আরজি কর আন্দোলনে প্রথম থেকেই ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ অবস্থান নিয়েছিল বিজেপি। নাগরিক সমাজ এবং চিকিৎসকদের মিটিং-মিছিলে নৈতিক সমর্থন জানালেও তাতে ভিড়তে না-পারার আক্ষেপ গেরুয়া নেতাদের ছিল। এই আন্দোলনের গতিপ্রকৃতি নিয়ে বিস্তর চর্চাও করেছেন তাঁরা।সূত্রের খবর, রাজনৈতিক ভাবে স্বচ্ছন্দ বোধ করার মতো কোনও উপাদনই আরজি কর আন্দোলনে খুঁজে পাননি পদ্ম নেতারা। তাই এখন বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের উপরে অত্যাচার নিয়ে সরব হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সুকান্ত মজুমদাররা। এই ইস্যুতে দ্রুত নির্দিষ্ট কর্মসূচিও ঘোষণা করা হবে।
রাজ্য বিজেপি নেতৃত্বের পর্যালোচনা, সাম্প্রদায়িক মেরুকরণের অস্ত্রে শান দিয়েই বাংলায় তাঁদের ভিত পোক্ত হয়েছে। আগামীতেও তারা সেই অস্ত্রেই শান দিয়ে যেতে চায়। তাই বাংলাদেশে গণ-অভ্যুথানের পরে সেখানকার সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপরে নির্যাতনের অভিযোগ তুলে সুর চড়াতে শুরু করে বিজেপি।
এ বিষয়ে ভারত-বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী জেলাগুলিতে লাগাতার প্রচারের সিদ্ধান্ত নেন সুকান্ত মজুমদার, শুভেন্দু অধিকারীরা। এর মধ্যেই ঘটে যায় আরজি করের ঘটনা। উত্তাল হয়ে ওঠে বাংলার রাজনীতি। পথে নামে সাধারণ মানুষ। নাগরিক আন্দোলনের কাছে ফিকে হয়ে যায় বিজেপি এবং সিপিএমের মতো বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির প্রতিবাদ কর্মসূচি।
বাম দলগুলির নেতা-কর্মীদের একাংশ নাগরিক আন্দোলনে মিশে যেতে পারলেও বিজেপি সে ভাবে খাপ খাওয়াতে পারেনি। কারণ বাংলার মাটিতে এই ধরনের গণ-আন্দোলন করার পূর্ব অভিজ্ঞতা বামপন্থীদের থাকলেও, বিজেপির নেই। বরং তারা অনেক বেশি সাবলীল ধর্মীয় মেরুকরণকে সম্বল করে রাজ্যের শাসকদলকে চাপে ফেলতে।
এ প্রসঙ্গে আরএসএস ঘনিষ্ঠ এক বিজেপি নেতার কথায়, ‘বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুরা প্রতিদিন অত্যাচারিত হচ্ছেন। কিন্তু সেগুলি সংবাদমাধ্যম দেখাচ্ছে না। দলের নেতা-কর্মীদের বলা হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলি প্রচার করতে। আমরা এই ইস্যুতে সেমিনার এবং জনসভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।’ সোমবার ধর্মতলার ধর্নামঞ্চ থেকে রাজ্যসভার বিজেপি সাংসদ শমীক ভট্টাচার্যও বাংলাদেশের কথা টেনে উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
আরজি কর আন্দোলনে বিজেপি থেকে বামপন্থীদের উপস্থিতি অনেক বেশি, সে কথা ঘনিষ্ঠমহলে কবুল করেছেন অনেক বিজেপি নেতা। তাই তৃণমূলের পাশাপাশি সিপিএমের বিরুদ্ধেও সুর চড়াতে শুরু করেছে বিজেপি। বিধানসভার বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীর কথায়, ‘এই সেকু-মাকুর দলই হিন্দু ভোট কেটে তৃণমূলকে ভোটে জেতার রাস্তা করে দেয়।’
আরজি কর ইস্যুতে জুনিয়র চিকিৎসকদের আন্দোলনের জেরে কলকাতা পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে অপসারিত হয়েছেন বিনীত গোয়েল। এ বিষয়টিকেও সে ভাবে গুরুত্ব দিয়ে চাইছে না বিজেপি। তারা মনে করছে বিনীত শাস্তি পাননি, পুরস্কার পেয়েছেন।
শুভেন্দুর কথায়, ‘বিনীত গোয়েলকে প্রাইজ় পোস্টিং দেওয়া হয়েছে। কম্পালসারি ওয়েটিং-এ পাঠালে বুঝতাম জুনিয়র ডাক্তারদের দাবি মেনেছেন মুখ্যমন্ত্রী। বিজেপি রাস্তায় ছিল, আছে, থাকবে।’ বিজেপি রাজ্য সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মন্তব্য, ‘বিনীত গোয়েল যেখানে পোস্টিং চেয়েছিলেন, সেখানেই পেয়েছেন। এটা কী ভাবে শাস্তি হলো বুঝতে পারছি না।’