জঙ্গল-পাহাড়-শিল্পাঞ্চলে ‘ক্রাইসিস’ ম্যানেজার, ‘লাল সন্ত্রাস’ সামলানো সেই মনোজই কলকাতার নগরপাল, কে এই দুঁদে IPS?
প্রতিদিন | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদ প্রতিদিন ডিজিটাল ডেস্ক: ঘটনা এক, লালগড়ে তখন মাওবাদী জমানা। এরিয়া ডমিনেশনে বেরিয়ে অমানুষিক পরিশ্রমের উদাহরণ তৈরি করেছিলেন এক পুলিশ আধিকারিক। এক টিমের সঙ্গে লম্বা পথ মাওদখল মুক্ত করে ফিরে দ্বিতীয় দলের সঙ্গে ফের বেরিয়ে পড়েছিলেন। সেখানে সফল। একটানা ২২ দিন নাইট ডিউটি করেছেন মাও এলাকায়।
ঘটনা দুই, আন্দোলন উত্তাল পাহাড়ে বদলি হন ওই আধিকারিক। দার্জিলিংয়ে বিমল গুরুংয়ের বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে চোয়াল ভেঙেছিল তাঁর। তার পরেও এলাকা ছাড়েননি তিনি। ভাঙা চোয়াল নিয়ে লড়ে গিয়েছিলেন। প্রমাণ করেছিলেন শুধু পরিশ্রম করার ক্ষমতা নয়, তাঁর মনের জোরও মারাত্মক।
ঘটনা তিন, সময়টা ২০১৭-২০১৮। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলজুড়ে অশান্তি। বোমা মারা, গুলি চালানো নিত্য নৈমিত্তিক ঘটনা। এলাকাজুড়ে দাপট দেখাচ্ছেন অর্জুন সিং। বারাকপুর শিল্পাঞ্চলের কমিশনার হয়ে যান সেই আধিকারিকই। বুদ্ধিমত্তার জোরে কড়া হাতে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে এনেছিলেন সেই আধিকারিক-ই। তৎকালীন ‘বারাকপুরের ত্রাস’ অর্জুন সিং-ও তৃণমূলে ফিরে যান।
পরিশ্রম, বুদ্ধিমত্তা এবং মনের জোরেই বার বার রাজ্যের শাসকদলের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’ হয়ে উঠেছেন মনোজ ভার্মা। করেছেন মুশকিল আসান। আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ঘটনায় কলকাতা পুলিশের দিকে বার বার অভিযোগের আঙুল উঠছে। অপরাধস্থল রদবদল, রীতিমতো তথ্যপ্রমাণ লোপাটের অভিযোগ উঠছে পুলিশকর্তাদের বিরুদ্ধে। আন্দোলনকারীদের দাবি মেনে কলকাতার নগরপাল বিনীত গোয়েল, ডিসি(নর্থ) অভিষেক গুপ্তাকে সরিয়ে দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এমন আন্দোলন, বিক্ষোভের মাঝেই কলকাতা পুলিশের সর্বোচ্চ পদে বসছেন মনোজ ভার্মা। মুখ্যমন্ত্রী ‘আস্থাভাজন’ নয়া নগরপালের সামনে চ্যালেঞ্জ প্রচুর।
কী কী চ্যালেঞ্জ?
মাও মুক্তাঞ্চলে জমি পুনরুদ্ধার করেছেন মনোজ। তবে জঙ্গলের রীতিনীতি আর শহুরে আদবকায়দায় ফারাক আকাশ পাতাল। সম্মুখ সমরে শত্রুর মহড়া নেওয়া এক জিনিস আর শহুরে ‘সিভিলিয়ান’দের বলপ্রয়োগে বাগে আনা আরেক জিনিস। উপদ্রুত এলাকায় ‘অপারেশনে’র নির্দিষ্ট পন্থা থাকে। কিন্তু কলকাতার মতো শহরে আইনশৃঙ্খলা বজায় রাখতে ‘ব্যাটনে’র চাইতে ‘ব্রেন’ই বেশি কার্যকরী। কারণ, এখানে নাগরিক সমাজ অনেক বেশি সক্রিয়। ‘উপদ্রুত’ এলাকায় শত্রুকে সরাসরি চেনা যায়। টার্গেটকে বেছে নেওয়াটাও তুলনামূলক সহজ। কিন্তু শহর কলকাতায় ‘শত্রু’কে টার্গেট করা সহজ নয়। থাকে কূটনৈতিক চাপ। অন্তর্ঘাতের আশঙ্কাও কম নয়। উপরন্তু আর জি কর আবহ, জুনিয়র ডাক্তারদের পাশে দাঁড়িয়ে নাগরিক সমাজের বিক্ষোভ-আন্দোলনের জেরে পুলিশের উপর থেকে আস্থা কমেছে আমজনতার। উলটে বেড়েছে ক্ষোভ।
শুধু তাই নয়, টালা থানার ওসির গ্রেপ্তারির পর থেকে পুলিশ কর্মীরাও দ্বিধা-দ্বন্দ্বে ভুগছেন। তাঁদের মনোবলও তলানিতে ঠেকেছে। এমন পরিস্থিতিতে দায়িত্ব নিয়েছেন মনোজ। একদিকে আমজনতার আস্থা ফেরানো অন্যদিকে সমস্ত চাপ সামলে কর্মীদের মনোবল ফেরানোর দায়িত্ব তাঁর। সিবিআই তদন্তের আবহে কীভাবে কাজ করবে কলকাতা পুলিশ, কোন পথে চলবেন তাঁরা, তা নিয়ে সুনির্দিষ্ট রুটম্যাপও তৈরি করে দিতে হবে মনোজ ভার্মাকে। লালবাজারের দায়িত্ব নিয়ে কীভাবে সেই চাপ তিনি সামলান, সেটাই এখন দেখার। আরও একবার রাজ্য সরকারের ‘ক্রাইসিস ম্যানেজার’, মুশকিল আসান হয়ে উঠতে পারবেন কি মনোজ? উত্তর কালের গর্ভে।