প্লাবিত আরামবাগ মহকুমা পরিদর্শনে এসে ডিভিসি-র অতিরিক্ত জল ছাড়াকেই দুষলেন সেচমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া। সোমবার থেকে একা দ্বারকেশ্বর নদের তাণ্ডবের পরে মঙ্গলবার বাকি দামোদর নদ এবং তার শাখা মুণ্ডেশ্বরী নদী ও রূপনারায়ণ নদও পাড় উপচে বা ভেঙে গ্রামের পর গ্রাম ভাসাচ্ছে। মানস বলেন, ‘‘প্রাকৃতিক দুর্যোগের পাশাপাশি ডিভিসি অতিরিক্ত জল ছাড়ায় নদ-নদীগুলির বাঁধ ভাঙার উপক্রম হচ্ছে। এখন আমাদের প্রথম কাজ, বাঁধের দিকে নজর রাখা এবং মানুষকে উদ্ধার করা। সকলকে নিরাপদ জায়গায় তোলার পাশাপাশি খাদ্য, পানীয় জল ইত্যাদি পৌঁছে দেওয়া জরুরি। সেই সব ব্যবস্থাই জেলাশাসক করেছেন।”
সোমবার থেকে বাঁকুড়া ক্যাচমেন্ট থেকে আসা ৮০ হাজার কিউসেক জল দ্বারকেশ্বর নদের খানাকুল ১ ব্লকের কিশোরপুর ১ ও ২ পঞ্চায়েত এলাকার দু’টি বাঁধ ভেঙে বিধ্বস্ত হয়েছে মহকুমার ১৫টি পঞ্চায়েত ও পুরসভার ৮টি ওয়ার্ড। জলবন্দি হয়েছেন প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। মঙ্গলবার ফের ওই নদেরই খানাকুল ২ ব্লকের ধান্যগোড়ি গ্রামের খুঁটেপাড়া এবং দানাপাড়ার মাঝমাঝি বাঁধ ভাঙল বিকেল সাড়ে ৩টা নাগাদ। তার জেরে আরও ১০-১২টি পঞ্চায়েত এলাকা জলমগ্ন হয়েছে বলে প্রশাসন সূত্রের খবর। এ দিন বিকেল পর্যন্ত প্রায় আড়াই হাজার মানুষকে নিরাপদ জায়গায় সরানো হয়েছে।
জেলা সেচ দফতর সূত্রে জানা গিয়েছে, এ দিনও চরম বিপদসীমার দেড় মিটার উপর দিয়ে জল বইছে দ্বারকেশ্বর নদে। তার উপরে, সকালে ডিভিসি ১ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়ায় দামোদর এবং তার শাখা মুণ্ডেশ্বরী নদীও ভয়ানক আকার নিয়েছে। নদ-নদী সংলগ্ন সমস্ত পঞ্চায়েত এলাকাগুলিতে ‘হাই অ্যালার্ট’ জারি করে মাইকে প্রচার চলছে। ফেরি চলাচল বন্ধ। বন্যাপ্লাবিত এলাকার সমস্ত স্কুলেও জল না নামা পর্যন্ত ছুটি ঘোষণা করেছে প্রশাসন।
ডিভিসির ছাড়া জলে জাঙ্গিপাড়ার রসিদপুর, রাজবলহাট, কেশবচক, চাঁপাডাঙা জলমগ্ন হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে মহকুমাশাসকের কার্যালয়ে প্রশাসনিক বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলার সময়ে মানস অভিযোগ করেন, “একবারে ২ লক্ষ ৫০ হাজার কিউসেক জল ছাড়া কখনও কেউ শুনেছেন? এ কী অন্যায় হচ্ছে!” তিনি জানান, মুখ্যমন্ত্রী বহু বার বলেছেন, অনুগ্রহ করে জল ছাড়ার আগে সরকারের সঙ্গে কথা বলে দফায় দফায় জল ছাড়ুন। কিন্তু অবস্থার পরিবর্তন হয়নি। তাঁর আরও অভিযোগ, “পশ্চিমবঙ্গ ভারতের অঙ্গরাজ্য হলেও বন্যা নিয়ন্ত্রণে গত কয়েক বছরে রাজ্যের জন্য একটা পয়সাও কেন্দ্রীয় বাজেটে ধরা হয়নি। কেন এই বঞ্চনা?”
এ নিয়ে বিজেপির রাজ্য সম্পাদক তথা আরামবাগ সাংগঠনিক জেলার সভাপতি ও পুরশুড়া বিধায়ক বিমান ঘোষ বলেন, “উনি মিথ্যাচার করছেন। প্রতি বারই জল ছাড়ার আগে ডিভিসি থেকে রাজ্য সরকার সহ মুখ্যমন্ত্রীকে জানানো হয়।” একই সঙ্গে বাঁধ রক্ষণাবেক্ষণ নিয়ে যথাযথ পরিকাঠামো তৈরি করতে সেচমন্ত্রী এবং তাঁর দফতরের ব্যর্থতার জন্য বাঁধ ভেঙে এলাকা প্লাবিত হচ্ছে বলে অভিযোগ বিমানের।