• নিয়োগী বাড়িতে পঞ্চমীতে মনসা, অষ্টমীতে দুর্গার সঙ্গে পুজো পান কালী
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ব্রতীন দাস, জলপাইগুড়ি: পঞ্চমীতে মনসা আর অষ্টমীতে দুর্গার সঙ্গে পুজো পান মা কালী। বছরের পর বছর ধরে জলপাইগুড়ির নিয়োগী বাড়িতে চলে আসছে এই রীতি। এবার পুজোর ২১৬ বছর। তবে ঢাকার পাটগ্রাম, কলকাতার ভবানীপুর হয়ে এই পুজো আসে জলপাইগুড়ি শহরের কামারপাড়ায়। বংশধররা যে যাঁর মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে গিয়েছেন। কর্মসূত্রে অনেকেই থাকেন বাইরে। নিয়োগী পরিবারের চা বাগানও নেই। ফলে কিছুটা হলেও ভাটা পড়েছে বনেদিয়ানায়। কমেছে জৌলুস। কিন্তু, আজও অটুট ঐতিহ্য। খামতি নেই নিষ্ঠায়। 

    পাঁচটি দুর্গার চেয়ে এদের প্রতিমা আলাদা। এখানে কার্তিক ও গণেশের অবস্থান উল্টো। মা দুর্গার বাঁদিকে থাকে গণেশ। আর কলাবউ অর্থাৎ নবপত্রিকা থাকে কার্তিকের পাশে। অতসী ফুলের রং মা দুর্গার। একসময় পাঁঠাবলি হতো। ১৯৮৫ সালের পর থেকে তা বন্ধ। পরিবর্তে এখন চালকুমড়ো বলি হয়। আর নবমীতে দেওয়া হয় ‘শত্রু বলি’। কলার থোড়ের উপর চালের গুঁড়ো বেটে তৈরি করা হয় অবয়ব। যার এক গালে চুন, অন্য গালে কালি। চুন ও হলুদ মিশিয়ে তৈরি করা হয় রক্তের মতো রং। তারপর সেই ‘শত্রু’কে বলি দিয়ে ছুড়ে ফেলা হয় বাড়ির বাইরে। একসময় পুজোর চারদিন পাত পেড়ে খাওয়াদাওয়া হতো। বাড়ির সদস্যরা মিলে হতো থিয়েটার। এখন সেসবে ভাটা পড়লেও স্বমহিমায় রয়ে গিয়েছে নবমীতে ‘দুর্গা দই’ খাওয়ার আকর্ষণ (লেবুর পাতা দিয়ে ঘোলের মতো বিশেষ পানীয়)। পূর্ববঙ্গ থেকেই পুজোয় পত্রিকা প্রকাশ হয়ে আসছে। আগে হাতে লেখা পত্রিকা বের হতো। এখন ছাপার অক্ষরে। 

    বাড়ির মেয়ে সেমন্তী নিয়োগী বলেন, প্রথম থেকেই পুজোর মূল দায়িত্বে মেয়ে ও বাড়ির বউরা। ছেলেরা পিছন থেকে সাহায্য করে। এবারও তার ব্যতিক্রম নেই। পুজোর সঙ্গেই চলছে পত্রিকা প্রকাশের তোড়জোড়। পরিবারের প্রবীণ সদস্য শ্যামশ্রী নিয়োগী বলেন, আমাদের কুলদেবতা রঘুনাথ। তবে তিনি সহ ন’জনের পরিবার আছে ঠাকুরঘরে। সেই পরিবারের এক সদস্য মা মনসা। মহাপঞ্চমীতে তার বাৎসরিক পুজো অনুষ্ঠিত হয় দুর্গা মণ্ডপে। আর মহাষ্টমীর রাতে মা দুর্গার পাশেই হয় মা কালীর পুজো। প্রতিপদে চণ্ডীর ঘট স্থাপনের মধ্যে দিয়ে শুরু হয়ে যায় পুজো। দশমীতে অপরাজিতা পুজোর মাধ্যমে শেষ হয় আয়োজন। একসময় করলা নদীতে জোড়া নৌকায় প্রতিমা বিসর্জন হতো। হতো নৌকাবাইচ। যদিও এখন তা অতীত। (নিয়োগী বাড়ির প্রতিমা। - ফাইল চিত্র।)
  • Link to this news (বর্তমান)