি খতিয়ে দেখতে হাজির হলে তাঁকে ঘিরেও ব্যাপক বিক্ষোভ দেখান বানভাসিরা। এলাকায় উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। যদিও বিডিও বলেন, ‘শুকনো খাবার দেওয়া হয়েছে। রান্না করা খাবারও দেওয়া হবে।’
আরামবাগের বিজেপি বিধায়ক মধুসূদন বাগ বলেন, ‘দ্বারকেশ্বরের বাঁধ সংস্কারের জন্য কয়েক কোটি টাকা খরচ হয়ে গেলেও ২০২৪ সালে আবার কী ভাবে বাঁধ ভেঙে পড়ল! অতিবৃষ্টি ও বাঁকুড়ার দিক থেকে জল আসার ফলে দ্বারকেশ্বর বাঁধ ভেঙে যায়।’
হুগলি জেলা পরিষদের শিক্ষা কর্মাধ্যক্ষ সুবীর মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। বন্যা মোকাবিলা করার জন্য প্রশাসনের সকল স্তরে আধিকারিকরা উপস্থিত আছেন। পর্যাপ্ত শুকনো খাবার ও ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনে স্পিডবোট আনা হচ্ছে। আর যদি বৃষ্টি না হয় তা হলে বন্যা পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটবে।’
টানা চার দিনের অতিবৃষ্টিতে প্লাবিত গোঘাটের বিস্তীর্ণ এলাকা। রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে বন্যার জলের স্রোত বইছে। কামারপুকুর কলেজে বন্যার জল ঢুকেছে। কামারপুকুরের চেকপোস্ট মোড়ে শ্রীরামকৃষ্ণ-বিবেকানন্দ ছাত্রী আবাসিক বিদ্যালয়েও বন্যার জল ঢুকে গিয়েছে।
ইতিমধ্যেই পুলিশ ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচল বন্ধ করে দিয়েছে গোঘাটের বিভিন্ন এলাকায়। প্রবল বৃষ্টিতে আরামবাগ-মেদিনীপুর ৭ নম্বর রাজ্য সড়কের উপর দিয়ে বইছে বন্যার জল। কামারপুকুর-জয়রামবাটি ও কামারপুকুর-গড়বেতা রাস্তাও জলের তলায়। যান চলাচল সম্পূর্ণ ভাবে বন্ধ হয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন এলাকাগুলিতে। মাঠঘাট, কৃষিজমি সবই জলের তলায়। বন্দিপুর, বাউনখানা ও তালিত গ্রামে জল ঢুকেছে।
আরামবাগ সাংসদ মিতালি বাগের বাড়িতেও জল ঢুকেছে। তাঁর বাড়ির চারপাশ জলমগ্ন। সকালে বাড়ি থেকে বেরিয়ে আরামবাগে আসেন মিতালি। কিন্তু বিকেলে আর গোঘাটে ফিরতে পারেননি জল বেড়ে যাওয়ায়। মিতালি বলেন, ‘আমি সাংসদ তো কী হয়েছে? সাংসদের ঘরে জল ঢুকতে নেই নাকি? প্রকৃতির উপরে কারও হাত নেই। আমাদের এখন একটাই কাজ, বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়ানো। জেলাশাসক এসে বৈঠক করে গেছেন। আকাশ পরিষ্কার হয়ে গেলে বিপদ অনেকটাই কমে যাবে।’