নবদ্বীপ ও ইদ্রাকপুর যাওয়ার রাস্তায় জমে জল, দুর্গতদের নৌকার দাবি
বর্তমান | ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪
সংবাদদাতা, নবদ্বীপ: নবদ্বীপে ভাগীরথীর জল বিপদসীমার প্রায় ৩৫ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে বইছে। এর ফলে নবদ্বীপ শহর ও ইদ্রাকপুর যাওয়ার সংযোগকারী একমাত্র বাঁধের রাস্তায় জল উঠে পড়েছে। চরম সমস্যায় পড়েছেন স্কুল কলেজের পড়ুয়া, ব্যবসায়ী থেকে নবদ্বীপ হাসপাতালে আসা রোগীরা। কৃষিপ্রধান ইদ্রাকপুর গ্রামে প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। তাঁদের দাবি, অবিলম্বে গ্রামবাসীদের যাতায়াতের জন্য নৌকার ব্যবস্থা করতে হবে। জানা গিয়েছে, পঞ্চায়েত এবং নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে নৌকা চালানোর ব্যবস্থা করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে ।
উল্লেখ্য, নবদ্বীপ শহরের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো এতদিন বেঁচে ছিল ইদ্রাকপুর। এবার পাকা রাস্তার মাধ্যমে সংযুক্ত হওয়ার জন্য এই বাঁধ রোডের কাজ শুরু হয়েছে। সেকারণে ছাড়িগঙ্গার জলস্রোত বজায় রেখে তৈরি হয়েছে একটি চল্লিশ মিটারের ব্রিজ। পাশাপাশি দু’দিকে ৩০ মিটার করে তৈরি হবে অ্যাপ্রোচ রোড। এখনও সেই কাজ চলছে। তবে দু’দিকের অ্যাপ্রোচ রোড এখনও পাকা হয়নি।
চার-পাঁচদিনের অতি বর্ষণে আগেই ছাড়িগঙ্গায় জল বেড়ে গিয়েছিল। তারমধ্যে কয়েকদিন যাবৎ ভাগীরথীর জল বেড়ে গিয়েছে। ফলে সেই বাঁধের মাটির রাস্তার অধিকাংশ জায়গা কোথাও এক হাঁটুর উপরে জল হয়ে গিয়েছে। এমনকী এই বাঁধের মাটির রাস্তার বেশ কিছু অংশ পাশ থেকে জলের চাপে ভেঙে যাচ্ছে।
বুধবার সকালে গিয়ে দেখা গেল, ওই বাঁধের রাস্তা দিয়ে বিপদ মাথায় নিয়ে সাইকেল বা পায়ে হেঁটে যাতায়াত করছেন গ্রামের পড়ুয়া থেকে সাধারণ মানুষ সকলেই।
মায়াপুর-বামুনপুকুর ২ নম্বর পঞ্চায়েতের অধীনে থাকা চারিদিকে নদীবেষ্টিত গ্রাম ইদ্রাকপুর। প্রায় ১০ হাজার মানুষের বসবাস। গ্রামের অধিকাংশ মানুষ কৃষিজীবী। একটা সময় গ্রামবাসীদের যাতায়াতের একমাত্র ভরসা ছিল নৌকা। প্রায় ১০ বছর আগে গ্রামবাসীরা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে ছাড়িগঙ্গায় মাটি, ঘেঁষ ফেলে যাতায়াতের জন্য তৈরি করেছিলেন পাঁচশো মিটার বাঁধের মাটির রাস্তা। এই রাস্তার দু’দিকেই রয়েছে ছাড়িগঙ্গা। রাস্তাটির মাঝামাঝি স্থানে সেচদপ্তর ১০০ মিটার কাজ শুরু করেছে। এর মধ্যে ৪০ মিটার ব্রিজ আর দু’দিকে ৩০ মিটার করে তৈরি হবে অ্যাপ্রোচ রোড। এতদিন এই গ্রামে পৌঁছনোর জন্য একটিই মাত্র মূল রাস্তা এটি। প্রায় পাঁচশো মিটার লম্বা এই কাঁচা রাস্তাটি বৃষ্টির সময় জলকাদার মধ্য দিয়ে যাতায়াত করতে হচ্ছিল গ্রামবাসীদের।
ইদ্রাকপুরের বাসিন্দা দশম শ্রেণির ছাত্রী স্বপ্না ঘোষ, শুভমিতা ঘোষ, প্রিয়া ঘোষ, পম্পা ঘোষরা জানায়, আমাদের গ্রাম থেকে নবদ্বীপে স্কুল এবং টিউশন পড়তে যাওয়ার এই একটি মাত্র রাস্তা। কিন্তু মঙ্গলবার থেকেই রাস্তায় জল হয়ে গেছে। বেশি জল হয়ে গেলে আর যাতায়াত করা যাবে না। যদি নৌকার ব্যবস্থা করা হয়, তবে যাতায়াত করতে পারব।
ইদ্রাকপুর গ্রামের বাসিন্দা পলাশ ঘোষ বলেন, বাবার ৬৮ বছর বয়স। খুবই শরীর খারাপ। চিকিৎসার জন্য সাইকেলে বসিয়ে জলের মধ্য দিয়ে নিয়ে গিয়েছিলাম নবদ্বীপ স্টেট জেনারেল হাসপাতালে।
এই গ্রামেরই বাসিন্দা নবদ্বীপ পঞ্চায়েত সমিতির সহ সভাপতি তাপস ঘোষ বলেন, দু’দিনে গঙ্গার জল ভীষণ বেড়ে গিয়েছে। ওই একটিমাত্র রাস্তার এখন অধিকাংশটাই জলের তলায়। পঞ্চায়েত সমিতির পক্ষ থেকে জরুরি ভিত্তিতে নৌকার ব্যবস্থা করার চেষ্টা চলছে। এমনকী পঞ্চায়েতকেও বলা হয়েছে নৌকার ব্যবস্থা করতে। শুধু তো নৌকা হলে হবে না, তার জন্য মাঝিও চাই। সেই চেষ্টাই করা হচ্ছে।