ভাসানের সময় গঙ্গায় ডুবল বিশ্বকর্মার মূর্তি ও লরি, সাঁতরে প্রাণরক্ষা হাওড়ার ২০ শ্রমিকের
প্রতিদিন | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
অরিজিৎ গুপ্ত, হাওড়া: বিশ্বকর্মার মূর্তি ভাসান দিতে গিয়ে লরি-সহ তলিয়ে গেল গঙ্গায়। সাঁতরে জল থেকে উঠে অল্পের জন্য রক্ষা পেলেন ভাসান দিতে আসা লোকজন। বুধবার দুপুর ২টো নাগাদ ঘটনাটি ঘটেছে শিবপুর গঙ্গার ঘাটে। কয়েক ঘন্টার চেষ্টায় হাইড্রা দিয়ে লরিটিকে গঙ্গা থেকে তোলা হয়। গঙ্গায় বিশ্বকর্মা মূর্তি-সহ লরি পড়ে গিয়েছে এই খবর শুনে ঘটনাস্থলে ছুটে যায় শিবপুর থানার পুলিশ, বিপর্যয় মোকাবিলা দল ও হাওড়া পুরসভার কর্মীরা। হাওড়া সিটি পুলিশের এক পদস্থ আধিকারিক জানান, ঠাকুর-সহ লরিটি ব্রেক ফেল করে গঙ্গার ঘাটের স্লোপের কাছে এসে নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গঙ্গায় পড়ে যায়। পুলিশ খবর পেয়ে দ্রুত গিয়ে তা হাইড্রার সাহায্যে গঙ্গা থেকে তোলে। এই ঘটনায় কেউ হতাহত হননি।
কিন্তু বুধবার দুপুরে বিশ্বকর্মা ঠাকুর ভাসানের সময় ঠিক কী হয়েছিল? ওই লরিতে করে বিসর্জনের জন্য আসা লোকজন জানান, শিবপুরে গঙ্গার ঘাটের কাছে এসে রাস্তা থেকে ঘাটের স্লোপ দিয়ে লরিটি পিছন দিক করে গঙ্গার জলের কাছে যায়। যাতে সহজেই লরিতে থাকা দুটি বিশ্বকর্মার মূর্তিকে নামিয়ে গঙ্গায় ভাসান দেওয়া যায়। সেজন্য লরিটিকে গঙ্গার ঘাটে জলের একেবারে কাছে দাঁড় করানো হয়। এমনকী লরিটির পিছনের চাকায় মোটা কাঠও দেওয়া হয় যাতে লরিটি স্লোপ দিয়ে গরিয়ে না যায়। কিন্তু আচমকাই লরিটি ঘাটের স্লোপ দিয়ে গঙ্গার দিকে গরাতে শুরু করে। তার পর নিমেষের মধ্যে গঙ্গার জলে পড়ে যায়। লরিতে থাকা লোকজন সমেত লরিটি গঙ্গার জলে নেমে যায়। লরিটি গঙ্গায় ভেসে যাওয়ার আগেই লরির চালক-সহ লরিতে থাকা প্রায় ২০ জন লরি থেকে ঝাঁপ দেন। কোনওক্রমে তাঁরা সাঁতরে জল থেকে ওঠেন। আর এই ঘটনায় শিবপুর ঘাটে ব্যাপক আতঙ্ক তৈরি হয়। খবর যায় পুলিশে। পুলিশ এসে ডুবুরি নামায়। গঙ্গায় তল্লাশি চালানো হয়। তবে কেউ গঙ্গায় ডুবে যায়নি বলেই জানা গিয়েছে। প্রত্যেকেই জল থেকে উঠে পড়েন।
প্রসঙ্গত, এদিন ডোমজুড়ের জালান কমপ্লেক্সের একটি সংস্থা দুটি বিশ্বকর্মার প্রতিমা নিয়ে শিবপুরের ঘাটে ভাসান দিতে আসে। ওই সংস্থার এক কর্মচারী তন্ময় দাস বললেন, ‘‘আমরা ভেবেছিলাম স্লোপ দিয়ে লরিটিকে নামিয়ে গঙ্গার জলের কাছে নিয়ে যাই। তাহলে প্রায় ৬ থেকে ৭ ফুটের ভারি দুটি মূর্তি গঙ্গায় ভাসান দিতে সহজ হবে। কিন্তু এভাবে লরিটা গরিয়ে গঙ্গার জলে পড়ে যাবে বুঝতে পারিনি।’’
ওই লরির চালক অখিলেশ সিং বললেন, ‘‘চাকার পিছনে কাঠ দিয়ে দিয়েছিলাম যাতে পিছন দিকে গরিয়ে না যায়। কিন্তু দেখলাম আচমকাই গরিয়ে গঙ্গার দিকে যাচ্ছে। বুঝতে পেরেই আমি লাফ দিই।’’গঙ্গাঘাটে দেবু মাইতি নামে প্রত্যক্ষদর্শী এক দোকানদার বললেন, ‘‘হঠাৎ দেখি লরিটা ঠাকুর নিয়ে গঙ্গার জলে গরিয়ে পড়ে গেলো। তার পরই দেখি মোবাইল হাতে করে জল থেকে সবাই উঠছে। তবে কোনও মহিলা বা শিশুকে চোখে পরেনি। সকলেই যুবক ছিলো। অল্পের জন্য সকলে রক্ষা পেয়েছেন।’’