• সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত কান্দি মহকুমা, বাঁধ ভেঙে প্লাবিত বিস্তীর্ণ এলাকা, ডুবে মৃত্যু শিশুর
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • সংবাদদাতা, কান্দি: মঙ্গলবার মায়ের হাত ফসকে বন্যার জলে তলিয়ে মৃত্যু হল এক শিশুকন্যার। অন্যদিকে কুয়ে নদীতে নিখোঁজ এক ইটভাটার শ্রমিকও। কার্যত গোটা কান্দি মহকুমা ভাসছে বন্যার জলে। কোথাও বাঁধ ভেঙে আবার কোথাও নদী উপচে বা স্লুইস গেট দিয়ে জল ঢুকে এলাকা প্লাবিত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ বহু পরিবার। কয়েক হাজার হেক্টর আমনের জমি নষ্টের মুখে। নষ্টের মুখে তুঁত গাছও। 


    কান্দির মহকুমা শাসক উৎকর্ষ সিং বলেছেন, মহকুমার বন্যা পরিস্থিতির উপর নজর রাখা হচ্ছে। বিডিওদের এলাকা পরিদর্শন করতে বলা হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্ত প্রতিটি ব্লকে ত্রাণ ও ত্রিপল পাঠানো হয়েছে। আজ থেকেই সর্বত্র ত্রাণশিবির খোলা হবে।


    সোমবার গভীর রাতে খড়গ্রাম ব্লকের মিরহাটি ও ঝাঁঝড়া গ্রামের মাঝামাঝি এলাকায় ভেঙে যায় দ্বারকা নদের বাঁধ। স্থানীয় পদমকান্দি পঞ্চায়েতের অন্তত সাতটি গ্রাম জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ঝাঁঝড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে জল ঢুকেছে। বহু বাসিন্দা উঁচু জায়গায় আশ্রয় নিয়েছেন। এদিন রাতেই স্থানীয় পলাশী গ্রামের কাছে একটি ঘের বাঁধ ভেঙে গিয়েছে। সেখানে দ্বারকার জল ঢুকছে হু হু করে। ফলে সেখানেও কয়েকশো বিঘা জমির ফসল নষ্ট হতে বসেছে। খড়গ্রাম ব্লকের ব্রাহ্মণীর জলস্তরও বেড়ে চলেছে। যাদবপুরের কাছে নদী বাঁধে ফাটল দেখা দিয়েছে। সেচদপ্তর দ্রুততার সঙ্গে বাঁধ মেরামত করছে। 


    সোমবার সকালেই কুয়ে নদীর জল বিপদসীমা ছাড়িয়ে যায়। ফলে বড়ঞা ব্লকের সুন্দরপুর পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়েছে। স্থানীয় সোনাভারুই, ভারোয়া, মজলিশপুর, বৈদ্যনাথপুর, কয়থা গ্রামগুলি জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। গ্রামগুলি যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। বাসিন্দারা গুড়ের কড়াই চড়ে পারাপার করছেন। প্রশাসন নৌকোর ব্যবস্থা না করায় ক্ষুব্ধ বাসিন্দারা।


    এদিন দুপুরে সোনাভারুই গ্রামে বন্যার জলে ডুবে গিয়ে মৃত্যু হয়েছে ছয় বছরের এক শিশুকন্যা। দিস্তা বাগদি নামে ওই শিশুর দেহ স্থানীয় বাসিন্দারা উদ্ধার করে পরে পুলিসের হাতে তুলে দেন। জানা গিয়েছে, গ্রামের বাইরে একটি ত্রাণ শিবির খোলা হয়েছিল। সেই শিবিরেই মায়ের হাত ধরে শিশুটি আসছিল। কিন্তু প্রচণ্ড জলের তোড়ে মায়ের হাত ফস্কে শিশুটি তলিয়ে যায়।


    এদিকে সোমবার গভীর রাত থেকে ভরতপুর ব্লকের আঙারপুর গ্রামে কুয়ে নদীর স্লুইস গেট ভেঙে বন্যার জল ঢুকতে শুরু করে। ফলে ওই গ্রামের প্রায় ২০০টি পরিবার জলবন্দি হয়ে পড়ে। পঞ্চায়েত প্রশাসন এর দায় চাপিয়েছে সেচদপ্তরের উপর। স্থানীয় আলুগ্রাম পঞ্চায়েত প্রধান শাসকদলের জাহিদুল শেখ বলেন, স্লুইস গেটের খারাপ অবস্থার কথা সেচদপ্তরকে বারবার জানান হয়েছিল। কিন্তু মেরামত করা হয়নি। যদিও মঙ্গলবার সকালেই সেচদপ্তরের পক্ষ থেকে স্লুইস গেটে মাটির বস্তা ফেলে বন্ধ করা কাজ শুরু হয়েছে।


    এদিন সকাল ১০টা নাগাদ ভরতপুরের আঙারপুরের কাছে পিয়ারা শেখ নামে এক ইটভাটার শ্রমিক কুয়ে নদীতে তলিয়ে যান। তাঁর বাড়ি স্থানীয় সিজগ্রামে বলে জানা গিয়েছে। তলিয়ে যাওয়ার কিছুক্ষণের মধ্যেই সেখানে পৌঁছয় বিপর্যয় মোকাবিলা বিভাগের কর্মীরা। তবে বিকেল পর্যন্ত নিখোঁজ শ্রমিককে উদ্ধার করা যায়নি।


    প্রসঙ্গত, কুয়ে নদীর আঙারপুর ব্রিজ সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে একটি ইটভাটা। ওই ইটভাটাতেই কাজ করতেন তিনি। জানা গিয়েছে, বারবার বারণ করা সত্ত্বেও কথা না শুনে ওই শ্রমিক একাই জল ডিঙিয়ে বাড়ি ফেরার চেষ্টা করায় তলিয়ে যান। ঘটনাস্থলে পৌঁছেছেন কান্দি এসডিপিও শাশ্রেক আমবারদার ও ভরতপুর ১ বিডিও দাওয়া শেরপা।
  • Link to this news (বর্তমান)