এই সময়: দার্জিলিংয়ের হনুমানঝোরা অঞ্চলে টানেল-সিক্স নামে পরিচিত সুড়ঙ্গটির দৈর্ঘ্য ৩৯৪৮ মিটার। যা প্রায় ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ সেবক-রংপো নির্মীয়মাণ রেল রুটের ১০ ভাগের এক ভাগও নয়। তবুও এই অংশের কাজ শেষ করে উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ইঞ্জিনিয়াররা তাকে ‘বড় সাফল্য’ বলে মনে করছেন। সুড়ঙ্গ তৈরির পাশাপাশি এখানে ৫৯৯ মিটার দীর্ঘ একটি ইভ্যাকুয়েশন টানেলও তৈরি করা হয়েছে।হিমালয়ের ভূমিকম্প-প্রবণ এলাকায় ২০২৪ সাল শেষ হওয়ার অনেকটা আগেই টানেল-সিক্স নির্মাণের কাজ শেষ করে ফেলা ভারতীয় রেলের ইঞ্জিনিয়ারদের দক্ষতার পরিচয় বলেই দাবি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের।
এই প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত ভারতীয় রেলের ইঞ্জিনিয়াররা জানাচ্ছেন, ‘সিকিম রেলওয়ে প্রজেক্ট’ নামে পরিচিত এই প্রকল্পের কাজটিকে তিনটি ফেজ়ে ভাগ করা হয়েছে। প্রথম ফেজ়ে বাংলার সেবক যুক্ত হবে সিকিমের রংপোর সঙ্গে। দ্বিতীয় ফেজ়ে রংপোকে যুক্ত করা হবে গ্যাংটকের সঙ্গে। তৃতীয় বা শেষ ফেজ়ে গ্যাংটককে চিন সীমান্তের নাথু লা-র সঙ্গে যোগ করা হবে। এর মধ্যে সেবক ও রংপোর মাঝখানের ৪৪.৯৬ কিলোমিটার দীর্ঘ রুটে রয়েছে ১৪টি টানেল, ১৩টি বড় ব্রিজ, ৯টি ছোট ব্রিজ এবং সেবক, রিয়াং, তিস্তা বাজার, মেল্লি ও রংপো— এই ৫টি স্টেশন।
এই প্রকল্পের কাজের অগ্রগতি সম্পর্কে সম্প্রতি উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেল একটি বিজ্ঞপ্তি জারি করে জানিয়েছে, প্রথম ফেজ় অর্থাৎ সেবক-রংপো রুটের ৯০ শতাংশ কাজই সম্পূর্ণ। আশা করা হচ্ছে, বছর শেষ হওয়ার আগে বাকি ১০ শতাংশ কাজ শেষ করে ফেলতে পাবেন ইঞ্জিনিয়াররা।
এলাকার ভূতত্ত্বগত গঠন এবং হিমালয়ের এই অংশে ঘন ঘন ভূমিকম্পের কথা মাথায় রেখেই নিউ অস্ট্রিয়ান টানেলিং পদ্ধতিতে সুড়ঙ্গ কাটার কাজ হয়েছে। ইঞ্জিনিয়াররা জানিয়েছেন, ওই প্রযুক্তিগত কৌশলেই ইউরোপে আল্পস পর্বতমালার মধ্যে টানেল তৈরি করেছে ফ্রান্স, জার্মানি, সুইৎজ়ারল্যান্ড, ইতালি, অস্ট্রিয়ার মতো দেশ।
২০০৯ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রেলমন্ত্রী থাকার সময়ে এই প্রকল্পের পরিকল্পনা করা হয়। সেবক ও রংপোর মধ্যে ট্রেন চলাচলের দিকে তাকিয়ে রয়েছেন স্থানীয় সাধারণ যাত্রী এবং পর্যটকরা। একবার এই ৪৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পথে ট্রেন চলতে শুরু করলে সিকিম দেশের অন্যান্য প্রান্তের অনেকটাই ‘কাছে চলে আসবে’ বলে মনে করা হচ্ছে।