• নদীর উপর দিয়ে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত, সেতুর দাবি বিনপুর-২ ব্লকের বাসিন্দাদের
    বর্তমান | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • নিজস্ব প্রতিনিধি, ঝাড়গ্রাম: বর্ষার সময় গ্ৰামের পাশে তারাফেনি নদীতে বুক সমান জল বাড়ে। নদীর উপর দিয়ে যাতায়াত বন্ধ হয়ে যায়। ঝাড়গ্ৰামের বিনপুর-২ ব্লকের বিন্দাধরা, করসাই, বাঁশজুরি, বড়ডাঙা গ্ৰামের বাসিন্দাদের ঘুরপথে সাত কিমি কাদাজলের রাস্তা দিয়ে যাতায়াত করতে হয়। স্কুলে যেতে পারে না গ্ৰামের পড়ুয়ারা। সমস্যা সমাধানে নদীর উপর সেতুর দাবি তুলছে গ্ৰামবাসী।


    ঝাড়গ্ৰাম জেলার সীমান্তবর্তী এলাকা বিনপুর-২ ব্লক। এখান দিয়েই বয়ে গিয়েছে খরশ্রোতা তারাফেনি নদী। জুন থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নদীতে বুক সমান জল থাকে। স্থানীয় গ্ৰামবাসীরা হাঁটু সমান জলের উপর দিয়ে বছরের অন্য সময় যাতায়াত করেন। স্কুল, কলেজ, বাজার, বাসস্ট্যান্ড, স্বাস্থ্যকেন্দ্র নদীর উল্টো দিকের হাড়দা এলাকায়। বর্ষায় নদীতে জল বাড়লে বিন্দাধরা, করসাই, বড়ডাঙা সহ ছয়-সাতটি গ্ৰামের বাসিন্দাদের সাত কিমি ঘুরপথে হাড়দা আসেন। সেই রাস্তাও বর্ষার দু’মাস কাদাজলে ভর্তি থাকে। জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সদ্য রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে।


    যাতায়াতের সুবিধার জন্য বুক সমান জল পেরিয়েই গ্ৰামবাসীরা প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে হাড়দা এলাকায় আসেন। নদীতে হেঁটে পারাপার করতে গিয়ে এই মরশুমে দু’জনের মৃত্যু হয়েছে। বর্ষার এইসব এলাকার পড়ুয়ারা স্কুলে যেতে পারে না। দু’মাস বাড়িতে থাকতে হয়। গ্ৰামবাসীরা দীর্ঘদিন ধরে তারাফেনি নদীর উপর সেতু বা কজওয়ে তৈরির দাবি তুলছেন। সেই দাবি আজও পূরণ হয়নি। বিন্দাধরা গ্ৰামের বাসিন্দা সাধন সর্দার বলেন, আমরা কীভাবে বেঁচে আছি বাইরের জগতের মানুষ জানেন না। স্বাধীনতার এত বছর পেরিয়ে যাওয়ার পরেও এই এলাকার সেভাবে উন্নয়ন হয়নি। সামান্য প্রয়োজন মেটাতে ভাঙাচোরা খানাখন্দ ভরা সাত কিমি রাস্তা পেরিয়ে হাড়দা যেতে হয়। যাতায়াতের সুবিধার্থে বুক সমান নদীর জল পেরিয়ে গ্ৰামের বাসিন্দারা হাড়দাতে যান। বেহাল রাস্তা ও নদী পেরিয়ে ছোট ছেলেমেয়েরা স্কুলে যেতে পারে না। সেতুটি তৈরি হলে আমাদের দীর্ঘদিনের সমস্যা মিটবে। অভিভাবক অজয় সর্দার বলেন, সেতু হলে ছেলেমেয়েরাও স্কুলে যেতে পারবে। সাতটা আটটা গ্ৰামের বাসিন্দাদের সুবিধা হবে। বিন্দাধরা গ্ৰামের শিশুশিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষিকা অঞ্জলি ঘোষ বলেন, আমার বাড়ি হাড়দা এলাকায়। সাত কিমি কাদাজল ভর্তি রাস্তা ঘুরে সবসময় স্কুলে আসা যায় না। প্রাণের ঝুঁকি নিয়ে বাধ্য হয়ে বুক সমান নদীর জল পেরিয়ে শিশুশিক্ষা কেন্দ্রে আসতে হয়। বছরের পর বছর কষ্ট করে এইভাবে এখানে আসতে হচ্ছে। এই পরিস্থিতির কথা প্রশাসনের অজানা নয়। হাড়দা রামকৃষ্ণ হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক সুদীপ্ত গিরি বলেন, বর্ষার সময় তারাফেনি নদীর ওপারের গ্ৰামগুলি থেকে ছেলেমেয়েরা দু’মাস স্কুলে আসতে পারে না। যার জেরে এইসময়ে স্কুলে যা পড়ানো হয় তা জানতে পারে না। আগের পড়া ভুলে যায়। ৫০ থেকে ৫৫জন পড়ুয়া এই মরশুমে স্কুলে আসতে পারেনি। সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে আমরাও জানি না। জেলা পরিষদের সভাধিপতি চিন্ময়ী মারান্ডি বলেন, সমস্যার বিষয়ে অবগত আছি। এলাকার রাস্তাটি সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ওই এলাকায় একটি স্কুল ও তারাফেনি নদীর উপর সেতু দরকার। পদে বসেই উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।  


    (ঝাড়গ্রামের মানিকপাড়ায় বিপদসীমার উপর দিয়ে বইছে জল।-নিজস্ব চিত্র)
  • Link to this news (বর্তমান)