কুনুরের জলে প্লাবিত গুসকরা, জলমগ্ন আউশগ্রামের বহু গ্রাম
বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, কাটোয়া: কুনুর উপচে প্লাবিত গুসকরা শহর। আউশগ্রামেরও একাধিক গ্রাম জলমগ্ন। গুসকরা শহরের ১, ২, ৪, ৫, ১২ নম্বর ওয়ার্ড সহ বেশকিছু ওয়ার্ড দু’ দিন ধরে জলমগ্ন। বাসিন্দারা জলবন্দি। বহু বাড়ি জলমগ্ন। যোগাযোগ কার্যত বিছিন্ন। খাদ্য সংকটে ভুগছে বহু পরিবার। কেউ আশ্রয় নিয়েছেন মুড়ি মিলে, কেউ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে। পুরসভা থেকে বন্যাদুর্গতদের খিচুড়ি খাওয়ানো হচ্ছে।
তবে অনেক জায়গায় বন্যাকবলিত মানুষদের অভিযোগ, পুরসভা থেকে তাঁদের কাছে পানীয় জল, খাদ্য ও ত্রাণসামগ্রী পৌঁছয়নি। এনিয়ে ক্ষোভ রয়েছে অনেকের। বেশ কিছু এলাকায় খাবার বিলি করছে গুসকরা পুরসভা। হাসপাতাল থেকে সদ্য ছাড়া পাওয়া এক প্রসূতি মাকে নিরাপদ জায়গায় আনা হয়। প্রসূতি মা সহ তাঁর পরিবারকে নিরাপদ আশ্রয়ে রেখে তাদের খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা করেছে পুরসভা। ২ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা অজয় মজুমদার বলেন, পুজোর মুখে পর পর দু’ বার আমাদের বাড়ি কুনুরের জলে ডুবে গেল। যোগাযোগ করতে পারছি না কারও সঙ্গে। ঘরে যেটুকু খাবার মজুত রয়েছে, তা দিয়ে ছাদে কোনও রকমে চলছে। এরপর জল বাড়লে আমাদের না খেয়ে মরতে হবে। মিঠু বাউরি বলেন, আমরা সবাই মুড়ি মিলে আশ্রয় নিয়েছি। চিঁড়েগুড় পুরসভা থেকে দেওয়া হয়েছে। পুজোর মুখে এভাবে ক্ষতি হয়ে গেল, ছেলেমেয়েদের নতুন জামাকাপড় কিনে দিতে পারব না। গুসকরা শহরের মাঝখান দিয়ে বয়ে চলেছে কুনুর নদী। আর শহরের ভৌগলিক অবস্থান অনেকটা কড়াইয়ের মতো। শহরে এক-দু’ ঘণ্টার বৃষ্টিতেই বিভিন্ন ওয়ার্ডে জল জমে যায়। প্রতিবছর বর্ষায় এই জল জমার যন্ত্রণা নিয়েই বাস করতে হয় শহরবাসীকে। শহরের ১৬টি ওয়ার্ডের মধ্যে বেশির ভাগ ওয়ার্ডেই এই সমস্যা দেখা দেয়। পুরসভার চেয়ারম্যান কুশল মুখোপাধ্যায় বলেন, এটা আমাদের কাছে অভিশাপ হয়ে দাঁড়াল। পর পর দু’ বার প্লাবিত হল শহরের বেশির ভাগ ওয়ার্ড। আমরা খিচুড়ি রান্না করে যতটা পেরেছি ঘুরে ঘুরে বিলি করেছি। অনেক ক্ষতি হয়ে গেল আমাদের।
এদিকে আউশগ্রামের সুয়ারা গ্রাম জলবন্দি হয়ে রয়েছে। রোগীদের স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যেতে খিচুড়ি রান্নার বড় গামলাই ভরসা স্থানীয় বাসিন্দাদের। মঙ্গলবার সেখানে হঠাৎই অসুস্থ হয়ে পড়েন এক বৃদ্ধা। তিনি পড়ে গিয়ে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করেন। এরপরেই প্রতিবেশীরা তাঁকে বড় গামলায় চাপিয়ে একবুক জল ঠেলে প্রায় এক কিমি রাস্তা পেরিয়ে পিচকুড়িতে এসে ওঠেন। সেখান থেকে তাঁকে গাড়িতে চাপিয়ে চিকিৎসার জন্য গুসকরা প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া হয়। সুয়ারা গ্রামের অধিকাংশ বাড়ির ভিতরে জল ঢুকেছে। সেজন্য বেশিরভাগ বাসিন্দাই বাড়ির ছাদে আশ্রয় নিয়েছেন। আউশগ্রাম-১ বিডিও শেখ কামরুল ইসলাম বলেন, সামগ্রিক পরিস্থিতির উপর আমাদের নজর রয়েছে। ধীরে ধীরে জল কমছে। ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ খতিয়ে দেখে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।-নিজস্ব চিত্র