ভাইরাল অডিও কাণ্ডে কোন যুক্তিতে গ্রেপ্তার সিপিএম যুব নেতা কলতান? রিপোর্ট তলব হাই কোর্টের
প্রতিদিন | ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪
গোবিন্দ রায়: আন্দোলনকারী জুনিয়র চিকিৎসকদের উপর হামলার পরিকল্পনা সংক্রান্ত একটি অডিও প্রকাশ করেন কুণাল ঘোষ। ওই অডিও কাণ্ডে গ্রেপ্তার হন ডিওয়াইএফআই নেতা কলতান দাশগুপ্ত। বর্তমানে পুলিশ হেফাজতে রয়েছেন তিনি। দ্বারস্থ হয়েছেন কলকাতা হাই কোর্টে। কোন যুক্তিতে গ্রেপ্তার করা হল কলতানকে? রাজ্যের রিপোর্ট তলব করল হাই কোর্ট। বৃহস্পতিবার মামলার শুনানির সম্ভাবনা।
এদিন বিচারপতি রাজর্ষি ভরদ্বাজের এজলাসে মামলাটি ওঠে। শুনানির শুরুতে কলতানের আইনজীবী বিকাশ রঞ্জন ভট্টাচার্য বলেন, “চিকিৎসকদের আন্দোলনের মধ্যে শাসক দলের এক নেতা একটি অডিও রেকর্ডিং সামনে নিয়ে আসেন। পুলিশ FIR দায়ের করে। আন্দোলনে গণ্ডগোল পাকানোর পরিকল্পনা করছিল বলে অভিযোগ। পুলিশ স্বতঃপ্রণোদিত অভিযোগ দায়ের করে FIR করে। কার কাছ থেকে পেনড্রাইভ সংগ্রহ করা হয়েছে তার কোনও উল্লেখ নেই। কোনও নোটিস দেওয়া হয়নি।” এর পরই কলতানের বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ খারিজ করে দিয়ে বিকাশবাবু আরও বলেন, “অডিও ক্লিপে থাকা কথোপকথন কখনই কলতানের সঙ্গে হয়নি। সঞ্জীব দাসের থেকে কোনও ফোন কলতান পাননি। যদি তর্কের খাতিরে ধরেও নেওয়া যায় যে কলতানের সঙ্গে সঞ্জীব দাসের সঙ্গে কথা হয়েছে, তাহলেও যেখানে তিন বছরের কম সাজা রয়েছে সেক্ষেত্রে কী এভাবে গ্রেপ্তার করা যায়?” কলতান আদৌ জামিনের আবেদন করেছেন কিনা, তা জানতে চান বিচারপতি।
বিকাশবাবু এর পর বলেন, “নিম্ন আদালতে আমার মক্কেলকে পেশ করা হয়েছিল। সাত দিনের পুলিশি হেফাজতের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। তাই হাই কোর্টে জামিনের আবেদন করা যায়নি।” গ্রেপ্তারি প্রসঙ্গে বিচারপতি এর পর বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন,”কেউ যদি আমাকে ফোন করেন এবং আমি যদি ফোন ধরি তাহলে যিনি ফোন করেছেন তিনি তার যা ইচ্ছা বলতে পারেন। তার উপর তো আমার কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। আমি তো ভয় পাচ্ছি, তাহলে কি কোনো অপরিচিত নম্বর থেকে ফোন আসলে ধরতে পারব না?” কলতানের আইনজীবীর সওয়াল, “কন্ঠস্বর পরীক্ষা করা হোক। কণ্ঠস্বর সম্পর্কে নিশ্চিত না হয়ে কীভাবে গ্রেপ্তার করা হল? ধরুন, আমি সারাদিনে ৩০টি ফোন ধরি। সেখানে কেউ যদি আমাকে এসব বলে তাহলে তার ভিত্তিতে কি আমাকে গ্রেপ্তার করা যায়?”
রাজ্যের আইনজীবী এর পর বলতে শুরু করেন। তিনি জানান, ভাইরাল অডিও কাণ্ডে অপর ধৃত সঞ্জীব দাস জেরায় কলতান দাশগুপ্তর নাম বলেন। দুজনের কল রেকর্ড খতিয়ে দেখা হয়। দেখা যায় সঞ্জীবের ফোন থেকে কলতানের ফোনে ফোন গিয়েছে। সঞ্জীবের বয়ানের ভিত্তিতে কলতানকে গ্রেপ্তার করা হয়। মামলাকারীর আইনজীবীর সওয়াল, পুলিশ অন্য মামলায় জড়িয়ে দিতে পারে। এর পর অ্যাডভোকেট জেনারেল বলেন, “এই ধরনের সন্দেহ অমূলক। পুলিশ চাইলে আরও ১০০টা মামলায় জড়িয়ে দিতে পারে, কিন্তু সেটা হয় না।” রাজ্যের আইনজীবী কলতানের বিরুদ্ধে তদন্তে অসহযোগিতার অভিযোগ করে বলেন, “সাক্ষ্য গ্রহণের সময় দুজনেই জানায় যে তাদের মধ্যে কথা হয়েছে। দুটি মোবাইল বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। তদন্তে কলতান সহযোগিতা করছেন না। মোবাইল আনলক করছেন না।”
বিচারপতি এর পর স্পষ্ট করে বলেন, “সাক্ষ্য গ্রহণ হয়েছে গ্রেপ্তারির পর, কিন্তু এখানে তো গ্রেপ্তারিকেই চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে। এখনও পর্যন্ত যে তথ্যপ্রমাণ আছে তার ভিত্তিতে কাউকে গ্রেপ্তার করা যায়? আপনাদের বক্তব্য থেকে বোঝা যাচ্ছে, প্রথমে আপনারা সঞ্জীব দাসকে গ্রেপ্তার করেন। তাঁর বয়ান রেকর্ড করেন। সেখান থেকে কল রেকর্ড খতিয়ে দেখেন। এবং তার পর কলকাতা দাশগুপ্তকে গ্রেপ্তার করেন।” রাজ্যের আইনজীবীর দাবি, দুই ধৃত অপরাধ স্বীকার করে নিয়েছে। বিচারপতি প্রশ্ন করেন, “ধৃতরা কি পরিকল্পনা করেছিলেন? তারা হামলা চালাবে যাতে রাজ্যের আইনশৃঙ্খলা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। তাই তো? কলতান দাশগুপ্তর অপরাধের কোনও পূর্ব ইতিহাস আছে?” আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য স্পষ্ট জানান, “না।” রাজ্যের সওয়াল, “কেউ প্রথমবারের জন্য কোনও অপরাধ করতেই পারেন।” সঞ্জীব দাসকে গ্রেপ্তারির এফআইআর কোথায়, তা নিয়ে প্রশ্ন করেন বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্য। তবে রাজ্যের দাবি, ধৃত দুজন হলেও FIR একটিই। আগামীকাল এবিষয়ে রিপোর্ট পেশ করবে রাজ্য। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় মামলার পরবর্তী শুনানির সম্ভাবনা।