• বাবার মার, পিঠের ক্ষতেই ৫২ বছর পর শনাক্ত সৎ ভাই
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, বিধাননগর: ছোটবেলায় মাকে হারিয়েছেন। তারপর একে একে সবই হারিয়ে যায়। বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। আর ভালোবাসা তো দূরের কথা, দু’বেলা খেতেও দিতেন না সৎ মা। তার উপর বাবা কাজ থেকে ফিরলে ১০ বছরের শিশুটির নামে মিথ্যে অভিযোগ তুলতেন। একদিন সেই রাগে মাথার উপর তুলে মাটিতে আছাড় মেরে কোমর ভেঙে দিয়েছিলেন বাবা। তারপর যখন উঠে দাঁড়াতে শুরু করল শিশুটি তখন একদিন ফের তার পিঠে ধারাল কাস্তের কোপ বসিয়ে দিয়েছিলেন। ফালা ফালা হয়ে গিয়েছিল পিঠ। এরপর বাবা ও সৎ মা মিলে বিক্রি করে দেন শিশুটিকে। তারপর জীবন আরও নারকীয় হয়ে পড়ে। একসময় ঠাঁই হয় সরকারি হোমে। ১০ বছরের শিশুটির আজ ৬২ বছর বয়স। ৫২ বছর পর বাবার কাস্তের আঘাতে তৈরি পিঠের সেই দাগ দেখে তাঁকে চিনতে পারলেন তাঁর ভাই। সৌজন্যে ওয়েস্ট বেঙ্গল রেডিও ক্লাব (অ্যামেচার রেডিও) বা হ্যাম রেডিও। বুধবার ভাইয়ের সঙ্গে বাড়ি ফিরছেন দাদা রাজকুমার ভুঁইঞা।

    হ্যাম রেডিও সূত্রে জানা গিয়েছে, গরিব পরিবারে জন্মেছিলেন রাজকুমারবাবু। তাঁর বাবা চাষের কাজ করতেন। বিক্রি হওয়ার বেশ কিছুদিন পর নানা জায়গা ঘুরে তাঁর ঠিকানা হয় দিল্লির একটি হোম। সেখান থেকে বছর দশেক আগে হাওড়ার একটি হোমে স্থানান্তর করা হয়। রাজকুমারবাবু ঝরঝরে বাংলা বলেন। হোম কর্তৃপক্ষ তাঁকে বাড়ি ফেরাতে উদ্যোগী হয়। তারা যোগাযোগ করে হ্যাম রেডিওর সাধারণ সম্পাদক অম্বরীশ নাগ বিশ্বাসের সঙ্গে। কিছুদিন পর রাজকুমারের বাড়ির খোঁজ মেলে ওড়িশার সুন্দরগড় জেলায়। খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বাবা ও সৎ মা’র মৃত্যু হয়েছে অনেক আগেই। ছোট ভাই রয়েছেন পরিবারে। ভিডিও কলে দু’জনের কথা বলানো হয়। কিন্তু রাজকুমারবাবু বেঁচে আছেন বিশ্বাস করতে চাইছিলেন না কেউ। ভিডিও কলে ভাই বলেন,  দাদার পিঠে কাস্তের আঘাতের ক্ষত আছে। তারপর জামা খোলেন দাদা। দেখে চমকে উঠেন ভাই। এই তো সেই দাগ! তার মানে সত্যিই দাদা বেঁচে আছেন! এবার বাড়ি ফেরার পালা। অম্বরীশবাবু বলেন, প্রথমে ভাই বেঁকে বসেন। বলেন,  ৬২ বছর বয়স হয়ে গিয়েছে। এখন বাড়ি ফিরে করবে কী! আপনারাই রাখুন। আমি মাঝে মধ্যে আমি গিয়ে দেখে আসব! তারপর আমরা সুন্দরগড় জেলার জেলাশাসক শ্রী মনোজ সত্যওয়ান মহাজনকে বিষয়টি জানিয়ে তাঁর হস্তক্ষেপ চাই। উনি দ্রুত পদক্ষেপ নেন। জেলাশাসক নির্দেশ দিয়েছেন, রাজকুমারবাবুর যাতে কোনও অসুবিধা না হয় তা দেখতে হবে।আজ তাঁর ভাই কলকাতাতেই আছেন। আজই তাঁরা রওনা দেবেন বাড়ির উদ্দেশে। অবশেষে ৫২ বছর পর নিজের বাড়ি ফিরছেন রাজকুমারবাবু। 
  • Link to this news (বর্তমান)