এই সময়: আরজি করে তরুণী চিকিৎসককে খুন-ধর্ষণের পরে রাজ্যের স্বাস্থ্য প্রশাসন ব্যবস্থা নিয়ে বিস্তর অভিযোগ উঠেছিল। সেই অভিযোগ সামলাতে ডানা ছাঁটার কাজ শুরু হয়েছিল গত সপ্তাহেই। এ বার শুরু হলো তথাকথিত ‘উত্তরবঙ্গ লবি’র মাজা ভাঙার পালা।অবশেষে আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে বদলানো হলো স্বাস্থ্য অধিকর্তা ও স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তাকে। অল্প কয়েক দিন দায়িত্বে থাকলেও যেহেতু তাঁরা ক্ষমতাসীন লবির অতি ঘনিষ্ঠ ছিলেন, তাই জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য ছিল, এঁদের পদে রাখলে কোনও দিনই মিটবে না ‘থ্রেট কালচার’-এর সমস্যা। সোমবার রাতেই ওই দুই স্বাস্থ্যকর্তার ললাটলিখন জুনিয়র ডাক্তাররা বদলে দেওয়ার ব্যবস্থা পাকা করে এসেছিলেন কালীঘাটে মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে। মঙ্গলবার দুপুরে স্বাস্থ্যভবন থেকে বেরিয়ে গেল তাঁদের বদলির আদেশনামা।
স্বাস্থ্যসচিবের জারি করা এ দিনের নোটিফিকেশন বলছে, স্বাস্থ্য অধিকর্তা দেবাশিস হালদারকে বদলি করা হলো ওএসডি (জনস্বাস্থ্য) পদে। আর নতুন ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য অধিকর্তা করা হলো যুগ্ম স্বাস্থ্য অধিকর্তা পদমর্যাদার আধিকারিক, মানিকতলার সেন্ট্রাল ব্লাড ব্যাঙ্কের প্রধান স্বপন সোরেনকে। আর ওই একই নোটিফিকেশনে জানানো হয়েছে, স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ নায়েককে বদলি করা হলো সম পদমর্যাদার ইনস্টিটিউট অফ হেলথ অ্যান্ড ফ্যামিলি ওয়েলফেয়ারের অধিকর্তা পদে।
ওই ইনস্টিটিউটের অধিকর্তা সুপর্ণা দত্তকে ওএসডি (স্বাস্থ্য-শিক্ষা) পদে বদলি করা হয়েছে। আর বিশেষ সচিব অনিরুদ্ধ নিয়োগীকে ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা করা হলো। কৌস্তভ নায়েকের আগে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তিনিই এই পদে ছিলেন ভারপ্রাপ্ত হিসেবে।
‘উত্তরবঙ্গ লবি’-র মাথাদের হয়ে কাজ করতেন বলে অভিযোগ উঠেছিল যে অভীক দে, বিরূপাক্ষ বিশ্বাস, রণজিৎ সাহা, সৌরভ পালদের বিরুদ্ধে, তাঁদের আগেই শাস্তি দিয়েছে রাজ্য সরকার। পিজি হাসপাতালের জেনারেল সার্জারি স্নাতকোত্তর পড়ুয়া অভীক এবং বর্ধমান মেডিক্যালের রেডিয়োলজির সিনিয়র রেসিডেন্ট বিরূপাক্ষকে সাসপেন্ড করে তাঁদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় তদন্ত চালু করেছে স্বাস্থ্য দপ্তর।
মেডিক্যাল কাউন্সিল থেকেও তাঁদের কার্যত সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। আবার এসএসকেএমের হাউস স্টাফ রণজিতকেও হাসপাতালের কলেজ কাউন্সিল থেকে সাসপেন্ড করে হস্টেল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি আরজি করের রেডিয়োথেরাপি বিভাগের সিনিয়র রেসিডেন্ট সৌরভকে কলেজ চত্বরই না-মাড়ানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
অনেকের মনেই প্রশ্ন উঠেছে, কয়েক মাস আগে দায়িত্ব নেওয়া স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা কৌস্তভ এবং মাত্র কয়েক দিন আগে স্বাস্থ্য অধিকর্তার পদে বসা দেবাশিসকে কেন সরানোর দাবি তুলেছিলেন আন্দোলনকারীরা। স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা পদে কৌস্তভ যোগ দেন ১ মার্চ। আর দেবাশিস স্বাস্থ্য অধিকর্তার চেয়ারে বসেন ১৩ অগস্ট। অর্থাৎ ৯ অগস্ট তরুণী চিকিৎসকের খুন-ধর্ষণের ঘটনারও চার দিন পর।
যদিও জুলাইয়ের শেষেই তাঁর পদোন্নতির অর্ডার বেরিয়ে গিয়েছিল স্বাস্থ্যভবন থেকে। জুনিয়র ডাক্তারদের বক্তব্য, ‘ওই দুই অধিকর্তাই উত্তরবঙ্গ লবির অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ। অধিকর্তা পদে বসার আগে দু’জনেই প্রবল স্বজনপোষণ করেছেন। তাঁদের অনুগামীরা আবার বিভিন্ন হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজে ইন্ধন জুগিয়েছেন ‘থ্রেট কালচার’-এ। তাই তাঁদের স্বপদে উপস্থিতি সরকারি স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠানগুলিকে ভয়ভীতির পরিবেশ থেকে মুক্ত করার পথে বড় বাধা।’
আন্দোলনকারীরা জানাচ্ছেন, আরজি করের ঘটনার পরেই সেমিনার রুমের ক্রাইম সিনের পাশেই যে সংস্কার ও নির্মাণকাজ হওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছিল, তাতে সম্মতি দেন স্বাস্থ্য অধিকর্তা। তাই ওঁর পদত্যাগ চাওয়া হয়েছে।