• নিজেই দুর্গা প্রতিমা গড়ে পুজো করবে আলিপুরদুয়ারের সপ্তমের ছাত্র অঙ্কিত
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • রবীন রায়, আলিপুরদুয়ার: ছোট থেকেই প্রতিমা তৈরির পোকা মাথায় চেপে বসেছিল ছেলেটির। পড়াশোনা নষ্ট হবে ভেবে এবারও মা বাবা প্রতিমা তৈরি করতে বারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু, ছেলে শোনেনি। এবারও চ্যাংপাড়ায় নোনাই নদীর ধার থেকে প্রতিমা তৈরির মাটি সংগ্রহ করে সে। আলিপুরদুয়ার শহরের ১৫ নম্বর ওয়ার্ডের পাশে পঞ্চায়েত এলাকা শোভাগঞ্জ দ্বীপচরের ১৪ বছরের কিশোর অঙ্কিত দেবনাথের হাতে ফুটে উঠছে মৃন্ময়ী মায়ের অপরূপ রূপ। 

    ম্যাকউইলিয়াম হাইস্কুলের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র অঙ্কিত এ বছরও বাড়িতে দুর্গা প্রতিমা বানানোর কাজ শুরু করে দিয়েছে। নিজের হাতে তৈরি প্রতিমার নিজেই পুজো করবে সে। দুর্গাপুজোর মন্ত্রও তার মুখস্ত। বাড়ির পাশে থাকা মাঠে সে নিজেই মায়ের আরাধনা করবে। পুজোয় প্রতিবেশীদের খিচুড়িও খাওয়াবে। দশভূজার পাশাপাশি সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ, কার্তিকেরও প্রতিমা বানাচ্ছে। 

    অঙ্কিতের বাবা অনুকূল দেবনাথ পেশায় সব্জি ব্যবসায়ী। মা রূপণদেবী গৃহবধূ। অঙ্কিতের দাদা অরিন্দম আলিপুরদুয়ার কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের পড়ুয়া। ছোট থেকে মাটি নিয়ে খেলত অঙ্কিত। মাটি দিয়ে আপন খেয়ালে পুতুল বানাত। সেই থেকে প্রতিমা তৈরির নেশা চেপে বসে মাথায়। মাত্র আট বছর বয়স থেকেই প্রতিমা তৈরিতে হাত পাকিয়েছে সে। 

    প্রতিমা বানানো শিখতে সে মাঝেমধ্যেই নোনাই পাড়ের পালপাড়ায় অনিল পালের প্রতিমা তৈরির কারখানায় যেত। ঘণ্টার পর ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থেকে প্রতিমা তৈরির কৌশল শিখেছে সে। তারপর বাড়িতে এসে মাটি নিয়ে প্রতিমা তৈরির কৌশল রপ্ত করেছে সে। 

    এভাবেই আট বছর বয়স থেকে অঙ্কিত প্রতিমা তৈরি করছে। বিক্রির জন্য সে প্রতিমা বানায় না। তবে আশপাশের কোনও পুজো কমিটি অনুরোধ করলে ফেলতে পারে না। তখন নিঃশুল্ক প্রতিমা বানিয়ে দেয়। 

    কিন্তু, কেন ছেলের প্রতিমা তৈরিতে আপত্তি বাবা মায়ের? মা রূপণদেবীর কথায়, আসলে ছেলের এখন পড়াশোনা করার বয়স। আমরা চাইছি আগে পড়াশোনাটাই মন দিয়ে করুক। তারপর বড় হয়ে যদি প্রতিমা তৈরির পোশাক বেছে নেয় তাহলে আমাদের আপত্তি নেই। তাই এবারও প্রতিমা তৈরিতে বারণ করেছিলাম। কিন্তু, ছেলে শোনেনি। ও নিজের বানানো প্রতিমা নিজেই পুজো করবে। আমরা তাতে বাধা দেব না। পুজোর খরচ আমরাই দেব। 

    অঙ্কিত বলে, এই সৃজনশীল কাজ আমার ভালো লাগে। ম্যাকউইলিয়াম হাইস্কুলের ভারপ্রাপ্ত প্রধানশিক্ষক অনিলচন্দ্র রায় বলেন, অঙ্কিতের মধ্যে সুপ্ত প্রতিভা লুকিয়ে আছে। বড় হওয়ার পর ওর এই প্রতিভা আরও বিকশিত হবে। ( নিজের তৈরি প্রতিমায় রং করছে অঙ্কিত। - নিজস্ব চিত্র।)
  • Link to this news (বর্তমান)