অশান্ত মণিপুর। দুর্গাপুজোর আগেই ভিন্ রাজ্যের এই অসন্তোষ প্রভাব ফেলেছে এ রাজ্যের উত্তরবঙ্গের ঢাকি মহল্লায়। প্রত্যেক বার দুর্গাপুজোর আগেই মণিপুরের ইম্ফল, নাগাল্যান্ডের কোহিমা, ডিমাপুর এবং অসমের বিভিন্ন জায়গায় ঢাক বাজানোর বরাত পান আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার, হলদিবাড়ি থেকে উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার ঢাকি বা ঢাকবাদকেরা। এ বছর মণিপুরে কয়েক মাস ধরে গোলমালের কারণে উত্তর-পূর্বের বাকি রাজ্যগুলো থেকেও ডাক পড়েনি তাঁদের। ফলে, দুশ্চিন্তা বেড়েছে ঢাকবাদকদের।
উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন এলাকার ঢাকিদের অধিকাংশের ভিড় বাড়তে শুরু করেছে শিলিগুড়িতে। তাঁরা বিশ্বকর্মা পুজোতেই শহরের টাউন স্টেশন এবং শহরের বিভিন্ন রাস্তায় জমায়েত করছেন বরাতের অপেক্ষায়। এ দিন বেশ কিছু ঢাকিকে বিশ্বকর্মা পুজোয় বাজানোর বরাত না পেয়ে ফিরতে হয়েছে। ফলে, আগমনীর আগেই যেন বিসর্জনের সুর ঢাকিদের একাংশের মধ্যে।
প্রত্যেক বার শহরে প্রচুর বিশ্বকর্মা পুজো হয়। কিন্তু এ বছর পুজোর বহর, জৌলুস কিছু এলাকায় কমেছে বলে দাবি আয়োজকদের একাংশের। কিছু এলাকায় বক্সে ঢাকের বাজনা বাজিয়েও পুজো হয়েছে। কোথাও ঢাক ছাড়াই পুজো হয়। ফলে, ঢাকিদের কদর কমেছে। তবে শহরে এ বছর বিশ্বকর্মাতেই প্রচুর ঢাকির আগমন হওয়ায় অনেকে বরাত পাননি বলে মনে করছেন ঢাকিদেরই একাংশ।
ধূপগুড়ির ঢাকি রঞ্জিত দাস বরাত না পেয়ে শহরের রাস্তায় তাঁর দলকে নিয়ে ঘুরছিলেন। তিনি জানান, দুর্গাপুজোয় বাজানোর জন্য অসমের তিনসুকিয়া থেকে বরাত পেয়েছেন। কিন্তু সেখানে বিভিন্ন সময় গন্ডগোলের কথা শুনছেন বলে দাবি। ফলে শিলিগুড়ির দিকে বরাত পেলে, সেখানে না-ও যেতে পারেন তিনি। রঞ্জিত বলেন, ‘‘ঢাক বাজিয়েই সংসার। পুজোয় বেশি লাভের আশায় ভিন্ রাজ্যে যেতে হয়। কিন্তু এ বছর উত্তরবঙ্গেই বরাত খুঁজছি।’’
টাউন স্টেশনে বরাত না পেয়ে বসে ঝিমোচ্ছিলেন হলদিবাড়ির ঢাকি সুধাংশু হাজরা, কল্যাণ ঋষিরা। তাঁরা জানান, বিগত বছরগুলিতে কখনও অসমে কখনও ডিমাপুরে পুজোয় বাজাতে যেতেন। এ বছর বরাত পাননি। ফলে শিলিগুড়িতে আসতে হয়েছে। কিন্তু সেখানেও কেউ বাজাতে ডাকেনি তাঁদের। ফলে, নিরাশ হয়ে ফিরতে হয়েছে। সুধাংশু বলেন, ‘‘ঢাক বাজিয়েই সংসার। স্থানীয় স্তরে বরাত পেলে কি আর ভিন্-রাজ্যে যেতে হয়?’’ তাঁরা শিলিগুড়িতে আরও কিছুদিন বরাতের অপেক্ষায় থাকবেন বলে জানিয়েছেন।