বন্যা পরিস্থিতির অবনতি ঘাটালে, চারটি ব্লক ও দু’টি পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত
বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, ঘাটাল: ঘাটাল মহকুমায় বন্যা পরিস্থিতির ক্রমশ অবনতি হচ্ছে। মঙ্গলবারও প্রতিটি নদীতে বিপদ সীমার উপর দিয়ে জল বইছে। মহকুমার চারটি ব্লক ও দু’টি পুরসভার বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত। জলমগ্ন এলাকায় বিদ্যুৎ নেই। পানীয় জলের তীব্র সঙ্কট দেখা দিয়েছে। প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১২টি ত্রাণ শিবিরে হাজার দেড়েক মানুষকে রাখা হয়েছে। প্রশাসন ও গ্রাম পঞ্চায়েতের পক্ষ থেকে প্রত্যন্ত এলাকায় পানীয় জল পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হচ্ছে। প্রশাসনের উদ্যোগে জলবন্দি এলাকার রোগীদের নৌকা বা স্পিডবোটে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে।
এদিন দুপুরে পশ্চিম মেদিনীপুরের জেলাশাসক খুরশিদ আলি কাদেরি ও পুলিস সুপার ধৃতিমান সরকার প্রতাপপুর সহ কয়েকটি এলাকায় বন্যা পরিস্থিতি পরিদর্শনে আসেন। জেলাশাসক সাধারণ মানুষকে আশ্বাস দিয়ে বলেন, আমরা পুরো পরিস্থিতির দিকে নজর রেখেছি। প্রশাসন পাশে রয়েছে।
সেচদপ্তর সূত্রে জানানো হয়েছে, দাসপুর-১ ব্লকের গাদিঘাটে শিলাবতী নদীতে, ঘাটাল ব্লকের বন্দর ও দাসপুর-২ ব্লকের রানিচকে রূপনারায়ণের জলস্তর অতিরিক্ত বিপদ সীমার উপর দিয়ে বইছে। চন্দ্রকোণার বাঁকাতে শিলাবতী এবং দাসপুর-১ ব্লকের কল্মিজোড়ে কংসাবতী নদীর জলস্তর অতিরিক্ত বিপদ সীমার উপরেই রয়েছে। মহকুমা শাসক সুমন বিশ্বাস বলেন, আমরা পরিস্থিতির উপর ২৪ ঘণ্টা নজর রাখছি। প্রত্যেক ব্লক ও পুরসভায় কন্ট্রোলরুম খোলা হয়েছে। পর্যাপ্ত সংখ্যক নৌকাও রয়েছে। এনডিআরএফ, এসডিআরএফ ও সিভিল ডিফেন্স কাজ করে চলেছে।
সোমবার বিকেলের পর থেকেই নদীগুলিতে হু হু করে জল বাড়ছে। ফলে ঘাটাল পুরসভার ১৩টি, খড়ার পুরসভার পাঁচটি ওয়ার্ড জলমগ্ন হয়েছে। এছাড়া ঘাটাল ব্লকের ১০টি গ্রাম পঞ্চায়েত, দাসপুর-১ ব্লকের রাজনগর ও নিজনাড়াজোল গ্রামপঞ্চায়েত এবং চন্দ্রকোণা-১ ও চন্দ্রকোণা-২ মিলিয়ে পাঁচটি গ্রাম পঞ্চায়েতের বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়। রাস্তা বেশিরভাগই ডুবে গিয়েছে। ঘাটাল ব্লক ও ঘাটাল পুরসভা এলাকার অবস্থা আরও বেশি ভয়াবহ। ঘাটাল থানা, ঘাটাল পুরসভার কার্যালয়, বিডিও অফিস, বিদ্যুৎ দপ্তরের ডিভিশনাল অফিস ও গ্রাহক পরিষেবা কেন্দ্রও জলবন্দি। শিলাবতী নদীর জলস্ফীতির জেরে এদিন সকাল থেকে মহকুমার প্রধান বাণিজ্য কেন্দ্র ঘাটালের কুঠিবাজারে জল দাঁড়িয়ে গিয়েছে। ফলে দোকানপাট সব বন্ধ।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন নিগমের ঘাটালের ডিভিশনাল ম্যানেজার বিশ্বদেব বিশ্বাস বলেন, বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে যাওয়ার কারণে ঘাটাল ডিভিশনের ৪২৯টি ট্রান্সফর্মার থেকে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা বন্ধ রাখা হয়েছে। এদিকে বিদ্যুৎ না থাকার কারণে এলাকার সাবমার্সিবল বা ব্যক্তিগত মোটর চালিত পাম্পগুলি চালানো যাচ্ছে না। ফলে জলবন্দি এলাকার মানুষ পানীয় জলের সঙ্কটের মধ্যে রয়েছে। বহু মানুষ মোবাইলে রিচার্জ করতে পারছেন না।
বৃষ্টির কারণে কিছু মাটির বাড়ি ভেঙে পড়লেও হতাহতের খবর নেই। ত্রাণ নিয়ে সেঅর্থে কোনও অভিযোগ নেই। তবে বন্যার ফলে বহু মানুষ সাপের ছোবল খেয়েছেন। মহকুমা শাসক বলেন, আটজন সাপে কাটা রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। ত্রাণের কোনও সমস্যা নেই। ঘাটাল মহকুমা সেচ ও জলপথ দপ্তরের অ্যাসিস্ট্যান্ট ইঞ্জিনিয়ার উজ্জ্বল মাখাল বলেন, বাঁধের কয়েকটি জায়গায় প্রাথমিক সমস্যা দেখা গিয়েছিল। সেগুলি যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতি করে দেওয়া হয়েছে। আমরা ২৪ ঘণ্টা বাঁধের উপর নজর রাখছি। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা পরিষদের পূর্ত কর্মাধ্যক্ষ নির্মল ঘোষ এদিন বন্যা পরিদর্শনে আসেন। তিনি বলেন, বেশকিছু গ্রামীণ রাস্তা নষ্ট হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। বন্যার জল কমলে সেগুলি মেরামতির ব্যবস্থা করা হবে।