সুখেন্দুশেখরের ইস্তফা, দলীয় মুখপত্রের সম্পাদক শোভনদেব
এই সময় | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
এই সময়: তৃণমূলের দৈনিক মুখপত্রের সম্পাদক পদে এ বার বদল। বর্ষীয়ান সাংসদ সুখেন্দুশেখর রায় তৃণমূলের ‘জাগো বাংলা’র সম্পাদক পদে সোমবার রাতে ইস্তফা দেওয়ায় রাজ্যের কৃষিমন্ত্রী, প্রবীণ রাজনীতিক শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়কে এই দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। লেখালিখির দীর্ঘ অভিজ্ঞতা থাকায় শোভনদেবকে এ দিন দৈনিক মুখপত্রের সম্পাদনার দায়িত্ব দেন তৃণমূল সুপ্রিমো মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।শোভনদেবের কথায়, ‘মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ফোন করে আমাকে বলেন, আপনি তো দীর্ঘদিন লেখালিখি করেন। পত্রিকা চালানোর অভিজ্ঞতা রয়েছে। তাই, আপনি জাগো বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নিন। আপনার কোনও আপত্তি নেই তো? আমি বলি, আপনি যেখানে বলছেন, সেখানে আপত্তির প্রশ্ন ওঠে না।’
ছাত্র আন্দোলন থেকে শ্রমিক আন্দোলন করার সূত্রে শোভনদেব বিভিন্ন সময়ে একাধিক পত্র-পত্রিকা সম্পাদনার কাজ করেছেন। তিনি কবিতাও লেখেন। রাজ্যের কৃষিমন্ত্রীর কথায়, ‘সেই ষাটের দশকে প্রথম কাগজ বার করেছিলাম। যুব কংগ্রেসে থাকার সময়েও একটি কাগজ বার করতাম। এখনও একটি কাগজ চালাই।’
রাজ্যের প্রাক্তন শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর সুখেন্দুশেখর তৃণমূলের দলীয় মুখপত্রের সম্পাদনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন। কিন্তু অগস্টে আরজি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনা নিয়ে প্রকাশ্যে কলকাতা পুলিশের বিরুদ্ধে অসন্তোষ প্রকাশ করে ফেসবুক পোস্ট করেছিলেন তিনি। সুখেন্দুর ফেসবুক পোস্ট নিয়ে লালবাজার চিঠি দিয়ে তলব করে প্রবীণ এই সাংসদকে। দলের একাংশের সমালোচনার মুখেও পড়েন সুখেন্দু। এই পর্বে ক্রমেই তৃণমূলের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি হচ্ছিল প্রবীণ এই নেতার।
এই পরিস্থিতিতে সোমবার দলের শীর্ষ নেতৃত্বকে চিঠি দিয়ে দৈনিক মুখপত্রের সম্পাদক পদে ইস্তফা দেন সুখেন্দু। তবে এ নিয়ে মঙ্গলবার সুখেন্দুশেখর রায়ের বক্তব্য, ‘ব্যক্তিগত কারণে জাগো বাংলার সম্পাদক পদ ছেড়েছি। এই পদের প্রতি আমি কোনও সুবিচার করতে পারছি না। পার্থ চট্টোপাধ্যায় গ্রেপ্তার হওয়ার পর আমাকে থাকতে বলল। আমি না করিনি। কাগজটা খুব ভালো ভাবে চলছে। সেখানে হস্তক্ষেপের কোনও জায়গা নেই। যেখানে ভালো ভাবে চলছে, সেখানে আমার থেকে কী লাভ?’
সোমবার রাতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কালীঘাটে নিজের বাড়িতে জুনিয়র ডাক্তারদের সঙ্গে বৈঠক করার পর রাজ্য সরকারের তরফে প্রশাসনিক রদবদলের একগুচ্ছ সিদ্ধান্ত ঘোষিত হয়। কলকাতার পুলিশ কমিশনারের পদ থেকে বিনীত গোয়েলকে মঙ্গলবার বিকেলে সরানো হবে বলে সেই সময়ে মুখ্যমন্ত্রী ঘোষণা করেন।
সেই সিদ্ধান্ত নিয়ে সোমবার গভীর রাতে সুখেন্দু এক্স হ্যান্ডলে লিখেছেন, ‘আমার দু’টি দাবি ছিল। আরজি কর মেডিক্যাল কলেজের শীর্ষকর্তা এবং কলকাতা পুলিশের শীর্ষকর্তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করতে হবে। লক্ষ লক্ষ মানুষের আন্দোলন এবং জুনিয়র ডাক্তারদের আন্দোলনের ফলে সেই দাবি অনেকাংশে মান্যতা পেয়েছে। সবার মতো আমিও খুশি।’ তা ছাড়া, ‘সত্যমেব জয়তে’ লেখা একটি স্ক্রিনশট-ও এক্স হ্যান্ডলে পোস্ট করেন সুখেন্দু।
যদি এই নিয়ে তৃণমূলের তরফে কোনও প্রতিক্রিয়া দেওয়া হয়নি। দলের প্রাক্তন সাংসদ কুণাল ঘোষ এ দিন বলেন, ‘দলনেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং দলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের অনুমোদনক্রমে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় সম্পাদকের (‘জাগো বাংলা’র) দায়িত্ব নিয়েছেন।’ এ দিন শোভনদেব তৃণমূল ভবনে ছিলেন। প্রতি বছর তৃণমূল ভবনে বিশ্বকর্মা পুজো হয়। সেই পুজোয় পুরোহিতের ভূমিকায় থাকেন শোভনদেব। এ দিনও তৃণমূল ভবনে বিশ্বকর্মা পুজোর পুরোহিতের দায়িত্ব সামলান তিনি। আজ, বুধবার তিনি আনুষ্ঠানিক ভাবে নতুন দায়িত্ব নেবেন।